আজ বাংলা পরীক্ষা ছিলো...........
ফাযিল প্রথমবর্ষের পরীক্ষা চলছিলো। আজ শেষ। নির্বাচনী পরীক্ষা। যদিও ফাইনালের জন্য সবাই অটোমেটিক নির্বাচিত, তবু নিয়ম রক্ষার পরীক্ষা। পরীক্ষা নেবার জন্য পরীক্ষা। বহুদিনের সংস্কৃতি ধরে রাখার পরীক্ষা। যাক গে, সে কথা। আজ বাংলা পরীক্ষা ছিলো। আমার ফেবারিট। এই একটা পরীক্ষায় কোন কিছু না পড়লেও অনেক কিছু লেখা যায়। অন্তত আমি পারি। এমনটা না যে আমি বাংলায় বেশ পণ্ডিত কিংবা এটাতে আমি বেশ দক্ষ। বিষয়টা ভিন্ন- বাংলার প্রতি আমি দুর্বল। এ ভাষায় মাটির গন্ধ পাই। যে মাটিতে জন্মেছি, সেটার গন্ধ। মায়ের গন্ধ। অনুরাগী বেশ-এটাই।
যার কারণে বাংলা পরীক্ষা আসলেই আমার ‘তা ধিন, ধিন তা’ অবস্থা। মনে নাচুনি খেলে। মাথায় জোয়ার তোলে। সে জোয়ার খাতার মাঝে ঢেলে দিই। কলমের সবচেয়ে বেশি দৌড়ঝাফ এ পরীক্ষায় হয়ে থাকে। খাতার অবস্থা তো চৌদ্দ’টা। হাতে সময় আর কলমে কালি যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণ আমি থামছি না। তবে আজ থেমে গেছি। ফুল মার্ক তুলি নি। নির্ধারিত সময়ের চল্লিশ মিনিট আগেই বেরিয়ে পড়েছি। চরম এক শূন্যতায়........
আলিমে ভর্তি হয়েছিলাম এ জামেয়ায়। তখন থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছি। জামেয়ার হলরুমে বসে। গ্রামে কুড়েঘরে বসে একসময় স্বপ্ন দেখতাম। জামেয়া পড়বো। স্বপ্ন সত্যি হলো। আহ! আজো পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। স্বপ্নের ঠিকানায় বসে। লিখতে লিখতে দুঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ থমকে গেলাম। কলম আর চলছে না। হাত কেঁপে কেঁপে উঠলো। মনে পড়তে লাগলো- ‘‘অ-ডা চোরাইয়্যে অক্কল! লেহর না? কি লেহর? কিরে পলাইয়্যে, কেন গরর তুই?’’ কথাগুলো কানে এসে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করছিলো। সাড়া-শব্দ ছাড়া! নিরবে। এভাবে ভাবিয়ে গেলো অনেক্ষণ। শ্রদ্ধেয় কাসেম স্যার এভাবেই বলতেন। আদর করে এভাবেই ডাক দিতেন। হলকক্ষে আজ কেউ আসলো না ঐ নামের। কাউকে ডাকলো না। আজ যে বাংলা পরীক্ষা! আপনার যে আসার কথা ছিলো!
থেমে গেলাম। বেশিক্ষণ আর চললো না কলমটা................
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন