সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কলিকালের বিয়ে

★কলিকালের বিয়ে★

_মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

_______________________

ছেলের বাবা-

পোলা আমার বিদেশ থাকে

কোটি টাকা রুজি

দশ গেরামে দ্বিতীয়টা

পাবেন না তো খুঁজি।


শহরেতে ফ্লাট বাড়ি

গ্রামে বিশাল দালান

কুড়ি বিঘা সম্পদ আছে

গোলা পোরা ধান।


দেশ থেকে দেশ ঘুরে বেড়ায়

ব্যবসাতে সফল

জ্ঞানের বেলায় যদিওবা

গোটা ‘মাকাল ফল’।


ফ্যামিলিতে সবে আমার

মানিক ও রতন

মদ, গাঁজা আর বাবা খেলায়

দক্ষ একেক জন।


কোটি টাকা কাবিন দিবো

দিবো দামি চুড়ি

মেয়ে আপনার রানীর হালে

থাকবে শশুর বাড়ি।


কনের বাবা-

মেয়ে আমার অতি চালাক

সশিক্ষিত বেশ

এমন মেয়ে পাবেন না আর

খুঁজলে সারা দেশ।


রূপের কথা বলবো কী আর

ঠিক যেন হুর-পরী

আট গেরামে একটাও নাই

দেখেন না বিচারি।


জোয়ান-বুড়া, আবাল-বৃদ্ধ

সবার মুখে মুখে

মেয়ে আমার লাবণ্যময়

দেখার মত চোখে।


চুল এলিয়ে চলে-ফেরে

বেশ তো আধুনিক

বুক চেতিয়ে চোখ রাঙিয়ে

চলে দিগ-বেদিক।


শিক্ষা-দিক্ষা কমতি যে নাই

পাশ আই.এ, বি.এ

ছেলে রাজি থাকলে আমি

দিয়ে পারি মেয়ে।


ফলস্রুত-

মিয়া বিবি রাজি থাকলে

কিয়া করেগা কাজি

দিনক্ষণ কবে হবে ভালো

বলেন বেয়াইজ্বি।


ছেলের আছে টাকা-পয়সা

মেয়ের সাদা রঙ

বাজুক তবে বিয়ের বাঁশি

সাথে চলুক ঢঙ।


যৌতুক নয়, মেয়ের জন্য

দিবেন বলেন কী?

পাকাপাকি কথা হলে

তবেই সব রেডি।


শোবার জন্যে খাটিয়া চাই

দেখার তরে টিভি

গরম কালে ‘এ.সি’ লাগে

দরজা ডি.বি।


কাপড় রাখতে আলমিরা আর

জুতা রাখতে সেট

বসার লাগি সোপা সেট চাই

পিঠের নিচে বেড।


ফল-বেদেনা নষ্ট হবে

না থাকলে ফিরিজ

নতুন বউয়ে চা খেতে চায়

নতুন কাপ-পিরিছ।


চাই না তেমন বেশি কিছু

এই তো সামান্য

বেয়াই মশাই খুশি মনে

দিলে দিল ধন্য।


বিয়াই খুশি, বেয়াইন খুশি,

খুশি কন্যা-বর

দু’দিন পরে হয় যে শুরু

যত তুফান-ঝড়।


কন্যা দেখায় রূপের বড়াই

টাকার বড়াই বরে

অহঙ্কারের অগ্নিস্রোতে

কে কারে আর ডরে?


হয় যে শুরু পরকিয়া

পরাবাসের ঘর

সুখের সংসার ভেঙ্গে কাঁপে

থর থরাথর থর।


পিছুটান-

এককালে ভাই বিয়ের শর্ত

ছিলো না তো এমন

টাকার খেলা, রূপের মেলা

ছিলো না তখন।


আচার-স্বভাব কেমন ছেলের

করতো যাচাই-বাচাই

জ্ঞানে-গুণে কত চতুর

মাপতো শশুর মশাই।


নামাজ-কালাম পড়ে কিনা

মাইয়াটা আপনার?

ছেলের বাপের এমন প্রশ্ন

ছিলো জিজ্ঞাসার।


মোটা টাকার কাবিন-টাবিন

জানতো না লোকে

বৈরাতি আর যৌতুক যে

ছিলো স্বপ্নালোকে।


বংশ কেমন, চলন-বলন

কেমন রীতি-নীতি?

বিয়ের পরে পরষ্পরের

থাকবে তো ভক্তি?


এই তো ছিলো সোনালি দিন

সোনার মানুষ-জন

কলিযুগে নাইকো এখন

অতিত রোমন্থন।


মৌলিকতা চাপা পড়লো

লৌকিকতার তলে

লৌকিকতা মেললো ডানা

শৌখিনতার ঢালে।


কলিকালের বিয়ে-

তু দিয়েরে মু দিয়ে

ন দিয়েরে কী দিয়ে?


( সাইয়্যেদ আবদুস ছোবাহান ভায়ের অনুরোধে কলম ধরলাম। জানি না কেমন লিখলাম? কোন বিষয় বাদ পড়লে স্মরণ করে দিবেন, এড করে নিবো।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...