মেরাজ-রাজ নামাযেতে, সেটাও আবার বরাত রাতে....
-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
রাসূলে আকরাম নামায পড়ছেন। মেরাজ-রাজ, যিনি নামায এনেছেন তাঁর নামায। ভাবা যায়- কত প্রেম তাতে? কত আবেগ সে নামাযে? সে নামাযের মকবুলিয়্যত কীরূপ? আচ্ছা, যিনি নামায এনেছেন, তাঁরও বুঝি নামায পড়তে হয়? হাঁ, তিনি তো পড়ছেনই। তবে যে, আমাদের দেশের কিছু ফকির-দরবেশের নামাযের প্রয়োজন পড়ে না! তা কীরূপ? দীর্ঘক্ষণ তিঁনি নামাযে দাঁড়িয়ে রইলেন। সচরাচর এমনটি দেখা যায় না। পা মোবারক দুটোকে এবার ছুটি দিলেন। চলে গেলেন সিজদায়। সে এক দীর্ঘসময়ের ঘটনা। সিজদায় গেলেন তো গেলেন, উঠার নামগন্ধ নেই! রাসূলের নামাযে দেখি রুকু-সিজদা আছে, কিন্তু দেশীয় পীর-ফকিরদের নামায দেখি দীলে? তাদের কলব নাকি ‘আরশ মুয়াল্লাহ’! সেখানেই নাকি নামায পড়েন! আচ্ছা, ঠিকাছে। মেনে নিলাম ফকিরি করে কলবের বেশ উন্নতি সাধন তারা করেছেন। কলবকে আরশ বানিয়ে নিয়েছেন। তবে, মাথায় আরেকটা ব্যাপার কিলবিল করছে- তাদের কলব যদি আরশ হয়, নবীর কলবের হালত কী? নবীয়ে দো’জাঁহা ওখানে(কলব আরশে) না পড়ে এত কষ্ট করে রুকু সিজদায় সময় নষ্ট করছেন কেন?
সিজদা করছেন তো করছেন, এমন সিজদা, যাতে আম্মাজান আয়েশা বেশ ভড়কে গেলেন। সাড়া-শব্দ নাই, নড়াছড়া নাই। আহ্, সিজদা! আচ্ছা, সিজদা যদি স্রষ্টা আর সৃষ্টির মিলনের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের মত কাজ করে, তবে সে সিজদা কীরূপ? যিঁনি করছেন, আর যাঁকে করছেন উভয়ের রসায়ন কীরূপ? সিজদা কতটা মধুর হলে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিজদা অবস্থায় কাটিয়ে দেয়া যায়? নিস্তব্ধ রজনী। আম্মাজান মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে বসলেন। রাসূলে আকরাম এত দেরি করছেন কেন? কোন অঘটন ঘটে যায় নি তো? মুখে শব্দ করাও কঠিন, পাছে নামাযের কোন অসংযোগ হয়ে না যায়! হার্টের ক্রিয়া-কলাপও প্রায় বন্ধ হবার যোগান। ধীরে ধীরে অগ্রসর হলেন। জান্নাতকা মালিকের পা মুবারকে স্পর্শ করলেন। স্পন্দন অনুভূত হলো! আহ্, শান্তি! স্পন্দনটা যেন রাসূলে অতুলের পা মোবারক হতে নিজের অন্তরে অনুভূত হলো। একটু আগেও যে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছিলো প্রায়। হঠাৎ কানজোড়া সংজ্ঞায়িত হলো। কী যেন একটা শব্দ আসছে। ঠিক যে স্থানে নবীজি সিজদা করলেন ওখান থেকে। কান দুখানা আরো একটু প্রশস্ত করে খাড়া করে দিলেন। এবার স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুযু বিআপয়িকা মিন ইক্বাবিকা, ওয়া আয়ুযু বিরিজ্বা-য়িকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া আয়ুযু বিকা মিনকা, লা আহস্বী ছানা-আন আলাইকা আনতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা’ ‘হে জগৎরাজ! তোমার বিচার চাই না, অনুকম্পা চাই। যত অসন্তোষ-ক্রোধ আছে, সেগুলির বিপরিতগুলো দানিও। আমি তো তোমার প্রতিই ধাবমান। তুমি ঠিক তেমন তুমিই, যেমনটা তুমি বলেছিলে’।
