সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বরাত২

মেরাজ-রাজ নামাযেতে, সেটাও আবার বরাত রাতে....

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


রাসূলে আকরাম নামায পড়ছেন। মেরাজ-রাজ, যিনি নামায এনেছেন তাঁর নামায। ভাবা যায়- কত প্রেম তাতে? কত আবেগ সে নামাযে? সে নামাযের মকবুলিয়্যত কীরূপ? আচ্ছা, যিনি নামায এনেছেন, তাঁরও বুঝি নামায পড়তে হয়? হাঁ, তিনি তো পড়ছেনই। তবে যে, আমাদের দেশের কিছু ফকির-দরবেশের নামাযের প্রয়োজন পড়ে না! তা কীরূপ? দীর্ঘক্ষণ তিঁনি নামাযে দাঁড়িয়ে রইলেন। সচরাচর এমনটি দেখা যায় না। পা মোবারক দুটোকে এবার ছুটি দিলেন। চলে গেলেন সিজদায়। সে এক দীর্ঘসময়ের ঘটনা। সিজদায় গেলেন তো গেলেন, উঠার নামগন্ধ নেই! রাসূলের নামাযে দেখি রুকু-সিজদা আছে, কিন্তু দেশীয় পীর-ফকিরদের নামায দেখি দীলে? তাদের কলব নাকি ‘আরশ মুয়াল্লাহ’! সেখানেই নাকি নামায পড়েন! আচ্ছা, ঠিকাছে। মেনে নিলাম ফকিরি করে কলবের বেশ উন্নতি সাধন তারা করেছেন। কলবকে আরশ বানিয়ে নিয়েছেন। তবে, মাথায় আরেকটা ব্যাপার কিলবিল করছে- তাদের কলব যদি আরশ হয়, নবীর কলবের হালত কী? নবীয়ে দো’জাঁহা ওখানে(কলব আরশে) না পড়ে এত কষ্ট করে রুকু সিজদায় সময় নষ্ট করছেন কেন?


সিজদা করছেন তো করছেন, এমন সিজদা, যাতে আম্মাজান আয়েশা বেশ ভড়কে গেলেন। সাড়া-শব্দ নাই, নড়াছড়া নাই। আহ্, সিজদা! আচ্ছা,  সিজদা যদি স্রষ্টা আর সৃষ্টির মিলনের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের মত কাজ করে, তবে সে সিজদা কীরূপ? যিঁনি করছেন, আর যাঁকে করছেন উভয়ের রসায়ন কীরূপ? সিজদা কতটা মধুর হলে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিজদা অবস্থায় কাটিয়ে দেয়া যায়? নিস্তব্ধ রজনী। আম্মাজান মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে বসলেন। রাসূলে আকরাম এত দেরি করছেন কেন? কোন অঘটন ঘটে যায় নি তো? মুখে শব্দ করাও কঠিন, পাছে নামাযের কোন অসংযোগ হয়ে না যায়! হার্টের ক্রিয়া-কলাপও প্রায় বন্ধ হবার যোগান। ধীরে ধীরে অগ্রসর হলেন। জান্নাতকা মালিকের পা মুবারকে স্পর্শ করলেন। স্পন্দন অনুভূত হলো! আহ্, শান্তি! স্পন্দনটা যেন রাসূলে অতুলের পা মোবারক হতে নিজের অন্তরে অনুভূত হলো। একটু আগেও যে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছিলো প্রায়। হঠাৎ কানজোড়া সংজ্ঞায়িত হলো। কী যেন একটা শব্দ আসছে। ঠিক যে স্থানে নবীজি সিজদা করলেন ওখান থেকে। কান দুখানা আরো একটু প্রশস্ত করে খাড়া করে দিলেন। এবার স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুযু বিআপয়িকা মিন ইক্বাবিকা, ওয়া আয়ুযু বিরিজ্বা-য়িকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া আয়ুযু বিকা মিনকা, লা আহস্বী ছানা-আন আলাইকা আনতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা’ ‘হে জগৎরাজ! তোমার বিচার চাই না, অনুকম্পা চাই। যত অসন্তোষ-ক্রোধ আছে, সেগুলির বিপরিতগুলো দানিও। আমি তো তোমার প্রতিই ধাবমান। তুমি ঠিক তেমন তুমিই, যেমনটা তুমি বলেছিলে’।


‘তুমি ঠিক তেমন তুমিই, যেমনটা তুমি বলেছিলে’। সিজদা ঠিক এমনই হওয়া চাই, যে সিজদায় বলে দেয়া যায় আল্লাহ কেমন। যে সিজদায় খোদা তায়ালার নিকট নম্র হয়ে, বিনীতাবস্থায় ‘হে জগৎরাজ! তোমার বিচার চাই না, অনুকম্পা চাই। যত অসন্তোষ-ক্রোধ আছে, সেগুলির বিপরিতগুলো দানিও। আমি তো তোমার প্রতিই ধাবমান’ টাইপের মধুর আলাপ করা যায়! আর সিজদা যদি এমন সিজদা হয়, তবে তার মকামিয়্যত অনুধাবন জরুরী। অতএব বলা অনুচিৎ- ‘রাসূল আমার মত’। শোনা অনুচিৎ, সে মৌ-লোভীর বয়ান। প্রতিহত করা উচিৎ- সে সব ধর্মের নামে অধর্ম প্রচারকারীকে। ঝাঝরা করে দেয়া উচিৎ- তাদের রুক্ষ সিনাকে। যে সিনায় নবীপ্রেম নেই, সেটা অনুর্ভর-রুক্ষ। সেখানে ‘শবে বরাত’ এ ইবাদাত জন্মায় না। ওখানে জল ছিটিয়ে লাভ নেই। মরুভূমিতে জল ছিঁটালে পরক্ষণেই তা খোঁজে পাওয়া মুশকিল। ফি কুলুবিহীম মারাদুন। ওরা রোগী। মানষিক রোগী। এ রোগ ছোঁয়াছে। ওদের সংস্পর্শে যাবেন না। রোগা হয়ে যেতে পারেন। 


নবীরাজ নামায সমাপ্ত করলেন। আম্মাজান আয়েশা শিহরিত। মনের ভেতর তোলপাড় চলছে। প্রশ্ন করবে করবে ভাবতে ভাবতেই উল্টো প্রশ্ন শোনে বসেন- ‘হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আজ কোন রাত?’ অটোমেটিক সিস্টেমে উত্তর আসে- ‘আল্লাহু ওয়া রাসূলু আ’লামু-আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত’। আম্মাজান আয়েশা বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বেশি জানেন, আর ওরা(দেউবন্দিরা) বলে রাসূল থেকে শয়তান বেশি জানে! ছি, মানুষ কি এর পরেও এদের কথা শোনবে? ‘এটা পনেরো শা’বান। এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত প্রার্থনাকারিদের মার্জনা করা হয়’ বলতে বলতে রাসূলে কাওনাইন অবসর গ্রহণ করলেন..........


ওহে শবে বরাতের বিদ্বেষ পোষণকারী! শোন, রাসূলে মকবুল বলে দিয়েছেন, তোমাদের ক্ষমা নেই। তোমরা হিংসুক। অন্য একজন ইবাদতের মাধ্যমে খোদার রেজামন্দি হাসিল করছে, তাতে তোমরা হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরছো! সেদিন আযাজিলও জ্বলেছিলো অন্যদের সিজদা দেখে। আজ তোমরাও একই দৃশ্যে জ্বলছো। তোমরা জ্বলো, তোমরা পুড়ো। আমার আ’লা হযরত বলে গেছেন- ‘জ্বলে-পুড়ে মরাই তোমাদের কাজ’..............


তথ্যসূত্র- বায়হাকি শুয়াবুল ইমান। ৩য় খণ্ড- ৩৮৪-৩৮৫। হাদিস নং- ৩৮৩৫

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...