সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রমজানের রাতগুলো নির্ঘুম কেটেছে। এমনটা না যে, রাতজেগে ইবাদত বন্দেগিতে সময় গেছে। ইবাদত বলতে আসলে তেমন কিছুই হয় নি। তবুও সাহরি না খেয়ে ঘুম হয় নি কোনদিন। এই একমাসে একধরনের একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছে। মানুষ অভ্যাসের দাস! যার দরুন গতকাল চোখে ঘুম আসতে আসতে বেজে গেছিলো প্রায় ৩টা। ঘুম যখন ভাঙ্গে তখন বড়ো ধরনের শকড খেয়ে উঠি। চারিদিকের আবছা আলো বেড়ার ফাঁক অতিক্রম করে ঢুকে পড়েছে ঘরে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে পড়ি চৌপায়ায়। হায় হায়! সকাল তো হয়ে গেলো, সাহরী যে খাওয়ায় হলো না! জিভ বাবাজি ততক্ষণে দাঁতমামাজিদের তলে। না, বিভ্রাট বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। পরক্ষণেই মনে পড়লো আজ তো শাওয়ালের প্রথম তারিখ। গতকালই চাঁদ উঠলো মাত্র। তার মানে আজ ঈদ! রোজা নেই। 


নামাজ সেরে কিছুক্ষণ ফেবুর নীলদুনিয়ায় ঘুরাঘুরি। কিচেন থেকে মায়ের ডাক পড়লো- ‘সৈয়দুল হক, চা খেতে আয়!’ গ্রামের গরীব-মধ্যবিত্তের কিচেনগুলো ড্রয়িংরুম হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।  গেলাম, বসলাম। সামনে চা প্রস্তুত। স্বভাবত, আমি ‘সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস’ টাইপের চা-খোর। চা’র দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো লোভনীয় এ পানীয় মহাশয় আমাকে অধীর আগ্রহ নিয়েই আহ্বান করছে। লোভ সামলানো দায়! প্রথমে হাতে, তারপর মুখের সামনে। অতপর চুমুক! বিপত্তি এর পরে। চা গলা অবধি গিয়ে আঁটকে গেলো। হায় হায়! রোজা তো ভেঙ্গে গেছে! কয়েটমুহুর্ত ঐ অবস্থায় গলায় আঁটকে রইলো। তারপর পেটসাগরে নেমে গেলো অবলীলায়! আবারো বিভ্রাট! শুধু তখন না, সারাদিন। যখনই কিছু খেতে গেছি, আঁটকে যাচ্ছিলাম বারবার। 


নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টাখানের আগেই চলে গেলাম মসজিদে। সকাল সকাল বৃষ্টি মামার অনাবিল ঝড়ে পড়ার বেয়াড়া ইচ্ছাতে নামায মাঠে না হয়ে মসজিদেই হলো। নামায শেষ। খোৎবা-মোনাজাত-মিলাদ-কিয়ামও শেষ। কুলাকুলির পালা। নজরুল বলেছেন, 

‘আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে।’

শুধু হাত না, বুকও মিলালাম বুকের সাথে। কুশলবিনীময়-কুলাকুলি বেশ হলো। যাদের সাথে ফুলাফুলি ছিলো, তাদের বুকেও মিলে গেলো বুক। অপরাধী আমি না হলেও ক্ষমা চেয়ে নিলাম। নিঃসঙ্কুচে! আজব এ কঠিন কাজটা পেরে উঠলাম অবলীলায়! অথচ গতকাল পর্যন্ত তাদের মুখ দেখতেও নারাজি ছিলাম। কি অদ্ভুত! ঈদ। সাম্য। মৈত্রী। একই সুতোই বাঁধা। এ ঈদ মানুষের হৃদয়জুড়ে সারাবছর যদি আবহমান থাকতো!!!


সালাম-কালাম, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরাঘুরি আর ঘুমের মাধ্যমে দিনের অন্ত। মাগরিব আসন্ন। রাস্তা ধরে হাঁটছি। মসজিদের দিকে। আমি আর জিয়া মামা। ঘড়িতে টাইম ছটা বেজে আটত্রিশ মিনিট। জিয়া মামার ভলিয়ম বাটনে চাপ পড়লো। আওয়াজ এলো- ‘ইফতারের সময় তো হয়ে গেছে।’ আঁতকে উঠলাম। একসেকেন্টেরও কম সময়ের জন্য। দৌড় দেব ভাবতে ভাবতে ফের স্বাভাবিক! এভাবে চলছে..... হয়তো অনেকদিন চলবে.....


প্রিয় রমজান! মিস করছি তোমায়। ভীষণভাবে। তোমার দিনের অনুভূতিগুলো সত্যিই মিস করার মত। সেগুলো স্বর্গীয়! তুমি ফিরে ফিরে এসো বারবার। তোমাকে বারবার পেতেই মাওলার দরবারে বারবার হায়াতবৃদ্ধির প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহুম্মা বারিকনা ফি হায়াতিনা বি’উচিলাতি শাহরে রমজান!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...