সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীর দোষ

নারী দোষি, পুরুষ কী ধোয়া তুলশী পাতা?

_____মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

‘‘বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ

          বেদনা অশ্রুবারি

   অর্ধেক তার আনিয়াছে নর,

           অর্ধেক তার নারী।’’

                        (কাজী নজরুল ইসলাম)

প্রিয় কবির এ কয়টি চরনেই মুল বক্তব্য লুকায়িত। বিরাট এক ব্যরাম দেখা দিয়েছে সমাজে। কথায় কথায়- ‘‘নারী দোষি’’। ওরা পর্দা করে না, তাই টিজ করা হয়! ওরা দোষি, ঘরে স্বামী রেখে অর্ধনগ্ন হয়ে বাজারে যায়। ঝোপের আড়ালে, একাকি দালানে প্রেমিকের সাথে ইটিশ-পিটিশ করে। ওরা দ্বীন ধর্ম পালন করে না, স্বামীর সাথে বেয়াদবি করে, মা বাবাকে মানে না! ওরা অশ্লিল, বেহায়া, বেপর্দা, বেলাজ, বেদ্বীন, বেশর্মা, বেয়াক্কল!! 


একটু থামেন, অনেক তো কোপাইছেন, এবার একটু জিরান। আমার আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে তৈরি ‘‘জিরা পানি’’ খান।

ওহে নারীর বাবা, ওহে নারীর ভাই, ওহে নারীর স্বামী! বলুন তো? আপনার মেয়ে, আপনার বোন, আপনার স্ত্রী যে পর্দা করে না, আপনি কি তাকে পর্দা শিখিয়েছেন? খুব ছোটকাল থেকে ওকে কি বোরকা পড়ানো শেখানো হয়েছে? না, শেখান নি! ওকে আপনি জিন্স পেন্ট আর গেঞ্জি পড়িয়েছেন, দশটা আধুনিকা মেয়ের সাথে মিশতে টাইট ফিটিং কাপড় পড়িয়েছেন, দেখতে ক্ষেত লাগে ভেবে চিপচিপা কামিজ পড়িয়েছেন! কী পড়ান নি? বলুন জিন্স কিনে দেন নি? তবে দোষটা কার? আপনার নয় কী? বলুন- চারাগাছের যত্ন যথাযত না নিলে, গাছ বড় হলে আপনার সাথে তেন্দ্রামি করবে না? ভালো ফল দিবে? বলুন-লোহাকে পানিতে রাখলে জং কী ধরবে না? বলুন- সুর্যের আলোয় চাঁদ কী আলোকিত হয় না? তবে আপনি কেন আপনার মেয়ে/বোন/স্ত্রীকে আপনার আলোয় আলোকিত করবেন না? জবাব দিন।


নারী বাজারে যায়, মার্কেট সয়লাভ করে ফেলে, না নিলে তালাকের ভয় দেখায়!! গাল ফুলিয়ে তালগাছ বানিয়ে ফেলে! 

প্রশ্ন করেছেন নিজেকে, কেন করে?

আচ্ছা তাকে কি বাজারের যাওয়ার ক্ষতিক্ষর দিক সমুহ পড়ানো হয়েছে? কুরআন-হাদীসের আদেশ-নিষেধ কি সে জানে? তাকে কি আপনি সে শিক্ষা দিয়েছেন? বলুন, সে কী নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত নয়? কে করেছে বঞ্চিত, আপনি নয় কী?


ঝোঁপের আড়ালে, ফ্লাট বা দালানে ইটিশ আর পিটিশ! বলুন তো- কে করে? মেয়েটা একা একা? পুরুষও আছে নিশ্চয়! তবে মেয়ের একার দোষ কেন? সুশিল সমাজ ফুড়ুত করে এ্যানসার দিয়ে বসে- মেয়েরা যদি না চাইতো, পুরুষের কী সাধ্য ইটিশ-পিটিশ করার? বেয়াক্কেল কোথাকার! নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ রয়েছে, পুরুষের প্রতি নারীর নাই? নারীর দেহভোগে তোমার লুলুপ্ত মন ব্যকুল, নারীর ইচ্ছে জাগে না? তবে দোষি নারী কেন? ও আচ্ছা! ওদের স্বতিত্ব আছে, তাই? মুর্খ কাঙ্গাল কোথাকার! স্বতিত্ব পাতলা একটি পর্দায় নয়রে বেক্কেল, স্বতিত্ব তোর মনে, দেহে, আচারে, বিচারে, তোর মস্তিস্কে! নারীর যে স্বতিত্ব, পুরুষেরও তাই। 

 নারী যে ফ্লাট দালানে গেলো, এতে মোট তিন পুরুষ দায়ী।

১- তার বিবেকহীন বাপ, যে মেয়ের খবর রাখে না।

২- তার লুইচ্ছা ভাই, যে বোনের খেয়াল না রেখে রাস্তার মোড়ে অন্য মেয়েকে টিজ করায় ব্যস্ত।

৩- তার ধ্বজভঙ্গ স্বামী, যে তার যোগ্যতা প্রমাণে অক্ষম।

কারণ আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে পুরুষদের অধীনে সৃষ্টি করেছেন।

‘‘আর-রিজালু কওওয়ামু-না আলান নিসা’’

বলুন- এবার কে বেশি দোষি? 


ওরা সর্বক্ষন সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত, ঘরের কোন খবর রাখে না, খালি স্টার জলসা, জি বাংলা নিয়ে পড়ে থাকে।ওখান থেকে শিখে শিখে ক্যাঁচাল লাগায়! 

বলুন তো-

ডিসের লাইনটা কে লাগালো? বিদেশ থেকে মাসে মাসে ডিশ বিলটা কে পাঠায়? আপনি? তবে বৌকে বকে লাভ কী? বিড়ালের সামনে ভাজা মাছ, না খেয়ে বুঝি বসে থাকবে? কথা শুনে না? লজ্জা করে না বলতে? বেহেডাম্মে কত্তুন। 


নারীরা যদি এভাবে বেপর্দায় চলে, তবে কী পুরুষরা টিজ না করে থাকতে পারে? স্রষ্টা প্রদত্ত একটা আকর্ষন তো আছে নিশ্চয়? একটু আগেই তো আপনি বিড়ালের উদাহরণ দিলেন, এবার কী বলবেন? 

জ্বি, পুরুষই থাকতে পারে। যে সত্যিকার পুরুষ, সে পারে। কে পারে পারে না?

১, মানুষ রূপি বিড়াল তথা জানোয়ার।

২, তেতুল হুজুরের মত নিজেকে পৌরুষ প্রমাণিতে লালা ঝরানো মস্তিস্ক বিকৃত লোকেরা।

 কামনা-বাসনা থাকবেই, সেটাকে পশ্রই না দিয়ে সংবরণ করতে পারার নাম পুরুষত্ব, বিড়ালের মত ভাজা মাছ দেখে লাফ না মারাতেই আপনার পুরুষত্বের প্রমাণ। এটা আপনার জাতের গৌরব, এ অহংকার স্রষ্টা প্রদত্ত। এটাকেই পুরুষগিরি বলে।


 আর যদি তেতুল হ্জুরের মত সেটা না পারেন, তবে আপনার আর জানোয়ের মধ্যে কোন তফাৎ নাই। আপনি যেই, বিড়ালও সেই? 

এবার বলুন- আপনি পুরুষ নাকি বিড়াল?


চলুন- আমরা আমাদের মা-বোনদের ইসলামের সঠিক রূপরেখা শিক্ষা দিয়ে নিজেদেরকে দায়মুক্ত করি, সাথে সাথে আমাদের মা-বোনদেরও দোষমুক্ত রাখি।সমাজে ইসলামের সঠিক রূপরেখা বাস্তবায়নে সামাজিক ভাবে সচেতন হই।বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের মানুষদের মাঝে সচেতনতা আনি।সংগঠনের অধিনে যেসব মাহফিল হয়, সেখানে বক্তাদের এসব বিষয় নির্ধারিত করে দিয়ে স্কিনের মাধ্যমে নারীদের দেখানোর ব্যবস্থা করি।


(বিঃদ্রঃ গণসচেতনতার লক্ষ্যে পোস্টটি বেশি বেশি শেয়ার করুন, অবিকৃত ভাবে কপি করে নিজ টাইমলাইন থেকে প্রচার করুন, কমেন্ট বক্সে প্রিয় মানুষদের মেনশন করে দেখার সুযোগ করে দিন।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...