সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শান্তি মুহাম্মদ দ

=>রচনাটি Shamim Ahmed Talukder কতৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ‘দ্বিতীয় স্থান’ লাভ করেছে।


বিষয়ঃ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বর্তমান প্রেক্ষাপট।

_মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

শিক্ষার্থীঃ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া।


*ভূমিকাঃ

           ‘ওরে পালিয়েছে ধরা হতে যত যুলমত

            যবে শান্তির বাণী নিয়ে এলো হযরত’

সমস্ত প্রশংসা যাবতীয় প্রশান্তির একচ্ছত্র অধিপতি মহান রাব্বুল আলামিনের জন্য, যিনি বিশ্ব শান্তির মিশন দিয়ে ধৈর্য্যের বিরল দৃষ্টান্ত, প্রশান্তময় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (দ.) কে অশান্তির এই পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের জন্য পাঠিয়েছেন। লাখো-কোটি দরুদ ও সালাম নবীজির কদম মোবারকে, যিনি আল্লাহ প্রদত্ত শান্তির মিশন নিয়ে ধরাধামে আগমণ করেছেন। রচনার বিষয় বস্তু এতই ব্যাপক যে, আমার চিরায়িত কনফিউশন ‘চা না কফি’র মধ্যে পড়তে হলো। যাবতীয় কাটছাট করে অতি সংক্ষেপে শান্তালাপনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি।


*শান্তি নিয়েই নবীজির আগমণঃ

                                               ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি। আর এ মহান দ্বীন ইসলাম তথা শান্তি নিয়েই ঘঠেছে নবীজির আগমণ। শান্তির পূর্ণতা যে নবীজির জীবদ্দশায় পেয়েছিল, তা নিম্মোক্ত আয়াতই প্রমাণ করে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘‘আজ (আরাফাহ্ দিবস) তোমাদের দ্বীন, ইসলাম তথা শান্তি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম। যাবতীয় নিয়ামত সমূহও তোমাদের জন্যই পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকেই (শান্তি) তোমাদের জন্য নির্ধারণ করলাম।’’ তাই এ কথা সুষ্পস্ট যে, ইসলাম কেবলই একটা ধর্ম নয়, বরং পরিপূর্ণ শান্তি মিশন। যার একমাত্র বাহক নবীজি হযরত মুহাম্মদ (দ.)। অতএব তিনিই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বাগ্রে অগ্রবর্তি।


*শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভূতপূর্ব শিক্ষাঃ

                                                 শতাব্দির পর শতাব্দি অতিবাহিত হলেও, যা আগে কেউ দেখে নি। এমন নজির, যা ধরাতে দ্বিতীয় বার ঘটে নি। তেমন এক বিস্ময়কর শিক্ষা দিয়ে গেলেন প্রাণের নবী। শিক্ষাটা হলো- ‘আস্সালামু আলাইকুম’- ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ সাক্ষাতের পুর্বে-পরে অপরের শান্তি কামনার জন্যে এমন বিস্ময়কর শিক্ষা, ইতোপূর্বে না কেউ জানতো, না কোথাও শোনা যেতো!


নবীজি রোজ সকালে বাজারের দিকে হেঁটে যেতেন মানুষদের সালাম প্রদান করার জন্য। বাচ্ছাদের সাথে ‘কম্পিটিশনে’ লিপ্ত হতেন। আজকের তথাকতিত বৃদ্ধা বা বুদ্ধাদের মত চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করতেন না- সালাম দিস নি কেন? বরং তিনি দেখা হলেই অন্যের কর্ণকুহরে পৌঁছে দিতেন চির শান্তির বাণী- ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’


*হিলফুল ফুযুলঃ

                        নবীজি তখনো অল্প বয়স্ক। চাচাদের পক্ষে ‘হারবুল ফুজ্জারে’ অংশ নিলেন। যে নবীর হৃদয়ে সর্বদা ‘মানুষে মানুষে মহাভ্রাতৃত্বে’র স্লোগান বাজে, দুনিয়াতে শান্তি আনতে যিনি বদ্ধপরিকর, তিনি যখন দেখলেন ময়দানের কারো হাত, কারো পা নেই। কারো কারো ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেছে, তখনই কিশোর নবী শান্তির মহা ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠন করলেন- ‘হিলফুল ফুযুল’ তথা ‘শান্তি সংঘ’। প্রতিশোধ প্রিয় মক্কাবাসি আজ শান্তির সুরে সুর মিলালো। সকলে একসাথে শান্তিবাণী গেয়ে উঠলো-


  ওরে কোথায় তোরা জোয়ান-বুড়া

           আছিস বল কোথায়?

       দেখনা ওরে নামলো নবী

              শান্তি প্রতিষ্ঠায়

             ধরায়-    যার তুলনা নাই।


        ডাকলেন নবী যুদ্ধ ভুলে

             আসতে শান্তিপুর

         অন্যায়-অশান্তি সকল

             করতে অজুত দূর

                   সে সুর কতই সুমধুর!


*‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপনে যুদ্ধের সম্ভাবনা ও শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ

                                  অষ্টম বারের মত কাবাগৃহ নির্মান কাজ শেষে ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপনের সময় বেধে গেলো গণ্ডগোল। বলুন তো- বাগানের সবচে তাজা গোলাপটি কার'ই বা নজর না কাড়ে? কে না চায় সেটার সুগ্রাণটুকু নিজের করে নিতে? যেখানে আরবের গোত্রগুলোর স্বভাব ছিলো ‘তালগাছটা আমার’, সেখানে এ মহান সম্মানের কাজে কে কাকে ছাড় দেবে বলুন? যুদ্ধ যখন অবশম্ভাবি রূপ নিচ্ছিলো, ‘নিম্নচাপ’ যখন ‘ঘুর্ণিঝড়ে’ রূপ নেবার জন্য সাগরতলে গর্জন করছিলো, তখন জনৈক জ্ঞানবৃদ্ধের পরামর্শ্বে কাবা’তে পরের দিনের প্রথম প্রবেশ কারির ফয়সালা মেনে নেবার সিদ্ধান্ত হলো।


পরদিন কাবা পটকে তাকিয়ে সকলে। কে সে আসবে আজ এই বিশাল অশান্তিকে শান্তিতে রূপ দিতে। হঠাৎ ধোঁয়াশার কালো মেঘ গুলো সরে গিয়ে সকলের চেহারা পুর্ণিমার আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। কেননা হেরমের পথ বেয়ে যিনি নাযিল হচ্ছেন, তিনি যে সকলে পরিচিত ‘আল আমিন’। নবীজি আসলেন, চাঁদর মোবারক বিচিয়ে দিলেন, পাথর খানা সেখানে রাখলেন, চার গোত্রপতিকে চার কোণায় ধরিয়ে দিয়ে অগ্রসর হলেন আর নবীজির নুরানী হাতে পাথরটা বসিয়ে দিলেন। বাহ্! পুরো মক্কাবাসি যেখানে ঠতস্থ, বিশাল বিশাল জ্ঞানীরা যেখানে পরাস্ত, সেখানে যুদ্ধের দামামা বন্ধ করে এত সহজেই এ বিশাল জটিল বিষয়ের সমাধান দেখে কে চুপ থাকতে পারে বলুন। ধন্য ধন্য পড়ে গেলো চারিদিকে।


এভাবে লিখতে গেলে নবীজির শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত চলতেই থাকবে, শেষ হবে না। মক্কা বিজয়ের পর নবীজি প্রাণের শত্রুদের যেভাবে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন, ইতিহাসে এমন দ্বিতীয় উদাহরণ যেমন নেই, তেমনি মদিনার সনদ, হুদায়বিয়ার সন্ধি, আরাফাহ’র ঐতিহাসিক ভাষণ, যে কোন একটার বর্ণনা যদি দিই, তবে ‘ম্যাগনাকার্টা’ লজ্জায় মুখ ঢেকে সজ্জায় গড়াগড়ি দিবে।


**বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ

*শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সৌদ সরকারের ভূমিকা কী?

                আকাশে কুসুম আর সৌদ সরকারের দ্বারা শান্তির চিন্তা করা সমান। কারণ তারাই ইসলামের সোনালী যুগের যাবতীয় নিদর্শন গুড়িয়ে দিয়ে মসনদে বসে বিশ্বব্যাপি মুসলিমদের চির অশান্তি সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সৌদ সরকারের সাথে মুসলিম দেশ গুলোর সম্পর্ক ‘আদায়-কাঁচকলায়’ হলেও ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাথে তা ‘দুধে আলতায়!’ শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই তা দিবালোকের ন্যায় ভেসে উঠবে। দেখুন না- যুক্তরাষ্ট্রের এ যাবত কালের রাষ্ট্রপ্রধানরা নির্বাচিত হয়েই কেমন সৌদি সফরের জন্য দৌড়-ঝাপ শুরু করে দেয়। তাদের বরণেও সৌদগুষ্ঠির সে কী ‘আহ্লাদে আটকাটা’ ভাব, এই বুঝি নিজেদের সর্বস্ব ট্রাম-ওবামাদের পায়ে বিলিয়ে দেবে! ছি, কী লজ্জা! কদিন আগেই তো কুখ্যাত এই গুষ্ঠির চক্রান্ত আরো পরিষ্কার হলো ইসরাঈলের সাথে সম্পর্ক জোড়দার করতে দেখে। অথচ মায়ানমারের মুসলমানদের জন্য তাদের মন এতটুকুও কাঁপে না। সাহায্য তো সুদূরের অতিত, অবস্থানই স্পষ্ট নয়। অতএব অশান্তির মুল কারণ ওই অসভ্য, কুখ্যাত সৌদি গুষ্ঠির প্রতারণা।


*জাতিসংঘ কোন পথে?

                                হারবুল ফুজ্জারের ভয়াবহতা দেখে নবীজি যেমনি ভাবে ‘হিলফুল ফুযুল’ গঠন করেছিলেন, নবীজির শেখানো সম্বল নিয়েই জাতি সংঘের পথচলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। এ সংস্থার প্রধান স্লোগান ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ হলেও এ যাত্রায় তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের ভূমিকা ঠিক বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতই। পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থেকে যাবতীয় খেলা চুকে গেলেই দর্শকের ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে ‘‘এরেস্ট হিম’’। ততক্ষণে শান্তি বাবু ‘পটল তুলেছে।’ মিয়ানমারে চলমান তাণ্ডবে তাদের কচ্ছপ গতি দেখে আপাতত তাই মনে হচ্ছে। শুধু কী মিয়ানমান? সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের উপর চলমান বর্বরতার প্রেক্ষিতে তাদের অবস্থান ‘যেই লাউ, সেই কদু’। বরং তারা নিরবে-গোপনে এসবে সমর্থন দিয়েই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, কেননা নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ।


*মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা কী?

                                  মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উচিৎ ছিলো মহানবীর মহান শিক্ষা ‘আল মুসলিমু আখুল মুসলিম’ কে গ্রহণ করে, পরস্পর সংঘবদ্ধ হয়ে সর্ব বাতেলের মোকাবেলা করা। ‘‘ওয়া তাছিমু বিহাবলিল্লাহি জামি-য়াও ওয়ালা তাফাররাকু’’ স্লোগানটি এখন কেবলই পাড়া-গাঁয়ের ধর্মীয় সংগঠন গুলোর মিটিংয়ে শোনা যায়। শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের মুখে শুনেছি বলে এ জন্মে মনে নেই। বরং ইহুদি-খ্রিস্টানদের খুশি করার দৃষ্টান্ত ‘এভাইলএবল’। সৌদি-কাতার বিচ্ছেদ তো তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এসব রাষ্ট্রপ্রধানের মুখের বুলি এখন ডি.এল. রায়ের নন্দলালের চেয়ে ডের ভালো কিছু নয়। নন্দলালের মতই তারা আপনালয়ে বসে ‘শান্তির হর্ন’ বাজিয়ে চলেছে। এর বাইরে কোন উদ্যোগ কিংবা প্রদক্ষেপ, কোনটাই নেই।


ইতিকথাঃ আলফ্রেড নোবেল যদি মহানবীর সমসাময়িক হতেন, তবে তিনি হয়ত শান্তির নোবেলটা নবীজির গলা মোবারকে ঝুলিয়ে কৃত অপরাধ মোচন করতে চাইতেন। একই সাথে আজকের দিনের শান্তির নোবেলিস্টদের দেখে আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা ছিলো প্রবল। পরিশেষে সেটিই বলতে চাই, যেটি ভিন্নধর্মী হওয়া সত্ত্বেও জনৈকা বিখ্যাত মহিলা ভারতের বিশেষ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- ‘‘আজকের এই সংঘাতময় বিশ্বে মুহাম্মদ (দ.) এর গুণে গুণান্বিত হয়ে যদি কোন এক মহাপুরুষ জন্ম লাভ করে, তবে এই বিশ্বে কোন সংঘাত থাকবে না’’।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...