অসহায়-শীতার্ত-দরিদ্রের সীমানায় কিছুক্ষণ। এ অচেতন জাতির চেতনা যদি ফিরে আসতো-
===>প্রভেদ<===
-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
সন্ধ্যান্তে বেরিয়েছিলেম কনকনে শীতরাতে
আয়েশ করে পায়েস খাবো মোড়ের দোকানটাতে।
তনুভরা হিমাবরণ ইচ্ছেমতো মুড়ে
ধীরপদে নিঃশব্দে একা চলছি নাতিদূরে
নামি-দামি কোট-সোয়েটর, মৌজা পায়ের পর
মাথায় টুপি পড়ে আমি সাহেব-গুণাকর।
হাঁড়কাপানো কনকনে শীত মাঘের সূচনাতে
জামাতলে বুক কাঁপে মোর, পা কাঁপে মৌজাতে।
দক্ষিণা ঐ হিমেল পবন রক্ষে না তো রীতি
‘সাঁ-সাঁ-সাঁ, শন-শন-শন’ বাড়িয়ে দিলো গতি
কুহেলিকার জং ধরেছে রাস্তা হতে বিলে
সর্বাংশ ছেঁয়ে গেছে ঘন্ কুয়াশার তলে।
আকস্মাৎ এক শব্দ এলো, কে যেনো ঐ কাঁদে
চমকে হঠাৎ থমকে বলি- পড়লাম এ কোন ফাঁদে?
চারোদিকে নজরে দেখি গোঁজরে কাঁদে সে কে?
সামনে যেতেই অমনে ধপাস পা দুখানা বেঁকে।
বস্ত্রহীন এক বস্তাধারি রাস্তায় আছে পড়ে
শীতের ছোটে দুঠোঁট ফেটে কাঁদতেছে অঝোরে
সর্বগাত্র জীর্ণশীর্ন, বস্ত্রশূন্য দেহ
পাশবেয়ে লোক যাচ্ছে কত, দেখে নাতো কেহ।
পঞ্চাশোর্ধ বয়স্বী বলে- ‘মাফ করো হে বাপু
এ কয়দিনে খাইনি কিছু চলে না তাই বাহু’।
দুচোখ বেয়ে নামলো জোয়ার মধ্যশ্রাবণধারা
মনমাজারের পাল ছিড়েছে, মনতরী কূলহারা।
অঙ্গতে মোর বাহারি সাজ, এ লোক বস্ত্রহীনা
আচ্ছাদিত মানুষ- এদের করছে তবু ঘৃণা
বস্ত্রহীনের রাত্রিযাপন ফুটপাতের আঙিনায়
বস্ত্র যাদের অস্ত্রসরূপ তারা অট্টালিকায়।
হেলা-ফেলায় মরছে মানুষ, ঘুরছে ধারে ধারে
সজাত ব্যথায় যে কাঁদে না, কে কয় মানুষ তারে?
মানুষ সবে হওরে ‘মানুষ’ মানবতার ত্বরে
লক্ষমানুষ একাত্মা হও ভালোবাসার ডোরে
অদ্য হতে নাওরে শপথ মানবসেবার ত্বরে
যেন- অন্ন-বস্ত্র-বাসাভাবে মানুষ নাহি মরে।
কবিতার উদ্দেশ্যঃ আপনার পাশেই হয়তঃ এমন অনেকেই আছে, যারা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাবে এ চরম শীতেও পরম কষ্টের মধ্যে রাত্রিযাপন করছে। নিজ কিংবা সাংগঠনিক উদ্যোগের মাধ্যমে এ সব অসহায়-শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান। মানুষ হয়ে মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসুন, স্বয়ং মানবস্রষ্টা আপনার সহায়ক হবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন