সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রাজেন্টিনা

ব্রাজেন্টিনা তুল-কালামে আমার দু’কালাম

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


কেবল ঈদ নয়, বিশ্বকাপ ফুটবলটাও ঘনিয়ে আসছে একই সরল রেখা অনুসরণ করে। ঘরে ঘরে ঈদের আমেজের পাশাপাশি বিশ্বকাপের আমেজটাও তুলনামূলক কম না। দুটার মাঝে একটা অদ্ভুত মিলও আছে। একদিকে সারা মাস নামায-রোযার ধার না ধরেও যেমনি অনেকের ঈদ উদযাপনের হিড়িক চোখে লাগার মত, ঠিক তেমনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না থাকা (ভবিষ্যতেও কখনও পারবে কিনা সন্দেহ!) সত্ত্বেও কিছু লোকের লাফ-ঝাপ আহামরি টাইপের। তুলকালাম। মানে তুমুল ঝগড়া। ঝগড়াটা একসময় গ্যালারি অতিক্রম করে সুসাইড কিংবা রক্তারক্তি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আপসোস! পরের ধনে তৃপ্তি নেয়া বাঙালির পুরোনো অভ্যাস। অমুকের বিশাল বাড়ি, তমুকের দামি গাড়ি, সমুকের সুদর্শন নারী(বউ) নিয়ে গর্ব করার মত দৃষ্টান্ত বাঙলার ঘরে ঘরে এভাইলএবল। তেমনি অমুক-তমুক-সমুক কার ঘরে কয়টা বিশ্বকাপ আছে, এ নিয়ে যেন বাঙালিদের গর্ভের, বলছিলাম গর্বের শেষ নেই।


পাশের বাসার সুন্দর তুলতুলে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সর্বোচ্চ আদর করা যায়। হাতে চকলেট কিংবা ললিপপ টাইপের কিছু একটাও গোজে দিয়ে সমর্থন আদায় করা যায়। কিন্তু ঐ বাচ্চাকে নিয়ে অপর দুজনের কাড়াকাড়ি, বাড়াবাড়ি পুরোপুরি কৌতুকোদ্দীপক! দিনশেষে বাচ্চাটা হয়তো বাবার কোলে নয়তো মায়ের কোলে, অথবা দাদা-দাদি, ভাই-বোন কেউ থাকলে তাদের কোলেই নিজের স্থান করে নেবে। হতচ্চড়া দুই বেয়াড়া লোকের না টিকবে বাজি, না থাকবে বাঁশি! দিনশেষে হেমিলনের বাঁশির সুরেও আর বাচ্চা দৌড়ে আসবে না। তো কার জন্যে এ বাঁশি? কোন টানে দুজন আপন লোকের অহেতুক দ্বন্দ্বে মুখ দেখা-দেখি বন্ধ?


তো আমি কাকে সাপোর্ট করি? প্রশ্ন সহজ, উত্তর জটিল। কিভাবে? গায়ে একটা আলখেল্লা লাগান, আপনারও জটিল মনে হবে। যদি বলি, এসবে আমার ইন্টারেস্ট মোটেও নাই। হারাম-না জায়েয! তখন বলবেন, ‘ব্যাকডেটেড’। মোল্লাদের গায়ে আধুনিকতার ছোঁয়া মোটেও লাগে নি। আছে খালি জায়েয-নাজায়েয নিয়ে। আবার যদি বলি, আমি তমুক দলের সাপোর্টার! তখন জুব্বাওয়ালার চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করতে দশজনে বিশহাতে রেডি হয়ে পড়বে। অদ্ভুত মানবসমাজ! অদ্ভুত এর রীতি-নীতি!


কিন্তু যতই মোল্লা আর মুনশি হোক না কেন, তথাকথিত এ আধুনিক বিশ্বে গুটিকয়েক ছাড়া কেউ এসব থেকে মুক্ত না। মুখে যতই হালাল-হারামের বুলি আওডাক না কেন, দেখবেন সময় করে ঠিক সময়মত প্রিয়দলের খেলা দেখতে রিমুট কন্ট্রোল নিয়ে টিভির সামনে বসে গেছে জৈনক ফতোয়াদাতা। তেমনি আমিও একজন সাপোর্টার। কোন দল বা কাপ গুনে না। যেহেতু আমি একজন শিল্পী(পাঠক সমাজ আমি সংক্রান্ত এ লাইনটা যেন না পড়ে😂) তাই একজন শিল্পীর শিল্পগুণে মুগ্ধ হয়ে সাপোর্ট করি। সাপোর্ট মানে সমর্থন। ঐ লোকটার ঐ শিল্পের সমর্থনে সমর্থক। তাই কেউ ইহুদি-খ্রীস্টানের সাপোর্টার বলে জাহান্নামের টিকেট ধরিয়ে দিতে এসে লজ্জিত হবেন না। বিনোদন তথা খেলাটাকে খেলার জায়গায় রাখুন, ঐ টিকিটটা আপনি নিয়ে কেটে পড়ুন।


যখন থেকে ফুটবলকে চিনতে শিখেছি, এ খেলা বুঝতে পেরেছি, তখন থেকে একজনকে দেখে আসছি অমায়িক, শান্তশিষ্ট ও নিতান্ত ভদ্রপ্লেয়ারের উদাহরণ হিসেবে। তার পায়ের জাদুতে অসংখ্যবার মুগ্ধ হতে হয়েছে আমাকে। কেবল, বল নিয়ে ভোঁ-দৌড় কিংবা ড্রিবলিংয়ে অথবা নিদারুণ ফিনিশিংয়ের কারণে নয়, সেক্রিফাইস করে নিজের গোলটা সতীর্থকে দিয়ে করানোটা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে। যেখানে প্লেয়ারদের খেলাতে চান্স পাওয়ার পরেই অহঙ্কারে নানান একসিডেন্ট করার দৃষ্টান্ত ভুড়ি-ভুড়ি, সেখানে বিশ্বসেরা হয়েও লেঙ খেয়ে একজন মানুষের এতটা সহাস্য কু-লভাব আমাকে মুগ্ধ করে। নামটা হয়তো এতক্ষণে মনে মনে জপছেন-‘লিও মেসি’। কেবল আমি না, যারা ফুটবল বুঝে, অন্তত তারা মেসিকে সাপোর্ট না করে পারে না। প্রতিপক্ষ কিংবা বিপক্ষদলের হলেও। তাই রাত জেগে বার্সা কিংবা আর্জেন্টিনার খেলা দেখা না হলেও পরদিন হাইলাইট্সটা তেমন একটা সহজে মিস হয় না। 


পুনশ্চঃ বলছিলাম সাপোর্ট করুন, খেলা দেখুন। এটা একান্ত আপনার নিজস্ব ব্যাপার। তবে যেন কারো সাথে সমর্থিত দলের পক্ষ হয়ে বউ তালাকের বাজি না ধরেন😂......

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...