আমরা বসে পড়লাম। পাশ থেকে জটাচুল ওয়ালা একলোক চা এগিয়ে দিলো। লোকটার গায়ে একটা লাল পাঞ্জাবী। করিম মোল্লা একসময় লালজামা পড়তে আমাকে নিষেধ করতো, এখন দেখি তার অনেক ভক্তের গায়েই লালজামা! এ ব্যাপারটাও ঠিক বুঝলাম না। ধাঁধা! চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবছি, মোল্লাজির আঙুল ফুলে কলাগাছ হবার হেতু কিছুটা বোধয় উদ্ধার করতে পেরেছি।
কেবল চা খাচ্ছিলাম তা না, চায়ে একচুমুক দিয়ে অন্তত বিশসেকেন্টেরও বেশি কখনো এদিক, আবার কখনো ওদিক তাকাচ্ছিলাম। বেটা, চা খাবি তো, চা’ই খা। এদিক সেদিক এত তাকানোর কি আছে? না, এই সভাবটা আর গেলো না। খুব বাজে সভাব। কোন এক বিখ্যাত চা-খোর বলেছিলেন ‘এতে করে চায়ের সাথে রসায়নের ঘাটতি হয়। যদ্দরুন চায়ের যথাযত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয় পানকারিকে।’ কে যেন বলেছিলেন, এখন ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এমনটাই বলেছিলেন।
কিন্তু চায়ের সাথে রসায়নই বা কি, স্বাদের হেরফেরই বা কি, তা আজো বুঝে উঠি নি। হয়ত মানুষের ভালোলাগার রকমফেরই মুল ফ্যাক্ট। আমার এভাবেই ভালো লাগে, এভাবেই খাই। চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। আর না তাকিয়েই বা উপায় কি, করিম মোল্লার এই ঘরকে ঠিক ঘর মনে হচ্ছে না, প্রাসাদের মত লাগছে। দেয়ালের গায়ে জড়ানো রঙ-বেরঙের ঝিলিক বাতি, নানার ধরনের দামি দামি কাপড়। কবরের উপর দিলে এগুলোকে সম্ভবত ‘গিলাফ’ বলে। যেহেতু টাঙানু, তাই কাপড়ই বলতে হচ্ছে। পরিচিত-অপরিচিত বিভিন্ন মসজিদ-মাঝারের ছবিও আছে। করিম মোল্লার আসনটা তো দেখার মতই। কাটের উপর খোদাই করা চোখ ধাঁধানো হস্তশিল্প। কত টাকা খরচ হয়েছে কে জানে! অবশ্য টাকা নিয়ে করিম মোল্লার এখন টেনশন নেই, তা ভক্তের হিড়িক দেখেই বুঝা যাচ্ছে। চা প্রায় শেষ হতে হতেই হলো না। করিম মোল্লার ঠিক মাথার উপরের বিশাল সাইনবোর্ডটি পড়তে পড়তে বাকি চা টুকু শরবতে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কি ছিলো সেই সাইনবোর্ডে?
পড়ছি, শুনুন- ‘‘কুতুবুল আকতার, রাহাবারে শরায়ত ওয়াত তরিকত, মুজাদ্দেদে দীন ও মিল্লাত, মারেফতে হাকিকত, জলজলায়ে ঝুলপরি, সিলসিলায়ে হেকমতি, আওলাদে সকল শ্রেষ্ঠ অলি, যুগের মহান ইমাম, বাংলার শ্রেষ্ঠপুরুষ, ইরশাদাত-ই ছাহেবে কমজোর মহান হুজুর কেবলা মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।’’
লিখাটা পড়তে না যতক্ষণ লেগেছে, তারচে ঢের সময় ব্যয় হয়েছে করিম মোল্লার নামটা খোঁজতে। কিন্তু কই? শ্রম তো পণ্ড হলো। করিম মোল্লার নামটা তো পেলামই না, ওদিকে চা’টাও জলে গেলো। এসব কি আসলেই করিম মোল্লার জন্য ব্যবহৃত বিশেষণ? আর এগুলির মাহাত্মই বা কি? ধাঁধা!
চলবে.........
নবাবপুরের হালচাল-৬
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন