সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অব্যক্ত বেদন

অবিদিত বেদনা

_মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


লিখতে বসেছি। তবে কী লিখবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার সকল আবেগ আজ পরাজিত, নিমজ্জিত, চরম অবহেলিত। জীবনের এই সময়ে এসে বড় ক্লান্তি অনুভব করছি। চোখে-মুখে বিষাদের ছাপ দেখতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি না এ জীবনের মানে কী? চলছি তো চলছি.....  গন্তব্য কোথায়, কোথায় গিয়ে দাড়াবো, লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য কী? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। বলা নেই কওয়া নেই, শুধু অনবরত ধেঁয়ে চলছি। এ কেমন জীবন? না কোন মানে আছে, না কোন লক্ষ্য? আমার এ জীবন’ মোতাহার হোসেনের বৃক্ষের সাথে মেলে না, মেলে রবিন্দ্রনাথের নদীর সাথে।  


এ বিশাল বৃথিবীতে একজন রমণীই কেবল আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে- সে আমার মা। বিশ্বাস করুন, এর বাইরে দ্বিতীয় কারো স্বার্থহীন ভালোবাসা আমি পাই নি। না কোন পুরুষের, না কোন নারীর! ভালোবাসার নির্দিষ্ট একটা গন্ধ আছে যা কেবলই প্রেমিকেরা অনুভব করতে পারে। সে গন্ধ আমার জননী ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে অনুভব করি নি। অনেকেই আমাকে পছন্দ করে আমার সুনির্দিষ্ট কিছু অগুণী গুণের কারণে। তবে ভালোবাসে না কেউই। কেউ না।


এ হৃদয় তাই আজ বড়ই ফাঁকা। চরম শূন্যতারা এসে ভিড় করেছে আমার সমস্ত দেহে, মনে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যেন জনহীন মরুতে উত্তপ্ত সূর্যটা তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে এই শূন্যতাকে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলছে। একেবারে খাঁ খাঁ করছে। কোথাও কোন রাঁ নেই, মনে হচ্ছে মহাশূন্যে অবস্থান করছি। দূর থেকে শুধু গ্রহ-নক্ষত্র গুলোর চকচকানি দেখেই চলেছি।


নিজের মনের অবস্থা আর কিই বা বলবো, চারপাশের মানুষ নামের জন্তু গুলোর কান্ড-কারখানা দেখতে দেখতে  নিজেকে ধীরে ধীরে জড়পদার্থ হিসেবে আবিষ্কার করে চলেছি। দেখুন না, চারিদিকে কত কোলাহল, কত চলাচল, কত কী ঘটে চলেছে চতুর্দিকে। কিন্তু এ দেহের ভেতরের ছোট্ট মাংসের টুকরাটা কোন কিছুতেই আর নড়ে উঠে না। দারিদ্রের ক্ষুধা, অত্যাচারির নির্যাতন, সু চিদের নৃসংশতা, কোন কিছুই তেমন আর টাচ্ করে না। এসব দেখতে দেখতে আত্মাটা মনে হয় গলে-পঁচে গেছে। তাই আজ আর লিখতে বসেও লিখতে পারছি না। 


কলম তো প্লাস্টিকে মোড়ানো কালিযুক্ত একটা দন্ড মাত্র, এটা আর কতক্ষন চলবে? নিজের মনটাই তো চরম ক্লান্তি নিয়ে ভ্রান্তি ছেড়ে খানিক শান্তি চাইছে। সকল ক্লান্তি যেন কলমটাকেও গ্রাস করেছে। চলে না, চলতে যে চায় না.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...