সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপন্যাস-১

গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর। গাছের ছায়ায় বসেছিল বালক। সামনে বিস্তৃত প্রান্তর। পাথুরে জমি। মাঝে মাঝে বৃক্ষের ঘনঘটা। উন্মুক্ত আকাশে দুয়েকখণ্ড শুভ্র মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতির সাথে বালকের আলাপ বেশ জমে ওঠেছে। আরবের গাছ। খুব একটা ডালপালায় পরিপূর্ণ না। তবু যতটা সম্ভব শাখা-প্রশাখা প্রসারিত করে বালককে অভিবাদন জানাতে ব্যস্ত। সূর্যটা বেশ চটে আছে। রোদের তীব্রতা প্রখর। শুষ্ক আবহাওয়া। গাছের ছায়া যথেষ্ট নয়। কোথা থেকে একখণ্ড মেঘ উড়ে এসে গাছের উপর জুড়ে বসল।

দূর থেকে বহিরা নীরবে অবলোকন করছে। শাখা-প্রশাখাগুলি ঝুকে ঝুকে পড়ছিলো। সম্মানে নতশির। যেন আপনাআপনি ভেঙ্গে আসনে হতে চায়। পাতাগুলি দিয়ে আরামকেদারা বানিয়ে সেখানে বালককে বসিয়ে মহানন্দে মেতে ওঠবে।

বহিরার ধৈর্যের বাঁধ আর টেকে না। লোক পাঠায়। বালককে গীর্জায় আনে। সেঁ এসেছে সুদূর মক্কা থেকে। গন্তব্য সিরিয়া। যেখানটাই বিশ্রাম নিচ্ছিলো সেটা বুসরা। পাশের গীর্জাটার তত্ত্বাবধায়ক বৃদ্ধ বহিরা। সে নিরেট খ্রিষ্টান। আপন ধর্মে বেশ পাণ্ডিত্য আছে। খ্রিষ্ট্রীয় রীতিতে তাঁর পরিচয় ‘পাদ্রী’ বা ‘ধর্মযাজক’। ইতোমধ্যে সে বালকের কাফেলাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। কাফেলার লোকজন বহিরার খাওয়া শুরু করেছে। বালক যেন ভিআইপি গেস্ট! তাঁকে বসানো হলো আলাদা জায়গায়। উপাদেয় পরিবেশিত৷ বালক খাচ্ছে। ছোট ছোট গ্রাসে। ধীরে-সুস্থে...

বহিরা অপলক নয়নে তাকিয়ে। বালকের চেহারায় বুঝি তারার মেলা! তা থেকে চাঁদের মতো স্নিগ্ধ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। চওড়া ললাট। ললাটের ঘর্মবিন্দু মুক্তো-সদৃশ। সূর্যের আলোকরশ্মিতে চিকচিক করে জ্বলছিলো। ভ্রুকুটি ধনুকের ন্যায়। চোখজোড়ায় স্বর্গীয় মায়ার সমাবেশ। দৃষ্টির সে কী প্রখরতা! চাহনির সে কী দৃঢ়তা! চোখে চোখ রাখা-ই দায়। খাওয়ার ফাঁকে দাঁতের আংশিক দেখা যাচ্ছে। তা থেকে সূর্যরশ্মি চমকিত হচ্ছে। কাঁধ পর্যন্ত শ্যামলবরণ চুল। ঈষৎ কোঁকড়ানো। হালকা বাতাসে সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় দোলছিলো।

চুলের সাথে সাথে বহিরাও উড়ে চলেছে। যেন তা পৃথিবীর বাইরে। অন্য লোকালয়ে। যেখানে স্বর্গীর দুতেরা আসর জমায়। নাতিশীতোষ্ণ সে রাজ্য কেবল বহিরা ও বালকের। মনে মনে বহিরার প্রার্থনা—এ আসর দীর্ঘ হোক। এ আসরে দুমুঠো খাবার বালকের মুখে তোলে দিতে পারা তার আজন্মের পরম সৌভাগ্য।

সহসা বালকের মাঝে সে অন্য এক মানুষকে দেখতে পায়৷ যার অপেক্ষা সে বহুকাল যাবৎ করে চলেছে৷ আমাবস্যার পর পৃথিবীবাসী যেরূপ চাঁদের প্রতীক্ষায় থাকে। সে প্রতিক্ষার প্রখর বুঝি শেষ হলো। কাঙ্ক্ষিত সে চাঁদ আজ তার দোরগোড়ায়। অতএব, তাঁকে মন ভরে দেখা চাই। তাঁর স্নিগ্ধ আবেশ যত পারে নেয়া চাই। এরূপ স্বর্গীয় আবেশ যে বহিরা তার জন্মে কখনো পায়নি...

