সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধ্রুব

ধ্রুব
ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে।
আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চুমুকের সাথে সাথে মুখে যাচ্ছে বিরিয়ানি। এবার সে আবার চিক্কুর পাড়লো—চাঁদ তুমি বিরিয়ানি-ময়, চাঁদ তুমি বিরিয়ানি-ময়।
ধ্রুব’র পাগলামি বেড়ে চলেছে। তাকে এবার থামানো যাক।
—ঐ কী করিস?
—বিরিয়ানি খাচ্ছি। আআআহ!
—মানে কী, এ তো চা, বিরিয়ানি কই?
—আরে নাহ, এটা বিরিয়ানি।
—মাথা কি আছে, না গেছে?
—আছে আছে। শোন, ‘চা খাওয়া’ বিষয়টা উদ্ভট। চা খাওয়া যায় না, পান করতে হয়। তাই চা’কে বিরিয়ানি ভেবে খেতে থাকলাম। ব্যাপারটা জোস! অন্যরকম একটা ফ্লেভার পাচ্ছি।
—তা ঠিক আছে। এবার একটা কাজ কর।
—কী কাজ?
—ঐ যে গোবরগুলো আছে না?
—আছে তো।
—ঐগুলোকে চকলেট ভেবে খেতে থাক।
—আরে না, চকলেট আমার পছন্দ না। আমি বিরিয়ানি খাচ্ছি, তুই চকলেট খা।
—বুঝছি, তোকে হবে না। আচ্ছা একটা কথা বল তো দেখি।
—কী কথা?
—এই যে, সরকার ত্রাণ দিল...
—দিল তো।
—আরে, শেষ তো করতে দে।
—আচ্ছা বল বল। বিরিয়ানির নেশা চড়ে গেছে। তাই এডভান্স বকে চলেছি।
—সরকার তো ত্রাণ দিল। কিন্তু দেখেছিস, সে ত্রাণ না-পেয়ে অনেকে প্রাণে মরে মরে অবস্থা?
—তা দেখেছি। তাতে কী?
—আরে, ত্রাণ তো পর্যাপ্তই ছিল। কিন্তু চোরেরা মেরে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত আড়াইশোর উপরে ত্রাণচোর ধরা খেয়েছে? না-জানি আরো কতজন অধরা আছে।
—তা বটে। কিন্তু তাতে তো সমস্যা দেখছি না।
—সমস্যা নেই মানে?
—আরে, এ তো সামান্য কিছু চাল-ডাল মাত্র। বছরের-পর-বছর আসা বাজেটগুলোর আশি থেকে নব্বই শতাংশ যে তাদের পেটেই যায়—সে খবর কি আছে? তা-ছাড়া চোর বলছিস কেন? চুরি বলছিস কেন? বল, উপহার! আমি যেমন চা’কে বিরিয়ানি ভেবে খাচ্ছি, ওরাও তেমন ত্রাণসামগ্রীকে উপহার-সামগ্রী ভেবে রেখে দিয়েছে। চা আর বিরিয়ানির কালার যেমন এক, উপহার আর ত্রাণের কালারও এক। চা’কে বিরিয়ানি ভেবে খাবার টেস্ট আসলে তুই বুঝবি না। ত্রাণকে উপহার ভাবার মজাও বোঝার কথা না। যে খায় সে জানে। আমার কাছে চায়ের কাপটা চাঁদের মতো স্নিগ্ধ, রূপার মতো থালা। তাদের কাছে ত্রাণের বস্তাগুলো ডায়মন্ডের টুকরা। এবার বল, ডায়মন্ড পেলে তুই ছাড়বি? একটা একটা করে আসন চুরি করে, ধুত্তোর উপহার নিয়ে পুরো সরকার গঠিত, ফিরতি উপহার তো পাওয়ারই কথা, নাকি? ধরে নে, এসব উপহার। জনগণের জন্যেই তো দিয়েছে। ওরা কি জনগণের বাইরে? অতএব, চুরির কিছু নাই, চোর বলার কিছু নাই।
—বখওয়াস বন্ধ্ কর্। সাধারণ মানুষ না-খেতে পেয়ে মরবে। বিষয়টা যথেষ্ট ভাবাচ্ছে।
—মরুক, সমস্যা কী? মানুষ মরলেই ভালো। যে মানুষ পাঁচশো টাকায় ভোট বেচে দেয়, তাদের মরে যাওয়াই ভালো। লাঠির ভয়ে যে মানুষ ভোটচুরির প্রতিবাদ করে না, তাদের মৃত্যুই শ্রেয়। আমি বুঝি না, ভোটচুরি করে যারা ক্ষমতায় বসেছে, তাদের চালচুরিতে এত অবাক হচ্ছে কেন মানুষ?
—কিন্তু তাই বলে কি তাদের কোনো দোষ নেই?
—নেই। গাছে পরগাছা বসলে তাড়াতে হয়। ক্ষেতে আগাছা জন্মালে উপড়ে ফেলতে হয়। কিন্তু আমরা বহুবছর ধরে ইচ্ছে করেই গাছে পরগাছার চাষ করছি। ক্ষেতে আগাছা বাড়তে দিয়েছি। এখন আগাছায় ক্ষেত খাবে, পরগাছায় গাছের স্থান নেবে—এটাই স্বাভাবিক। এটাই এখন নিয়তি। অতএব, গলা ফাটিয়ে আর লাভ নেই। মানুষ আমগাছ লাগিয়ে কাঁঠাল আশা করে ক্যামনে? ক্ষমতায় বসিয়েছে চোরদের, চাচ্ছে ইনসাফ! আচ্ছা, চোর যে ধরা খেলো। টনে-টনে চাল যে জব্দ হলো, সে চালগুলো কই? সেগুলোর আপডেট খবর কী? জব্দ করার পর তো সেগুলো আবারও বিতরণ করা যেত। বিতরণ কি হয়েছে? নাকি সরকারি ভাণ্ডে সুরক্ষিত আছে? তো, চোরদের ধরে আর লাভ কী? যাদের ধরেছে, তাদের খবর বল। তাদের শাস্তি হয়েছে?
—করোনার করুণকালে শাস্তি?
—হোয়াট অ্যা জোক! মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেল, আর এদের শাস্তি সম্ভব না?
—আরে, মাজেদের রায় তো আগেই হয়েছে। এদের তো এখনো বিচার বাকি। তারপর রায় আসবে, তারপর শাস্তি।
—তারপর কিছু ঘুষ, তারপর কিছু শো-ডাউন, অতঃপর আবার চুরি...
—মানে?
—মানে কিছুই না। এটাই চলমান ধারা। মাঠে মানুষ পাইলে পুলিশ-সেনাবাহিনী ইচ্ছেমতো লাঠামো করছে; অথচ গরীব-দুঃখির প্রাণ বাঁচাবার ত্রাণ যারা মেরে দিচ্ছে, তাদের মারা যাচ্ছে না! ব্যাপারটা জোস না?
পাগলা ধ্রুব আবুল-তাবুল বকতে বকতে কোথায় যেন ছুটলো। ওর যাওয়ার পথে উদাসভরা নয়নে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলাম—ব্যাপারটা আসলেই জোস!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...