ততক্ষণে রেযার বন্ধ মুখটার কিছুটা প্রসারত্ব সাধন হয়েছে। আমাকে বললো- ‘কিরে, কি দেখিস অত? চা তো ঠাণ্ডা করে ফেললি’।
-দেখছি না, ভাবছি (আমি)।
-ও, কি ভাবিস অত?
-না, দুবছরে করিম মোল্লার এ বিশাল কর্মসাধন কি করে সাধিত হলো।
-ও, এখনো আর কিইবা দেখলি? কদিন থাক, আরো কত কি দেখবি!
রেযার মুখে যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। সে তাচ্ছিল্যটা আমাকে ঘিরে নাকি করিম মোল্লার প্রতি, বুঝা দায়! মাঝে মাঝে রেযার কথাবার্থা বুঝে উঠতে পারি না। রহস্যে আবৃত থাকে। বলে এক, বুঝায় ভিন্ন। আমিও খু্ব একটা জটলা খুলতে যাই না। কিছু কথা রহস্য থকাই ভালো। শব্দের মর্যাদা বাড়ে।
বাকি চা’টা আর গিলা হলো না। করিম মোল্লার কাণ্ড দেখতে লাগলাম। যেখানটাই বসে আছি, সেখান থেকে করিম মোল্লার দূরত্ব আট থেকে দশহাত। ইতোমধ্যে মহিলা ভক্তও এসেছে প্রচুর। মহিলা বললে ভুল হবে। বেশির ভাগই কুমারি আর তাগড়া জোয়ান। তাই মেয়ে বলাটাই উপযুক্ত মনে করছি। এদেশের স্কুল-কলেজগুলো কেন যে ‘মহিলা স্কুল’, ‘মহিলা কলেজ’ নাম রাখে, আমার ঠিক বুঝে আসে না। এতে করে নারীজাতির প্রতি বিরাট অসম্মান প্রদর্শন করা হয়। তার বদলে ‘মেয়ে স্কুল’, ‘মেয়ে কলেজ’ হলে মানাতো ভালো। ভালো হয় এরচে আরো কোমল, আরো আকর্ষণীয় শব্দ ব্যবহার করা গেলে। এ দেশের যুব সম্প্রদায়ের সব আকর্ষণ তো ওই গেইটগুলো ঘিরেই! নারীবাদিরা মিছেমিছি আবুল-তাবুল কাজে ব্যস্ত, আসল কাজের ধারেকাছে নাই।
একজন আসলো সন্তান নাই। যেভাবেই হোক একটা সন্তান চাই। করিম মোল্লার হাতে-পায়ে ধরছে। করিম মোল্লা অভয় দিলো। তাবিজ দিলো দুটা। সাথে পানিপড়া। বললো দুদিন পর আবার দেখা করতে। উপযুক্ত হাদিয়া দিয়ে বিদায় নিলো। আরেকজনের মাথাব্যথা। ডাক্তার দেখিয়েছে। কিছুতেই যাচ্ছে না। পাশ থেকে কি যেন হাতে নিয়ে করিম মোল্লা ঘষতে লাগলো। মেয়েটির কপালে, চুলের গোড়ায়। কয়েকটা ফুঁক দিলো। ‘বিশ্বাস রাখ, ভালো হয়ে যাবে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’- করিম মোল্লার বাণী। মেয়েটি উৎফুল্য ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এভাবেই চলছে। নানানজনের নানান সমস্যা। সমাধান একটাই- করিম মোল্লা!
করিম মোল্লা ব্যস্ত। এ মুহুর্তে তার সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। ঘর থেকে বেরুলাম। আশপাশটা হেঁটে দেখবো। বেরিয়েই ফিস ফিস করে রেযার কানে কানে বললাম- হ্যাঁরে রেযা, করিম মোল্লার ফুঁ’তে আসলেই কি কাজ হয়?
-হয়, আবার হয় না (রেযা)।
-মানে কি? দুটা কিভাবে সম্ভব?
-মানে খুব সোজা। কারো কারো হয়, আবার কারো কারো হয় না। যাদের হয়, তারা জোরেসুরে প্রচার করে।
-আর যাদের হয় না?
-মুখ খুলে না।
-কেন?
-কারণ করিম মোল্লার একটা কন্ডিশন থাকে।
-কন্ডিশন?
-হুুঁ, যাদের কাজ হয় না, দোষটা তাদেরই।
-কিরকম।
-করিম মোল্লা বলেছে, যাদের কাজ হবে না, তারা চিরপাপী! আল্লাহ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের পাপ অমার্জনীয়। তারা যেমনিভাবে নিজের জন্য ক্ষতিকারক, অন্যের জন্যেও অনুরূপ। এবার বল- কে কার কাছে এমন দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায়?
-কি সাংঘাতিক। তাই নাকি?
-হুঁ।
-তবে তুই এতসব জানলি কি করে?
রেযার মুখে আবারো হাসি। আবার সেই রহস্য! একটা গল্প মনে পড়ে গেল।
তবে আজ থাক, অন্যদিন বলবো।
নবাপুরের হালচাল (৭)
চলবে..........
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন