সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পবিত্র রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?

পবিত্র রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: ‘শাহরু রমাদ্বা-নাল্লাযী উনযিলা ফি-হিল কুরআন’। অর্থাৎ, ‘রমজান ওই মাস, যে মাসে আমি পবিত্র কুরআন নাযিল করেছি’। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী দ্বারা বুঝা যায়, রমজান কেন অন্য মাসের চেয়ে মহিমান্বিত, শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত আসমানীগ্রন্থের শ্রেষ্ঠগ্রন্থ ‘আল কুরআন’ যে পবিত্র মাসে নাযিল হয়েছে, নিঃসন্দেহে সে মাস অন্যমাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময়।

রমজানের নামকরণ
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ‘গুণীয়াতুত ত্বালেবীন’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ‘রমজ্বী’ শব্দের অর্থ বর্ষার বৃষ্টি। বৃষ্টি যেরূপ যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়, তদ্রুপ রমজান মাসও বান্দার যাবতীয় পাপ মুছে দিয়ে পবিত্র করে দেয়। যার দরুন এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’।

পবিত্র রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?
অসংখ্য কারণে পবিত্র মাহে রমজান অন্যান্য মাসসমূহের উপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তন্মধ্যে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-

(১) রমজান কুরআন নাযিলের মাস
নবীদের শ্রেষ্ঠনবী আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.), আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারিম, আর শ্রেষ্ঠনবীর উপর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ যে মাসে নাযিল হয়েছে, সেটি মাহে রমজান। অতএব, শ্রেষ্ঠনবীর উপর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ নাযিলের মাস রমজানও অন্যান্য মাসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

(২) কেবল রমজান মাসের নামই কুরআনে স্পষ্টাকারে উল্লেখ রয়েছে
পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অন্য কোন মাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র রমজান মাসের নামই আল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। তাই এ মাস শ্রেষ্ঠ হওয়ার এটিও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

(৩) হাদীস পাকের ভাষ্যে রমজান আল্লাহর মাস
নবী করিম (দ.) ইরশাদ করেছেন: শা’বান আমার মাস, আর রমজান হলো আল্লাহর মাস’ (মা’সাবাতা বিস্সুন্নাহ)। রমজান মাসে রোজা পালন করলে আল্লাহ তায়ালা প্রতিদান ঘোষণা করেছেন এভাবে: ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটা ভিন্ন। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্যই নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। (সহীহ মুসলিম-১১৫১)।

হাদীসে কুদসীতেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে। নবীজির ইরশাদ: ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমারই জন্য রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো’। (সুনানে বায়হাকি)

(৪) রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের মাস
পবিত্র মাহে রমজান একাধারে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সুসংবাদ প্রদান করে। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন: ‘রমজান এমন মাস, যার প্রথমাংশে আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষিত হয়। যার ফলে মানুষের জন্য গুনাহের গভীর অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসার এবং ইবাদত করে পবিত্র হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই মোবারক মাসের মধ্যভাগে পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং শেষাংশে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক স্থায়ী আজাব থেকে রেহাই হয়’।

(৫) এ মাসে শয়তানকে বেড়ি পড়ানো হয়
রমজান মাস প্রবেশের সাথে আল্লাহর আদেশে শয়তানকে বন্দি করা হয় এবং পুরো মাস তাকে বন্দি রাখা হয়। মহানবী (দ.) ইরশাদ করেন: ‘রমজান মাসের প্রথম রজনীতে শয়তানদের মজবুতভাবে বেঁধে রাখা হয় এবং অবাধ্য জিনদেরও বন্দি করে রাখা হয়। দোযখের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো দরজা পুরো রমজান মাসে খোলা হয় না এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। সঙ্গে সঙ্গে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে সাওয়াব প্রত্যাশীরা! অগ্রসর হও, এটা সাওয়াবের মোক্ষম সময়। হে পাপিষ্ঠরা! পাপ থেকে হাত গুটিয়ে নাও এবং নিজেদের গুনাহ থেকে বিরত রাখো। কেননা, এই পবিত্র সময়টা তাওবা করার ও গুনাহমুক্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। এই পবিত্র মাস কেবল আল্লাহ তাআলার জন্য। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসের সম্মানার্থে অনেক পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর তা রমজানের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (বায়হাকি শু’আবুল ঈমান)

প্রশ্ন হয়ে থাকে যে, তবে মানুষ এ মাসে অপকর্ম, অশ্লীলতা করে কীভাবে? এর উত্তর হলো, যেহেতু বাকি এগার মাস শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়, সেহেতু এর প্রভাব মানুষের মাঝে অনেকদিন ধরে বিদ্যমান থেকে যায়। যার ফলে কিছু কিছু মানুষ এ মাসেও নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকে।

(৬) এ মাসের ইবাদাতের সওয়াব বহুগুণ
অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের ইবাদাতের সওয়াব অনেক বেশি। হাদীসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে নফল ইবাদাত করলো, সে যেন অন্যমাসের ফরজ ইবাদাত পালন করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ পালণ করলো, সে যেন অন্যমাসের ৭০টি ফরজ ইবাদাত করলো’। অর্থাৎ- অন্যমাসে একটি ফরজ ইবাদাতে যে সওয়াব, এ মাসে তা নফল দ্বারাই পাওয়া যায়। আর অন্যমাসের ৭০টি ফরজের সওয়াব এ মাসের একটি ফরজ দ্বারা অর্জন করা যায়। (বায়হাকি শুয়াবুল ঈমান)

রহমত, মাগফিরাত, নাযাত, রোযা, সাহরী, ইফতার, তারাবীহ, লাইলাতুল কদর সহ আরো বহু অনন্য বরকতময় বৈশিষ্টমণ্ডিত এ পবিত্র মাস সন্দেহাতীতভাবে অন্য সকল মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বৈচিত্রের এত রকমফের, ইবাদাতের এত মোহনা, সংযমের এমন দৃষ্টান্ত সচরাচর অন্যান্য মাসে দেখা যায় না।

তাই বলা চলে রমজান ইবাদতের বসন্ত, অতএব আমাদের উচিৎ হবে এ পবিত্র মাসে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল (দ.) এর সন্তুষ্টি আদায়ের লক্ষ্যে বেশি বেশি ইবাদাত-রিয়াজত করা। অনাহারিদের মুখে খাবার তুলে দেয়া, বস্ত্রহীনের শরীর আবৃত করা, সর্বোপরি অভাবী-দুঃখী লোকেদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। আল্লাহ পাক আমাদের সে তাওফিক দান করুন, আমিন!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...