কিন্তু আবেশে খেই হারালে আজ চলবে না। বালকের কাছে যে বহিরার বহুকিছু জানার আছে। ধীরে ধীরে কাছে যায়। আলতো করে পিঠে হাত বোলায়। উৎসুক নয়নে প্রশ্ন করে যায়—আপনার বাড়ি কোথায়, কী করেন, খান কী, ঘুমান কখন, অবসর কীভাবে কাটে... প্রশ্নের আর শেষ নেই। বালকও মোলায়েম বচনে উত্তর দিতে থাকে। উত্তর শোনে বহিরা চমকায়, কেঁপে কেঁপে উঠে, অবাক হতে থাকে।

প্রশ্নে শেষ নয়, আরও পরখ করা চাই। আস্তে আস্তে শরীরের কাপড় উল্টায়। আহা! শরীরে কী সুঘ্রাণ! কস্তুরির চেয়েও অধিক। পিঠের উপরিভাগে দুকাঁধের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় বহিরার চোখ আঁটকে যায়। কিছুটা উঁচু বৃত্তাকার এক মাংসপিণ্ড। তাতে লিখা محمد رسول الله।

বহিরার প্রশ্ন এবার আবু তালিবের প্রতি। আপনি তাঁর কী হন?
—বাবা।
—মিথ্যে বলছেন।
—না মানে চাচা হই।
—তাঁর বাবার কী হয়েছিল?
—তাঁর জন্মের আগেই ইনতিকাল করেছেন।
—হ্যাঁ হ্যাঁ, এমনটাই তো হবার কথা। এমনটাই তো লেখা ছিল।
—কিন্তু কেন? কোথায় কী লেখা আছে?
—সে প্রশ্ন ঐ সমস্ত গাছকে করুন, যে-সব গাছ তাঁর চলার পথে তাঁর প্রতি অবনত হচ্ছিলো। আকাশের ঐ মেঘখণ্ডকে জিজ্ঞেস করুন, যেটি তাঁকে অনবরত ছায়া দিয়ে যাচ্ছিলো। ঐ সমস্ত পাথরখণ্ডকে করুন, যেগুলো তাঁকে অনবরত সালাম দিচ্ছিল। আমার সৃষ্টিকর্তার শপথ! এ কোনো সাধারণ বালক নয়। আমি নিশ্চিত, এই-ই সেই বালক, যাঁর ভবিষ্যতবাণী আমার ধর্মগ্রন্থে করা হয়েছিল। বহিরার কথা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হতে থাকে।

ইতিহাস আমাদের জানায়—পৃথিবীতে বালকের আগমন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। চন্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ। সোমবার দিন ও রাতের মধ্যভাগে। আঁধার যখন ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করে। প্রকৃতি যখন তাঁর রূপ প্রকাশে নববধুর ন্যায় ঘোমটা খুলতে থাকে। পাখিরা যখন জেগে ওঠে গান ধরে। ফুলকলিরা যখন প্রস্ফুটিত হতে প্রস্তুতি নেয়। আঁধার বিদারি সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত। আরবিতে এই সময়ের নাম ‘সুবহে সাদিক’।

