সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নজরুল বন্ধনা

ভাবছি নজরুলকে নিয়ে কিছু লিখা দরকার। কিন্তু কী লিখবো? কিই বা লিখা যায়? তাঁর সম্মানে ঠিক কোন বাক্যটা যায়? কোন শব্দ দিয়ে গাঁথলে ঠিক তাঁর জন্য তাঁর যোগ্য একটা গাঁথুনি তৈরী হবে? এই ভেবে ভেবে আর লিখা হয়ে উঠে না। কত জন্মদিন এভাবে কেটে গেলো.... ভাবতে ভাবতে। অদৃশ্য ভাবে তাকে অনুভব করতে করতে। এই যা- কথায় কথায় আবার শিরক করে বসলাম! কিন্তু এই শিরক তো আমার অনুভবজুড়ে। আমার ধ্যানে, মনে, কল্পনায়। কিসের যেন একটা অদৃশ্য ছোঁয়া পাই। হাঁ, পাই। আপনাদের হয়তো অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কিন্তু আমি অনুভব করি। ঠিক সব সময় না, মাঝে মাঝে। যখন দেখি শাসকগুষ্ঠী ক্ষমতার জোর খাটিয়ে যাচ্ছে-তাই করে, তখন বেশ বিদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে। খুব করে বলতে ইচ্ছে করে-


‘‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত  

আমি সেই দিন হব শান্ত,  

যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না  

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না  

বিদ্রোহী রণক্লান্ত  

আমি সেই দিন হব শান্ত।’’


আবার যখন মুসলিমদের দুরাবস্থার দিকে লক্ষ্য করি, তখন বেশ জোরে একটা চিল্লানি দিয়ে ওমর ফারুককে ডাকতে মন চায়। তখনও কে যেনো ভর করে। আমার উপর। পুরো শরীরজুড়ে। রক্ত যেনো টগবগ করতে থাকে। তাঁর খুব কাছে গিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে জোরগলায় বলতে মন চায়-


‘‘উমর! ফারুক! আখেরি নবীর ওগো দক্ষিণ-বাহু!  

 আহ্বান নয় - রূপ ধরে এস - গ্রাসে অন্ধতা-রাহু!  

 ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন!  

 সত্যের আলো  নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ।  

 শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের  

 দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের  

 ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি  

 আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি!  

  

 ইসলাম - সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি?  

 পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।  

 আজ বুঝি - কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর-  

 'মোরপরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর।'’’

  

যখন রেললাইন কিংবা পুটপাত বেয়ে একা একা হাঁটতে হাঁটতে দেখি অভাবিরা খাদ্যাভাবে ধুঁকছে আর সাহেবজাদারা তাঁদেরকেই চোর-ডাকাত-অভদ্র-ইতর-বেয়াদব বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিংবা যখন দেখি জন্ম থেকেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ৮-১০ বছর বয়সি চা’র দোকানের ছোকড়াটার ব্যবহার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলছে। অথবা সামান্য কারণে যখন কেউ রিক্সা কিংবা ঠেলাগাড়ি ওয়ালার গালে ঠাস করে পাঁচটা আঙুল বসিয়ে দেয়, তখন বেশ প্রতিবাদি হতে মন চায়। মনের অজান্তে বিড় বিড় করে বলে উঠি-


‘‘চোখ ফেটে এল জল,  

এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?  

যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,  

বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।  

বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!  

কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্?  

রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,  

রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,  

বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা  

কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি ইটে আছে লিখা।’’


আবার যখন মদিনা-মুনিবের প্রেমাশক্ত হয়ে গলে গলে পড়ার উপক্রম, ঠিক তখনি কানে কানে এসে কে যেন বলে দেয়-


‘‘আয় মরুপারের হাওয়া নিয়ে মদিনায়

জাতে পাকে মোস্তফার রওজা মোবারক যথায়’’ কিংবা

‘‘আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ

সে পথে মোর হেঁটে যেতেন নুর নবী হযরত’’


এভাবেই সে একেক সময় একেক রূপ ধরে আসে। কখনো বিদ্রোহী, কখনো প্রেমাতুর, কখনো চির আহ্বানকারী। যুগ যুগ ধরে হয়তো সে এভাবেই সে আসতে থাকবে। প্রতিটি নজরুলপ্রেমির অনুভবে। আর বলে যাবে তাঁর অবিনাশী সব কথামালা। অন্যের মুখ দিয়ে। এভাবেই হাজার-লক্ষ-কোটি মুখ থেকে নিসৃত হতে থাকবে নজরুলের ধ্বনী। চির অবিনাশী, চির অম্লান, চির দুর্দম, অসীম........


শুভ জন্মদিন গুরু। লক্ষ-কোটি ভক্তের মাঝে এ অভক্তের প্রেমটা গ্রহণ করিও।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...