সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উচাটন মন

পড়ুন, ভালো লাগবেই___

উচাটন মন, কার তরে অন্তরে এত আয়োজন? (পুরো গল্প)

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


পরশু রাতটা বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কেটে গেলো। গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলাম আসরের পরেই। রাস্তায় উপভোগ্য(!) জ্যামের তলে পড়ে জামেয়া মাঠে আসতে আসতে এশা’র সময় হয়ে গিয়েছিলো। মাঠে পৌঁছেই স্টেজের বেশ কিছু ছবি উঠিয়ে নিলাম কম দামি স্মার্টফোনটাতে। উদ্দেশ্য- ক’লাইনের একটা পোস্ট করা। করি করি করে তা আর করা হলো না। জামেয়ার আশপাশের স্টলগুলো ততক্ষণে কয়েক চক্কর ঘুরে নিলাম। বই কেনা হলো কয়েকটা। পরিচিত অনেকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ও হলো। ততক্ষণে প্রায় ন’টা বাজে। বাগে সিরিকোট-এ গিয়ে নগতে গরম গরম দুটো রুটি ডাল-ভাজি দিয়ে মেরে উদরপিণ্ডি করে নিলাম।


পেট পূজা তো হলোই, এবার দিলের খোরাক না দিলে কি চলে? রওনা দিলাম প্রতি বছরের নিয়মিত আয়োজন কসিদা-এ-বোরদা শরীফের প্রোগ্রামে। নগরীর ২নং গেইট সংলগ্ন মসজিদ গলির ভেতর দিয়ে মাওলানা Mohammad Salah Uddin Reza হুজুরের আত্মীয়ের বাসায় প্রতি বছর এটি এগারো রবিউন নুরে হয়ে থাকে। যথারীতি ন’টা বিশ নাগাদ ওখানে পৌঁছে প্রথমে নাস্তা পরে নামাজ সেরে খানিক গল্পসল্প হয়ে গেলো। অতঃপর শুরু হলো সেই বিখ্যাত কসিদা পাঠ, যেটি লিখে হযরত বুছিরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ নবীজির দিদার প্লাস নুরারী চাদর গিপ্ট পেয়েছিলেন। কসিদা পাঠে Jeaul Hoque  হুজুর নেতৃত্ব দিলেন। পরে অবশ্য Mohammad Shahadat Reza  এবং সালাউদ্দীন হুজুর কিয়দংশ পাঠের ভার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিলেন। যাহোক, তিন বেয়াই এর যৌথ পরিবেশনায় আমরা প্রায় ডজন খানেক আদ মোল্লা সুরে সুর মিলাচ্ছিলাম-এ টুকুই। প্রতি বাব পর পর অবশ্য সংক্ষিপ্ত মোনাজাত হচ্ছিলো এবং এক এক জন করে প্রত্যেকের দ্বারা মোনাজাত পরিচালিত হলো। যতক্ষন সেই শব্দমালা গুলো ওষ্ঠাধর বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো ততক্ষনই কোন এক নুরানী আবেশ ভর করেছিলো সমস্ত দেহে-মনে, শিরা-উপশিরায়। বিশ্বাস করুন, এ এক চরম অনুভূতি। ভালো ভাবে না বুঝে পড়ার পরেও ভেতরের অনুভূতি যদি এই হয়, তবে না জানি যিনি লিখেছিলেন, তাঁর মনের অবস্থা কেমন ছিলো। প্রেমের মহাসাগরে না জানি তাঁর অস্থিস্ত কদ্দুর যায়গা করে নিয়েছিলো। তাঁর নিস্বাসের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু, তিনি কত গভীরেই বা ডুব দিয়েছিলেন, অনুমান করা বেশ কঠিন। কি জানি, হয়ত প্রেমের অক্সিজেন নাসিকায় লাগিয়েই ডুব মেরেছিলেন। 


সাড়ে বারোটার দিকে মিলাদ-কিয়াম-মোনাজাত শেষ। দেখি কাচ্ছির বাটি গুলো কিচেন থেকে হাটি হাটি পা পা করে আমাদের দিকে এগুতো লাগলো। এত রাতে কাচ্ছি? তবু সবে খাচ্ছি। স্বাদটা বেশ ছিলো। পেট টাইট করেই খেয়ে নিলাম। খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যেতে যেতে প্রায় দেড়টার কাছাকাছি বাজে। ঘুমোতে গিয়েই পড়লাম আরেক প্রবলেম এ। ঘুম আসে না, কবিতা আসে। কবিতা লিখতে গেলাম, দুলাইন লিখেই ঘুম আসে। আবার ঘুমানোর চেষ্টা, আসে না। এতক্ষণ ধরে পেঁচাল পারার কারনটাও এটাই- উচাটন মন। সেই বাড়ি থেকে রওনা দেবার সময় থেকেই। সবকিছু করছিলাম ঠিক, কিন্তু ভেতরকার অস্থিরতাও চলছিলো। ভেতরে যেন বিশাল এক ছটফটানি ভর করেছে। কিছুতেই মন ভরছিলো না। রাত প্রায় ৩টা পর্যন্তও সেটা আর কেটে উঠলো না। তারপর কখন যে ঘুমন্তপুরে উড়ন্ত মনটা ডানা মেলেছে, সেটা আর জানা নেই।


 উঠতে তাই একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিলো। যদিওবা এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম, তবে তা আর ঘাণেন্দ্রিয় অতিক্রম করলো না। হয়ত দিনভর দৌড়ঝাপের উপর থাকতে হবে ভেবে রহম ওয়ালা একটু বাড়তি নিদ্রা উপহার দিয়েছিলেন। যাহোক, তাড়াতাড়ি করে প্রাতের সালাত আদায় করে বাসায় ফিরে এলাম। ঝটপট গোসল সেরে তৈরি হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর দেখি আলিম ভাই বেরিয়েছে, গাড়ি ওনার জন্য এনতেজাম করছিলো। ওনার সাথে গাড়িতে উঠে গেলাম। হামজারবাগ গিয়ে দেখি হুরুস্তুল ব্যপার। মাত্র সকাল আটটা বেজে কয়েক মিনিট হলো, রাস্তা ইতোমধ্যেই ব্লক। নেমেই হাঁটা শুরু। পৌঁছে গেলাম জামেয়া ময়দানে। সব প্রস্তুত, শুধু হুজুর কেবলা বেরোনোর প্রতিক্ষা। জামেয়ার আশপাশ, খানকাহ শরীফের আগ-পর ইতোমধ্যেই লোকে লোকারণ্য। জামেয়ার গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। সবার চোখ এক দিকেই, নুরানী চেহারার লোকটি কখন বেরোবেন? অবশেষে আমার উচাটন মনটা এক পশলা শান্ত আভার সন্ধান পেলো। মনের টনটনানি আস্তে আস্তে কমতে লাগলো। চেহেরাটা যে একটু একটু করে চোখের সামনে পরিষ্কার হচ্ছিলো। চোখ দুটো ভরে গেলো, মনের ঢেউ শান্ত হলো। মুর্শিদ যে সামনেই এলো। আহা! পাগলা মন, কেন যে উচাটন, বুঝতে পারলাম, শান্ত হলাম.....................

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...