তবে ইতিহাস এখানেই শেষ না। আরও ঢের বাকি। মানব সৃষ্টির সূচনাতে যাওয়া যাক। পৃথিবীতে প্রেরিত প্রথম মানব ও প্রথম নবি আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা। আল্লাহ তাঁকে পরম যত্নে সর্বোত্তম আকৃতি দিয়ে বানালেন। রুহ দেওয়ার সময় হলো। রুহকে পাঠানো হলো আদমের শরীরে। কিন্তু এ কী! রুহ ঘুরেফিরে খোদার দরবারে। কী ব্যাপার? ফিরে আসা কেন? রুহ উত্তর করে—এ দেহ বড়ো অন্ধকার। আমার দ্বারা তাতে বসবাস সম্ভব না। অতঃপর একখণ্ড নুর আদমের ললাটে স্থাপিত হলো। লাইট পেয়ে মাটির পিঞ্জিরা আলোকিত। রুহ এবার ঠাঁই নিলো ঠিকঠাক। সে নুরের দীপ্তি কিছুটা প্রকাশিত, বাকিটা লুকানো। হুয়াল আওয়ালু ওয়াল আ’খিরু ওয়াজ জা’হিরু ওয়াল বাতিন—তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশ্য ও লুকায়িত।*
কিন্তু সে নুরের পরিচয় কী? যাঁকে পেয়ে আদম আলাইহিস সালাম আলোকিত হলেন। হাদিসের ভাষ্যে সে নুর আল্লাহর আদি সৃষ্টি। যখন আসমান-জমিন, মাটি-পানি, হাওয়া-আগুন সৃষ্টি হয়নি। সোজা কথায় যখন এক খোদা ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। ঐশী-কুরআন আর হাদিসে সে নুরের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে ক্রমান্বয়ে। সৃষ্টিকর্তা পরম মমতায় তাঁর নাম রেখেছেন ‘মুহাম্মদ’—‘চির প্রশংসিত’—যাঁর প্রশংসা সর্বত্র, সর্বকালে চলমান। সৃষ্টির পরপরই আল্লাহর প্রশংসা করে সিজদায় পড়েন বিধায় তাঁর নাম হয় আহমদ—সর্বাধিক প্রশংসাকারী। পড়ি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এটি দরুদ। তাঁর নাম নিলে দরুদ পড়তে হয়। এটিই বিধির বিধান।

আদমের ললাটে করে পৃথিবীতে সে নুরের আগমন আদমের সাথেসাথেই। ক্রমান্বয়ে নবিদের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হতে হতে বাবা আবদুল্লাহর কপালে৷ সেখান থেকে মা আমেনার গর্ভে। অতপর ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল। জান্নাত থেকে মা হাওয়া, আছিয়া, মারইয়াম ও হাজেরা আমেনার খেদমতে এলেন। আমেনা দেখেন—তাঁর ঘর থেকে এক অদ্ভুত আলোকরশ্মি পৃথিবীময় ছেঁয়ে গেল। সে আলোয় খালিচোখে রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদ দেখা যায়। দেখা যায় কাবা শরিফ তাঁর ঘরের দিকে ঝুঁকে আছে। তিনটি পতাকা উড়ছে। পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম এবং কাবার ছাদ বরাবর। এদিকে শয়তান অনবরত কাঁদছে। পারস্যের মন্দিরে হাজার বছর ধরে জ্বলতে থাকা আগুন হঠাৎ-ই নিভে যায়। রাজপ্রাসাদের দেয়ালে ফাটল ধরে ধ্বসে যায় চৌদ্দটি গম্বুজ।

হ্যাঁ, আমেনার রেহেম ছেড়ে শিশুনবি ধরার বুকে। মানুষরূপে।
নিখিল-বিশ্ব ওরে আয় ছোটে আয়
আমেনার কোলে দেখ্ নুর চমকায়।
চওড়া ললাট-মাঝে স্রষ্টার বাণী।
দুচোখ-গভীরে তাঁর মুক্তোর খনি
চিবুক অতলে তাঁর মনোহরি বাঁশি
দুঠোঁট ঠিকরে বেরোয় স্বর্গের হাসি
শিরোপরি দেখনারে নুরিকেশ ওড়ে
যেন ভ্রমরের গুঞ্জন গোলাপের ’পরে।
দেখ্ দেখ্—হাসে সেঁ! দেখ্ ঐ হাসি
দাঁতের ফাঁকে যেন রূপরাজ—শশী!
ও সে হাত নাড়ে, সাথে নাড়ে পা
সৃষ্টিজগত দোলে ধিন ধিন তা!
ওরে দেখে যা, আয় তোরা শোনে যা
কে সেঁ? কোন সে রাজন এলো...
জগত-সূর্য; না-না পূর্ণশশী যে
তারকারাজির ভিড়ে উজ্জ্বল সেঁ!
হেরি তাঁর নুরি রূপ এই ধরাপর–
মরে ওরে লাজে মরে চাঁদ-দিবাকর।
রূপরাশির আধার সেঁ—রূপোত্তম
গুণবিকিরণী গুণরাজ ঐ—গুণোত্তম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...