সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নবাবপুর-৬

আমরা বসে পড়লাম। পাশ থেকে জটাচুল ওয়ালা একলোক চা এগিয়ে দিলো। লোকটার গায়ে একটা লাল পাঞ্জাবী। করিম মোল্লা একসময় লালজামা পড়তে আমাকে নিষেধ করতো, এখন দেখি তার অনেক ভক্তের গায়েই লালজামা! এ ব্যাপারটাও ঠিক বুঝলাম না। ধাঁধা! চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবছি, মোল্লাজির আঙুল ফুলে কলাগাছ হবার হেতু কিছুটা বোধয় উদ্ধার করতে পেরেছি। 


কেবল চা খাচ্ছিলাম তা না, চায়ে একচুমুক দিয়ে অন্তত বিশসেকেন্টেরও বেশি কখনো এদিক, আবার কখনো ওদিক তাকাচ্ছিলাম। বেটা, চা খাবি তো, চা’ই খা। এদিক সেদিক এত তাকানোর কি আছে? না, এই সভাবটা আর গেলো না। খুব বাজে সভাব। কোন এক বিখ্যাত চা-খোর বলেছিলেন ‘এতে করে চায়ের সাথে রসায়নের ঘাটতি হয়। যদ্দরুন চায়ের যথাযত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয় পানকারিকে।’ কে যেন বলেছিলেন, এখন ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এমনটাই বলেছিলেন। 


কিন্তু চায়ের সাথে রসায়নই বা কি, স্বাদের হেরফেরই বা কি, তা আজো বুঝে উঠি নি। হয়ত মানুষের ভালোলাগার রকমফেরই মুল ফ্যাক্ট। আমার এভাবেই ভালো লাগে, এভাবেই খাই। চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। আর না তাকিয়েই বা উপায় কি, করিম মোল্লার এই ঘরকে ঠিক ঘর মনে হচ্ছে না, প্রাসাদের মত লাগছে। দেয়ালের গায়ে জড়ানো রঙ-বেরঙের ঝিলিক বাতি, নানার ধরনের দামি দামি কাপড়। কবরের উপর দিলে এগুলোকে সম্ভবত ‘গিলাফ’ বলে। যেহেতু টাঙানু, তাই কাপড়ই বলতে হচ্ছে। পরিচিত-অপরিচিত বিভিন্ন মসজিদ-মাঝারের ছবিও আছে। করিম মোল্লার আসনটা তো দেখার মতই। কাটের উপর খোদাই করা চোখ ধাঁধানো হস্তশিল্প। কত টাকা খরচ হয়েছে কে জানে! অবশ্য টাকা নিয়ে করিম মোল্লার এখন টেনশন নেই, তা ভক্তের হিড়িক দেখেই বুঝা যাচ্ছে। চা প্রায় শেষ হতে হতেই হলো না। করিম মোল্লার ঠিক মাথার উপরের বিশাল সাইনবোর্ডটি পড়তে পড়তে বাকি চা টুকু শরবতে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কি ছিলো সেই সাইনবোর্ডে?


পড়ছি, শুনুন- ‘‘কুতুবুল আকতার, রাহাবারে শরায়ত ওয়াত তরিকত, মুজাদ্দেদে দীন ও মিল্লাত, মারেফতে হাকিকত, জলজলায়ে ঝুলপরি, সিলসিলায়ে হেকমতি, আওলাদে সকল শ্রেষ্ঠ অলি, যুগের মহান ইমাম, বাংলার শ্রেষ্ঠপুরুষ, ইরশাদাত-ই ছাহেবে কমজোর মহান হুজুর কেবলা মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।’’ 


লিখাটা পড়তে না যতক্ষণ লেগেছে, তারচে ঢের সময় ব্যয় হয়েছে করিম মোল্লার নামটা খোঁজতে। কিন্তু কই? শ্রম তো পণ্ড হলো। করিম মোল্লার নামটা তো পেলামই না, ওদিকে চা’টাও জলে গেলো। এসব কি আসলেই করিম মোল্লার জন্য ব্যবহৃত বিশেষণ? আর এগুলির মাহাত্মই বা কি? ধাঁধা! 


চলবে.........


নবাবপুরের হালচাল-৬

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...