সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুমিনের ঈদ

মুমিনের ঈদ আনন্দ

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


ঘটনা এক-

এক ঈদের দিন হযরত হযরত আবু হোরায়রা (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন যে, মুসলিম বিশ্বের রাজাধিরাজ সৈয়্যদেনা উমর ফারুক (রা.) কান্নাকাটি করছে। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আমিরুল মু’মিনিন! আজ ঈদের দিন। লোকেরা আনন্দোল্লাসে মেতে আছে, অথচ আপনি ঘরে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করছেন, এর হেকমত কী?’ এবার উমর ফারুক (রা.) জবাব দিলেন, ‘আনন্দিত লোকেরা যদি জানতো, তবে এমনটা করতো না’। এটা বলতে বলতে তিনি পূণরায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলতে লাগলেন, ‘‘তাদের (রমজানের রোযা, নামায, ইবাদাত, রিয়াজত) যদি আল্লাহ তায়ালা কবুল করে থাকেন, তবে তাদের আনন্দ উদযাপনে দোষের কিছু নাই। কিন্তু এর বিপরিত হলে আনন্দ উদযাপন না করা উচিৎ। আমি তো জানি না যে, আমার ইবাদত-রিয়াজত কবুল হয়েছে কিনা? (আর এজন্যেই আমি কাঁদছি)’’


ঘটনা দুই-

এক ঈদের দিনে হযরত আলী (রা.) শুকনো রুটি খাচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁর খেদমতে এক অগান্তুক উপস্থিত হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আজ ঈদের দিন অথচ আপনি শুকনো রুটি খাচ্ছেন কেন? উত্তরে মাওলা আলি (রা.) বললেন, ‘‘আজ ঈদের দিন তাদের জন্য, যাদের রোযা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। যার পরিশ্রম সফল হয়েছে। যার গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হয়েছে। আজকের দিন, আগামী দিন এবং প্রত্যেক দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে, যখন আমরা আল্লাহর নাফরমানি করবো না।’ (গুনিয়াতুত ত্বালেবিন)


ঈদের পরিচয়ঃ ঈদ আরবি শব্দ। ‘আইন ইয়া দ্বাল’ এর সমষ্টিতে গঠিত। অর্থ একের পর এক, ধারবাহিক, বার বার আসা। অর্থাৎ, যে আনন্দ বার বার (প্রতি বছর) ফিরে আসে, সেটাই ঈদ। আলোচ্য বিষয় কেবল ঈদুল ফিতর তথা রমজান পরবর্তী ঈদ। মুমিন ব্যক্তির এ ঈদের আনন্দ উদযাপন কেমন হওয়া উচিৎ, এ ব্যাপারে আলোচনার প্রয়াস পাচ্ছি।


মুমিনের ঈদ আনন্দ কেমন হওয়া উচিৎঃ

বছর ঘুরে ঈদের আনন্দ কেবল একবারই ফিরে আসে। তাই এ আনন্দের মৌসুমকে ঘিরে থাকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন আয়োজন। আনন্দ উদযাপনের এত বৈচিত্র অন্য কোন সময় পরিলক্ষিত হয় না। কেবল ঈদের দিন নয়, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করে ঈদের পরের অন্তত সাতদিন পর্যন্ত থাকে বাহারি আয়োজন, যার অধিকাংশই ইমলাম বিরোধী। তাই ঈদকে ঘিরে প্রচলিত এসব আয়োজন কখনো ঈমানদার মুসলমানের উৎসবের বিষয় হতে পারে না। তাই এমন দুটি ভিন্ন অথচ সামঞ্জস্যশীল শিক্ষণীয় ঘটনা দিয়ে আলোচনার অবতারণা করেছি, যে ঘটনাদ্বয় জানার পর ঈমানদার মুসলিম সম্প্রদায় অন্তত কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারে যে, তাদের ঈদানন্দ কেমন হওয়া উচিৎ। এবার একটু বিস্তারিত কথায় যাওয়া যাক.....


