সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চাঁদের সাথে...

চাঁদের সাথে......

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


সে না রাখলেও চাঁদ কথা রেখেছে। চলে এসেছে। ঠিক নিয়ম করে। সহজ কথায় রুটিন মাফিক। চাঁদ কখনো বেঈমানী করে না। মাঝে মাঝে বেয়াড়া মেঘগুলোই কেবল ঝগড়া বাঁধায়। আমাদের আলাদা করতে চায়। তবু পারে না। পাঠক ভাবছে- লেখক পাগল হয়ে গেছি। আমরা তো আলাদাই। কত ক্রোশের দূরত্ব। এক হলাম কী করে?


ভাবনা ঠিকাছে। তবে ভাবের পার্থক্য এই- এতদূর থেকেও চাঁদের আলোটা আমার গায়ে এসে পড়ছে। মাঝখানে কত বাধা-বিপত্তি। সবকিছুকে ছাপিয়ে। তার আলোয় আমি আলোকিত। অদ্ভুতভাবে আমিও মুখোমুখি বসে আছি। তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। শত-ক্রোশ দূর থেকেও। তার সাথে কথাও বলছি।


ভাবছেন- একা একা? ভুল। চাঁদ আমার সাথে কথা বলে। আপনার সাথে হয়ত বলে না। আমার সাথে বলে। সে কত কথা! তার কি শেষ আছে? তাই আমার কাছে দূরত্বের সংজ্ঞা দুরকম। একটা পথের আরেকটা মনের। পাঠক পথের দিকটাই বিবেচনায় নিচ্ছে অথচ মনের দিক থেকে আমরা একদম কাছাকাছি। একহাতের মত।


সেদিন চাঁদকে প্রশ্ন করলাম- ‘আচ্ছা চাঁদ নানা, বলতো সবচে সুন্দর জিনিস কী?’ চাঁদকে আমি নানা বলে ডাকি। ছোট বেলায় মা যখন চাঁদ দেখাতো, তখন বলতো- ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা।’  যখন একটু বুঝতে শিখেছি, তখন জানতে পারলাম- মায়ের যে মামা, আমার সে নানা হবে। তখন থেকেই চাঁদকে নানা বলা। আর একটা দারুণ ব্যাপার আছে। নানার সাথে বন্ধুত্ব যতটা জমে, মামার সাথে ততটা জমে না। চাঁদ আমার বন্ধু। তাই নানা ডাকি। বুড়ো বন্ধু! চাঁদ নানা, হাহাহা! 


যাক, প্রশ্ন ফিরে যাই। চাঁদ নানার কাছে প্রশ্ন ছিলো- সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কী? ভাবছিলাম চাঁদ গর্ব করবে। ভাবসাব নিয়ে নিজেকে দেখিয়ে দেবে। কিন্তু উল্টো ঘটেছে। আমার ভাবনার উল্টো। অবাক করা জবাব!


চাঁদ জবাব দিলো। উল্টো প্রশ্নের মাধ্যমে। 

-আচ্ছা, মুহাম্মদ (দ.)কে চেনো? 

ওমা, চিনবো না কেন? আমাদের নবি। আমার নামের আগেও তো উল্লেখ আছে। 

-তা আছে, তবে তুমি তার সম্পর্কে জানো না।

কি রকম?

-তুমি হয়তো অন্যকিছু ভেবেছো। আমি নিজের সৌন্দর্য্যের গর্ব করবো। কিন্তু সৃষ্টিজগতের সবচে সুন্দর ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। তাঁর রূপের কাছে আমার জোসনা তুচ্ছ। আমি তুচ্ছ। অতি নিম্ন। আমি তো তাঁর রোশনির কিঞ্চিৎ পেয়েছি মাত্র। অণু অথবা পরমাণু ধরতে পারো। তুমি জানো- সৃষ্টি সব আলোর উৎস কি? তাঁর নুর। তাঁর জ্যোতি। আমি কেন, সৃষ্টির সকল গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র সব তাঁর মুখাপেক্ষী। সব আলোর উৎস এক। নুরে মুহাম্মদ! তিনি সব আলোর আলো। জ্যোতিরাজ! আমি সীমিত, সেঁ অসীম। সব সুন্দরের আধার। সব তাঁর গুণে গুণী। তাঁর আলোয় আলোকিত!


মাঝখানে মেঘের আগমণ। চাঁদকে থামিয়ে দিলো। তবে আমাকে থামানো গেলো না। ভাবনার জগতে ডুব দিলাম। পুরোপুরি হাঁরিয়ে গেলাম। চাঁদের সে আলাপের ভেতর। নজরুলকে মনে পড়তে লাগলো। মনের অজান্তে গুণগুণ করে গাওয়া ধরলাম-

‘মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে

তাঁর পেশানীর জ্যোতি মেখে

ওরে ও চাঁদ, রাঙলি কি তুই গভীর অনুরাগে

মুহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে..................’।


মেঘ সরে যেতে আবারো চাঁদ হাজির। ফের প্রশ্ন করার আগেই বলা শুরু-

‘সৃষ্টির সবকিছু তাঁর ইশারায় চলতে বাধ্য। আমি একবার দুটুকরা হয়ে দুদিকে পড়েছিলাম। তাও তাঁর তর্জনীর ইশারায়। সৌভাগ্যের পেখমও তখন খুলে। তাঁর নুরি কদমে চুমু দেবার সৌভাগ্য। যাঁর আলোয় আমি আলোকিত। যদিও সূর্যের মাধ্যমে ঘুরিয়ে। আমি দুর্বল। সরাসরি পেলে হয়তো ঝলসে যেতাম। তাজাল্লি সহ্য করার ক্ষমতা ছিলো না। এটাও তাঁর করুণা! আজ আমি সুন্দর-সুশ্রী, জোসনাময়। কিন্তু ভাবো- এ জোসনা যেঁ দিয়েছে তার সৌন্দর্য্যের ব্যপ্তি কিরূপ.......


আবারো হাঁরিয়ে গেলাম। ভাবনার জগতে। ভাবনার রাজ্যে এবার আ’লা হযরত-

‘ওয়হ্ কামালে হুসনে হুজুর হ্যায়

কে গুমানে নকসে জাঁহা নেহী

ইয়েহী ফুল খা-রসে দুরহো

ইয়েহী  শময়াঁ হ্যায় কে ধুঁয়া নেহী’।

বাংলায় ভাবার্থ এরূপ-

‘এ জগৎ সংসারে হায়

নবির মত সুশ্রী-সত্ত্বা দ্বিতীয় যে নাই

ঐ ফুল কাঁটাহীন,

ধোঁয়াহীন বাতি এমন পাবে কোথায়?’


সেদিন থেকে চাঁদের প্রতি অনুরাগ বেড়ে গেলো। সম্পর্ক দৃঢ় হলো। আকাশে এলেই আমাকে ডাকে। নিরালায় বসে পড়ি। বিড়বিড় করে কথা হয়। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি। আমি পাপী-তাপী। নবিকে দেখার সৌভাগ্য হয় নি। নবির নুর দেখি। চাঁদের মাধ্যমে। চাঁদ যে বলেছে- সেঁ নবির নুরে সৃষ্ট। 


জুমাবার, রাত ১০টা।

২০জুলাই-১৮।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...