সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রকৃতির শিক্ষা

প্রকৃতির শিক্ষা- ‘এগিয়ে চলুন নিজের গতিতে’

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


নালার পাশবেয়ে বেড়ে উঠা অচেনা ঘাসগুলো কত সুন্দর! কত মনোরম! একটার সাথে আরেকটা ঘেঁসে কত পরিপাটি হয়ে বেড়ে উঠছে! দখিনা হাওয়ায় একসাথে দোলছে। মনে হচ্ছে কত রোমাঞ্চ এদের মাঝে, কত আনন্দেই না কাটছে এদের সাড়া-শব্দহীন ক্ষুদ্র এ জীবন। কোন এক মোহনীয় শক্তি আমাকে আঁটকে দিলো, খানিকটা থমকে গেলাম................ কিন্তু একটু গভীরে যেতেই দেখছি রাজ্যের যত নোংরামী, সব এদেরকে ঘিরে। শহরের যত আবর্জনা, পঁচা-দুর্গন্ধময় উপাদান আছে, এদের ঠিক নিচেই সেগুলির অবস্থান। কিন্তু তাতে কি? এরা এসবের কেয়ারই করছে না। এদের এত রোমাঞ্চকর সজিবতা দেখে মনে হচ্ছে না- এদের মাঝে কোন পেরেশানি আছে। না কোন দুঃখ আছে, না কোন বিফলতার ভাব! এরা ঠিক মানিয়ে নিতে শিখেছে। তারা জেনে ফেলেছে যে, তারা কোথায় আছে, সেটা ইম্পর্টেন্ট না, তাদের কাজ কি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাজ বেড়ে উঠা, এবং সেটাই তারা করছে!


তবে মানুষের এত দুশ্চিন্তার কারণ কি? প্রকৃতি তো বলেই দিচ্ছে- ‘আপনি কোথায় আছেন সেটা নয়, আপনার কাজ কি সেটাই আসল ব্যাপার। ওটাই জীবন, ওটাই বাস্তবতা, ওটা গুরুত্বপূর্ণ। জাস্ট মানিয়ে নিতে শিখুন, তারপর দেখবেন কোন কিছুই আপনার কাজের প্রতিবন্ধক নয়। বিশাক্ত নালার পাশেই বেড়ে উঠা দখিনা হাওয়ায় দোল-দোল খেলুনি ওসব উদ্ভিদের দিকেই তাকান না, ওদের গোড়ায় কিন্তু জাতির কলঙ্ক লেপ্টে আছে। কিন্তু এর বিন্দুমাত্র আঁচও আমি ওদের শরীরে আবিষ্কার করতে সক্ষম হই নি। আপনি কোথা থেকে এসছেন, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড কি, এগুলো আসলেই কোন ব্যাপার না। শুধু এটা ঠিক করুন যে, আপনার লক্ষ্য এবং আপনার কি করা উচিত? অতঃপর কাজে নেমে পড়ুন আর এগোতে থাকুন। হাঁ, মাঝে-মধ্যে ঝড়-ঝাপটা আসবেই। কিন্তু সেগুলিকে পাশকাটিয়ে ফের পুরোদ্দমে এগিয়ে চলায় তো প্রকৃতির ধর্ম। তাই নয় কী?


[মোরাল- রেললাইনের পাশদিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যে কি আবোল-তাবোল আবিষ্কার করে বসলাম- আল্লাজানে! নিজের মধ্যেই এর আমল নাই😂, আপনার মাঝে আছে কী?]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...