★মুমিনের ঈদ হওয়া চাই -ত্যাগ, ধৈর্য্য, আত্মসংযমের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে রাজি করানো। ভালো ভালো আহারাদি গ্রহণ কিংবা নতুন কাপড় পরিধানের নাম ঈদ আনন্দ নয় বরং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে গোনাহ থেকে দূরে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই ঈদ আনন্দ। শুরুর ঘটনাদ্বয় থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ঈদের দিন কিংবা এর আগে-পরে হৈ হুল্লুড ও অযথা আতসবাজি, অনৈসলামিক কার্যকলাপ করে রাস্তাঘাট, দোকানপাট তথা সর্বত্র সয়লাভ করার স্থান ইসলামে নেই। যেখানে ইসলামের প্রথম খলিফা ঈদের দিন কাঁদছে, চতুর্থ খলিফা শুকনো রুটি চিবোচ্ছে, সেখানে অন্যদের বেলায় সে উদযাপন কেমন হওয়া উচিৎ, সেটা সহজেই পরিমেয়। হাঁ, ঈদে আনন্দ করা যাবে, ঈদ আসেই আনন্দের বার্তা নিয়ে। তবে তা হওয়া উচিৎ ত্যাগ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সংযম নির্ভর। আল্লাহ তায়ালা ইবাদত-রিয়াজতে মনের ভেতর যে আত্মতৃপ্তি আসে, সেটাই মুমিনের আসল ঈদ। ঈদের দিনে তাই গরীব-দুঃখী-অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। যারা ঈদ পেয়েও ঈদের আনন্দ উদযাপন থেকে বঞ্চিত, তাদের মুখে হাসি ফুটানোই হবে মুমিনের সত্যিকার ঈদ উদযাপন। মানবতার কবি কাজি নজরুল ইসলাম তাই অনিন্দ্যসুন্দর বলেছেন-

‘‘তোর সোনা-দানা ভালা খানা সব রাহে লিল্লাহ

দে যাকাত মূর্দা মুসলিমে আজ ভাঙ্গাইতে নিদ’’

তিনি মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান করেছেন যে, অভাবী ও দারিদ্রের প্রতি ভালো খাবার ও ধন-সম্পদ বিতরণ করতে। সেই সাথে ঘুমন্ত মুসলিমদের জাগানোর প্রত্যয়ে যাকাতদানের প্রতিও বিনম্রচিত্তে আহ্বান জানিয়েছেন। বস্তুত, দারিদ্রের পাশে দাড়ানোতেই রয়েছে খোদা তায়ালার সন্তুষ্টি। 


★ঈদ আনন্দ কেবল তাঁদের জন্য, যাঁরা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত দায়িত্ব তথা আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করেছে। হযরত আনাস (রা.) হতে হাদিসে পাকের বর্ণিত আছে, ‘‘যখন ঈদুল ফিতরের দিন উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন, যারা স্বীয় দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালণ করেছে, তাদের প্রতিদান কী হওয়া উচিৎ?’’ ফেরেশতারা সুপারিশ করে বলেন, ‘তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া উচিৎ।’ তখন আল্লাহ বলতে থাকেন ‘যারা আমার বিধান পরিপূর্ণ পালণ করেছে, এবং তাকবিরের সাথে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, আমার ইজ্জত, জালালিয়্যত ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তাদের দোআ কবুল করব। হে লোকেরা! তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। পাপকে নেকিতে পরিবর্তন করে দিয়েছি।’ রাসুলে পাক ইরশাদ করেন, ‘ঐ সব লোকেরা ঈদগাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।’ (মিশকাত)


