সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

উপন্যাস-৩

কৃপাসিন্ধু-৩ নবিজির বয়স ছয়। শিশুকালের সমাপ্তিলগ্ন। মায়ের ছেলে এবার মায়ের কোলে ফিরবে। হালিমার ভাগ্যে ফের পরিবর্তনের আবাস। কেঁদে কেঁদে দিন যায়, রাত কাটে ভাবনায়। পেটে ধরেনি তাতে কী, বুকে তো ধরেছে। পিঠে চড়িয়েছে। হাতে তোলে খাইয়েছে। নজরে নজরে রেখেছে। সোহাগে ভরিয়েছে। নিজের ছেলে কি পরের ছেলে—তফাৎ করে দেখেনি। তবু উপায় নেই। নদীর স্রোত আপন গতিতেই চলে। কিছু সময় আঁটকানো গেলেও ধরে রাখা যায় না। জীবন একটা বহতা নদী। তাকে কে আঁটকায়? যাঁর গন্তব্য সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে, তাঁকে আঁটকানোও সম্ভব না। দুধভাই আবদুল্লাহ, দুধবোন আনিসা-হাফিজা কেঁদে কেঁদে হয়রান। তাদের ভাইকে তারা কিছুতেই যেতে দেবে না। মক্কার পথে হালিমা। বুকের ধনকে গর্ভধারিণীর কাছে সমর্পণ করতে যাচ্ছে। পা চলে না, ভারী ভারী ঠেকে; তবু জোর করে চালায়। চোখের জল চলার পথে নদী বয়ে দেয়। এদিকে আমেনা পথ চেয়ে বসে আছে কবে থেকেই। হাজার রাজার ধন ফিরবে বলে কথা। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে  চিত্ত ব্যাকুল। এক দুই করে প্রহর গুনছে। চাতক যেরূপ বৃষ্টির জন্য গুনে। মানুষ যেরূপ ২৯ রমজান সন্ধ্যার আকাশে ঈদের চাঁদ খোঁজে ফেরে, সেরূপ সন্ধানী-চোখে সিরিয়ার পথে তাকিয়ে তিনি। কি...

উপন্যাস-২

শিশুনবি আমেনা মায়ের কোলে। হাত-পা নেড়ে নেড়ে খেলছে। পাড়াপড়শি একে একে আসতে লাগলো। আমেনার কোলে নাকি চাঁদ এসেছে। তার উপর আবদুল মোত্তালিবের নাতি বলে কথা। পুরো কুরাইশ গোত্রে তার মতো প্রভাবশালী আর কে আছে? অপরদিকে বাবা আবদুল্লাহ ইনতেকাল করেছে মাত্র ক’মাস হলো। বেচারা ছেলের মুখটাও দেখতে পায়নি। সে থাকলে নির্ঘাত সারা মক্কায় ঘোড়ায় করে ছেলে হওয়ার খবর ছড়াতে থাকতো। সবমিলিয়ে শিশুনবিকে একনজর দেখার জন্যে আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আবদুল্লাহর বাড়িতে ভিড় জমাতে লাগলো। দাদা আবদুল মোত্তালিব দুধ-মাতা খোঁজে ক্লান্ত। আরবে দুধ-মাতার প্রচলন ছিল৷ শহুরে সন্তানদের পাঠানো হতো গ্রামাঞ্চলে। সেখানকার মহিলারা নবজাতকদের দুধপান করাতেন। বিনিময়ে পেতেন অর্থকড়ি। তা দিয়ে চলতো সংসার। পারস্যে দুর্ভিক্ষ চলছিলো। নবজাতকের সন্ধানে একদল মহিলা মক্কায় এলো। সবার ভাগ্যে নবজাতক জুটলেও একজনের জুটেনি। তিনি সা’দ গোত্রের হালিমাতুস সাদিয়া। তাঁর জন্য পড়ে আছে এক এতিম শিশু; যাঁকে নিতে অন্যান্যদেন মতো ইতোমধ্যে সেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অবস্থা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষ্যাপা সন্যাসী’র মতো। ক্ষ্যাপা হাতে শিকল নিয়ে পরশপাথর খোঁজে বেড়াতো। খুঁজতে...

উপন্যাস-১

গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর। গাছের ছায়ায় বসেছিল বালক। সামনে বিস্তৃত প্রান্তর। পাথুরে জমি। মাঝে মাঝে বৃক্ষের ঘনঘটা। উন্মুক্ত আকাশে দুয়েকখণ্ড শুভ্র মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতির সাথে বালকের আলাপ বেশ জমে ওঠেছে। আরবের গাছ। খুব একটা ডালপালায় পরিপূর্ণ না। তবু যতটা সম্ভব শাখা-প্রশাখা প্রসারিত করে বালককে অভিবাদন জানাতে ব্যস্ত। সূর্যটা বেশ চটে আছে। রোদের তীব্রতা প্রখর। শুষ্ক আবহাওয়া। গাছের ছায়া যথেষ্ট নয়। কোথা থেকে একখণ্ড মেঘ উড়ে এসে গাছের উপর জুড়ে বসল। দূর থেকে বহিরা নীরবে অবলোকন করছে। শাখা-প্রশাখাগুলি ঝুকে ঝুকে পড়ছিলো। সম্মানে নতশির। যেন আপনাআপনি ভেঙ্গে আসনে হতে চায়। পাতাগুলি দিয়ে আরামকেদারা বানিয়ে সেখানে বালককে বসিয়ে মহানন্দে মেতে ওঠবে। বহিরার ধৈর্যের বাঁধ আর টেকে না। লোক পাঠায়। বালককে গীর্জায় আনে। সেঁ এসেছে সুদূর মক্কা থেকে। গন্তব্য সিরিয়া। যেখানটাই বিশ্রাম নিচ্ছিলো সেটা বুসরা। পাশের গীর্জাটার তত্ত্বাবধায়ক বৃদ্ধ বহিরা। সে নিরেট খ্রিষ্টান। আপন ধর্মে বেশ পাণ্ডিত্য আছে। খ্রিষ্ট্রীয় রীতিতে তাঁর পরিচয় ‘পাদ্রী’ বা ‘ধর্মযাজক’। ইতোমধ্যে সে বালকের কাফেলাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। কাফেলার লোকজন বহিরার খাওয়া শ...