সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

‘মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাৎপর্য ও ফযিলত

  1. বিষয়ঃ ‘মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামের তাৎপর্য ও ফযিলত (প্রথম পর্ব)।
---মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

★প্রারম্ভিকাঃ
‘‘উরজ্ য়্যামেন্ নজ্দ হেজাজ্ তাহামা ইরাক শাম
মেসের ওমান্ তিহারান-স্বরি’ কাহার বিরাট নাম,
পড়ে-                      সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম।’’
‘‘গুঞ্জরি ওঠে বিশ্ব-মধুপ- ‘আসিল মোহাম্মদ’
অভিনব নাম শুনিল রে- ধরা সেদিন ‘মোহাম্মদ’
এতদিন পরে এল ধরার প্রশংসিত ও প্রেমাস্পদ।’’
                                   (কাজী নজরুল ইসলাম)
যাবতীয় গুণগান বিশ্বজগতের রহমান- আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি প্রশান্তসম গোণাহগার উম্মতের প্রতি এমন এক রাসূল (দ.) প্রেরণ করেছেন, যিনি একই সাথে অধিক প্রশংসিত এবং সর্বাধিক প্রশংসাকারী। অগুণিত দরুদ ও সালামের নজরানা সেই মহান সত্ত্বা- মুহাম্মদ (দ.) এঁর প্রতি, যাঁর নুরানী নাম মুবারক স্বয়ং রাব্বুল আলামিনই রেখেছেন, যাঁর প্রশংসা স্রষ্টা থেকে সৃষ্টি পর্যন্ত সর্বত্র বিরাজমান। (বাহারে শরীয়ত, অধ্যায়-১৬, ৩য় খন্ড, পৃষ্টা- ৬০১)
এমন এক বিষয়ে রচনা লিখতে মনস্থ করেছি, যে বিষয়টির মাধ্যমে একদিক দিয়ে সৃষ্টি জগতের সূচনা, অপর দিক দিয়ে এঁটির কারিশমার পুরোপুরি প্রকাশের মাধ্যমেই প্রতিফল দিবসের যবনিকা ঘটবে। মূলত এঁই নাম এবং নামটির মহান ধারক-বাহকের অতুল কারিশমাতেই সৃষ্টি জগতের যাবতীয় খেল আপন আপন অবস্থানে তাদের বাসস্থান গড়ে নিয়েছে। তাই উপরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এমন ক’টি পঙক্তি দিয়ে রচনার অবতারণা করেছি, যে লাইন ক’টিতে কবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ পূর্বক বুঝাতে চেয়েছেন যে, পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ‘মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) নামের স্মরণ চলমান। এবার আসা যাক মুল কথায়-

★‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামের তাৎপর্য ও ইতিহাসঃ  
                                          ‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামের তাৎপর্য ও ফযিলত নিয়ে আলোচনার পূর্বেই ‘মুহাম্মদ’ শব্দের বিশ্লেষণ করে নেয়া যাক-

★‘মুহাম্মদ’ শব্দের বায়োডাটাঃ 
                                            ‘মুহাম্মদ’ শব্দের মুল ধাতু হচ্ছে- ‘হা’ ‘মিম’ ‘দাল’ তথা ‘হামদুন’। যার অর্থ প্রশংসা, স্তুতি, সুুনাম, কৃতজ্ঞতা, প্রতিদান ইত্যাদি। আর মুহাম্মদ শব্দের অর্থ হলো- অতীব প্রশংসিত। হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (রহ.) ‘তফসিরে নঈমী’তে এভাবেই অর্থ করেছেন- চারিদিকে, সর্বদা, সকল ভাষায়, সকল যুগে প্রশংসিত। মোদ্দাকথা এটাই যে, হুজুর পুরনুর (দ.) যেমনি ভাবে সকল নবীদের সরদার, তেমনি ভাবে তাঁর নুরানী নাম মোবারকও সকল নামের ঊর্ধ্বে, তথা নামের সরদার। কবির মনের মাধুরিতে অতি চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে-
 ‘‘নুহ ও খলিল ও ঈসা ও মুসা, ছবকা হে আঁকা নামে মুহাম্মদ
 দৌলত জু চাহো দোনো জাঁহা কি, করলো ওয়াজীফা নামে মুহাম্মদ
পায়ে মুরাদে দোনো জাঁহা মে, জিসনে পুকারা নামে মুহাম্মদ’’। (কারবালায়ে বখশিশ, পৃষ্ঠা- ৭০)

★‘মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামের অন্তরালে অজানা ইতিহাসঃ
বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে মানব সমাজে এ কথা প্রসিদ্ধ যে, নবীজির নাম মোবারক ‘মুহাম্মদ’, তাঁর সম্মানিত দাদাজান আবদুল মোত্তালিব রেখেছিলেন। কথা সত্য এবং বিশুদ্ধ (সীরাতে হালভীয়া, প্রথম খন্ড)। এ প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম ‘মরুভাস্করে’ এভাবেই লিখেছেন, 
“কহিল মুত্তালিব বুকে চাপি’ নিখিলের সম্পদ-
‘নয়নাভিরাম! এ শিশুর নাম রাখিনু ‘মোহাম্মদ’।”

তবে এ মহান নাম মুবারক যে সর্বপ্রথম স্বয়ং রাব্বুল আলামিনই রেখেছেন, এ ইতিহাস ক’জনেই বা জানে? যাবতীয় ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক, ‘কুন’ শব্দের কারিশমাতে যিনি সমগ্র কায়েনাত সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান সত্ত্বা যখন আপন প্রভূত্ব প্রকাশ করবার ইচ্ছা করলেন, তখনই নিজের কুদরতি নুর মোবারক থেকে নুর নিয়ে আদেশ করলেন- ‘কু-নী হাবিবী মুহাম্মাদান’! খোদার খোদায়ী খেল্ বুঝা মুশকিল! ‘অতি প্রশংসিত’ সম্বোধন করে যাঁকে সৃষ্টি করলেন, তিনি আপন সত্ত্বাকে আপন রূপে প্রকাশ পাওয়া মাত্রই সিজদায় পড়ে যা উচ্চারণ করেছিলেন, তা- ‘আলহামদুলিল্লাহ্’-‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য’! আশেক-মাশোকের ব্যাপারটা ঠিক এমনই- প্রথম জন দু’লাইন প্রশংসা করলে, পরের জন খুব করে চায় যে, সে অন্তত চার লাইন করবে। তাইতো আল্লাহ তায়ালার ‘মুহাম্মদ’ সম্বোধনের পরিবর্তে নবীজি খোদার প্রশংসায় বেছে নিলেন ‘মুহাম্মদ’ শব্দের ‘মাদ্দাহ’কেই। কেননা ব্যাকরণের দৃষ্টিতে মুল ধাতুর ব্যাপকতার চেয়ে অধিক বিশ্লেষণ যোগ্য আর কিছুই নেই। তাই নবীজি খোদার প্রশংসায় খোদার দেয়া আপন নামের ধাতুকেই নির্বাচিত করলেন, যাতে করে ‘প্রশংসা’রও যিনি স্রষ্টা, তাঁর প্রশংসার যাতে কোন কমতি না হয়। সুবহানাল্লাহ্! (বাহারে শরীয়ত, অধ্যায়-১৬, ৩য় খন্ড, পৃষ্টা- ৬০১)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...