★মুমিন ব্যক্তির ঈদের আগের রাতে রাত্রীযাপন করা উচিৎ। কেননা- রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে  ব্যক্তি পাঁচটি রাত জাগ্রত থেকে খোদা তায়ালার রিয়াজতে মশগুল থাকবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। যথা- ১, রজব মাসের প্রথম রাত। ২, আশুরার রাত। ৩, ঈদুল আযহার রাত। ৪, ঈদুল ফিতরের রাত। ৫, শা’বানের পঞ্চদশ রজনী তথা শবে বরাত। (তারগীব ওয়াত তারহীব)। বছরের যে পাঁচটি বিশেষ রাতের কথা হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হলো ঈদুল ফিতরের রাত। অথচ এ ব্যাপারে আমরা পরিপূর্ণ বেখবর। বেখবর শুধু এমন নয়, বরং অধিকাংশ লোকেদের এ রাত কাটে বিভিন্ন মার্কেটে। যে সময় খোদা তায়ালা বান্দার জন্য দয়ার ঝুড়ি প্রদর্শন করে ঠিক সে সময়েই অভাগা মুসলিমগণ মার্কেটে সস্তা পণ্য কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে। 


★মুমিনরা ঈদের দিন পরস্পর হিংসা-দ্বেষ ভুলে গিয়ে এক কাতারে আসতে হবে। বছরের পর বছর চলে আসা শত্রুতা এ দিন ভুলে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে এক কাতারে আসাই ঈদের অন্যতম শিক্ষা। রাসূলে পাকের হাদিসে এসেছে- ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই’। দুঃখজনক বিষয় এই যে, মুসলিম সম্প্রীতি বাড়ানোর এই মহোৎসবে আমরা আমাদের হিংসা বিদ্বেষ বিসর্জন দিতে পারি না। জামাতে এক কাতারে দাঁড়াই ঠিকই কিন্তু আন্তরিকতার কাতার ঠিকই উঁচু-নিচু বিভেদপূর্ণ থেকে যায়। তাই এই বৈশিষ্ট মুমিনের হতে পারে না। মুমিন ব্যক্তির এ আনন্দ হওয়া উচিৎ পরস্পরের কলহ দূর করার মাধ্যমে। ইসলামের চির বিজয় আনতে যে সকল মহাবীরের পরস্পর কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে লড়েছিলো, তাঁদের স্মরণপূর্বক তাঁদের সে শিক্ষা গ্রহণ করে জামাতে দাঁড়ানোই হবে মুমির ব্যক্তির ঈদ আয়োজন। ঠিক কাজী নজরুল যেমনটি লিখেছেন-

‘‘তুই পড়বি ঈদের নামাযরে আজ সেই সে ঈদগাহে

যে ময়দানেতে গাজি-মুসলিম হয়েছে শহিদ’’।

নজরুলের এ দুলাইনের ভাবার্থ হলো মুমিন-মুসলিম ভাই-ভাইয়ের এ সম্প্রীতির ময়দান কায়েম হয়েছে শহীদ-গাজীদের ত্যাগের মাধ্যমে। তাই ঈদ আনন্দ হওয়া চাই ত্যাগ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে।


★ঈদের দিনের করণীয় কিছু বিষয়, যা সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত-

১, প্রত্যুষে উঠে মিসওয়াক করা। ২, উত্তমরূপে গোসল করা। ৩, সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪, চোখে সুরমা লাগানো। ৫, পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা। ৬, যত শিগ্রই সম্ভব, ঈদগাহে যাওয়া। ৭, সামার্থনুযায়ী উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করে নিজে, পরিবার, দারিদ্র ও প্রতিবেশিদের খাওয়ানো। ৮, ঈদগাহে যাবার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া। ৯, ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ১০, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া এবং দুটি ভিন্নপথ দিয়ে যাওয়া-আসা। ১১, আবহাওয়া ঠিক থাকলে খোলা ময়দানে ঈদের জামাত করা। ১২, ঈদগাহে যাবার পথে নিম্নস্বরে তাকবিরে তাশরিক পড়া। সর্বোপরি আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুলের সন্তুষ্টি আদায়ের মানসে যাবতীয় গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থেকে দিনাতিপাত করা।


ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। তবে ইসলাম এ খুশি উদযাপনের নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই মুমিনরা যাচ্ছে তাই করে ঈদ আনন্দ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত করে ইসলামী বিধি অনুযায়ী ঈদ আনন্দ উদযাপন করার তাওফিক দিন। আমিন! কাজী নজরুলের সেই চির পরিচিত সঙ্গিতটির মাধ্যমেই শেষ করা যাক-

‘‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগীদ’’.............

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...