‘তুমি ঠিক তেমন তুমিই, যেমনটা তুমি বলেছিলে’। সিজদা ঠিক এমনই হওয়া চাই, যে সিজদায় বলে দেয়া যায় আল্লাহ কেমন। যে সিজদায় খোদা তায়ালার নিকট নম্র হয়ে, বিনীতাবস্থায় ‘হে জগৎরাজ! তোমার বিচার চাই না, অনুকম্পা চাই। যত অসন্তোষ-ক্রোধ আছে, সেগুলির বিপরিতগুলো দানিও। আমি তো তোমার প্রতিই ধাবমান’ টাইপের মধুর আলাপ করা যায়! আর সিজদা যদি এমন সিজদা হয়, তবে তার মকামিয়্যত অনুধাবন জরুরী। অতএব বলা অনুচিৎ- ‘রাসূল আমার মত’। শোনা অনুচিৎ, সে মৌ-লোভীর বয়ান। প্রতিহত করা উচিৎ- সে সব ধর্মের নামে অধর্ম প্রচারকারীকে। ঝাঝরা করে দেয়া উচিৎ- তাদের রুক্ষ সিনাকে। যে সিনায় নবীপ্রেম নেই, সেটা অনুর্ভর-রুক্ষ। সেখানে ‘শবে বরাত’ এ ইবাদাত জন্মায় না। ওখানে জল ছিটিয়ে লাভ নেই। মরুভূমিতে জল ছিঁটালে পরক্ষণেই তা খোঁজে পাওয়া মুশকিল। ফি কুলুবিহীম মারাদুন। ওরা রোগী। মানষিক রোগী। এ রোগ ছোঁয়াছে। ওদের সংস্পর্শে যাবেন না। রোগা হয়ে যেতে পারেন।
নবীরাজ নামায সমাপ্ত করলেন। আম্মাজান আয়েশা শিহরিত। মনের ভেতর তোলপাড় চলছে। প্রশ্ন করবে করবে ভাবতে ভাবতেই উল্টো প্রশ্ন শোনে বসেন- ‘হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আজ কোন রাত?’ অটোমেটিক সিস্টেমে উত্তর আসে- ‘আল্লাহু ওয়া রাসূলু আ’লামু-আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত’। আম্মাজান আয়েশা বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বেশি জানেন, আর ওরা(দেউবন্দিরা) বলে রাসূল থেকে শয়তান বেশি জানে! ছি, মানুষ কি এর পরেও এদের কথা শোনবে? ‘এটা পনেরো শা’বান। এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত প্রার্থনাকারিদের মার্জনা করা হয়’ বলতে বলতে রাসূলে কাওনাইন অবসর গ্রহণ করলেন..........
ওহে শবে বরাতের বিদ্বেষ পোষণকারী! শোন, রাসূলে মকবুল বলে দিয়েছেন, তোমাদের ক্ষমা নেই। তোমরা হিংসুক। অন্য একজন ইবাদতের মাধ্যমে খোদার রেজামন্দি হাসিল করছে, তাতে তোমরা হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরছো! সেদিন আযাজিলও জ্বলেছিলো অন্যদের সিজদা দেখে। আজ তোমরাও একই দৃশ্যে জ্বলছো। তোমরা জ্বলো, তোমরা পুড়ো। আমার আ’লা হযরত বলে গেছেন- ‘জ্বলে-পুড়ে মরাই তোমাদের কাজ’..............
তথ্যসূত্র- বায়হাকি শুয়াবুল ইমান। ৩য় খণ্ড- ৩৮৪-৩৮৫। হাদিস নং- ৩৮৩৫
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন