সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নবাবপুর২

সেদিন গোরস্তানের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। রাত ন’টা কি সাড়ে ন’টা বাজে। গায়ে ছিলো গাঁড় নীল রঙের নবাব পাঞ্জাবী। আকাশজুড়ে ভরা জৌৎস্না। চাঁদের হিসেবে তেরো তারিখ। মনে হচ্ছিলো আকাশবাসি কারো বিয়ে। নতুবা লক্ষ তারার ঝিলিমিলিতে আকাশসমুদ্রে ‘চান মামা’ তো আর প্রতিদিন তার পূর্ণ জোয়ার ঢালে না। মনে হচ্ছে নবযৌবন তাকে বাধ্য করছে রূপপ্রদর্শনে। ঠিক যেমনিভাবে আজ-কালকার উঠতি বয়সি ললনাদের বাধ্য করে। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এককালের অমার্জিত-অশিক্ষিত বেরসিক লোকেদের আহার্য। এখন মডার্ন যুগ। এসব খাওয়ার টাইম নাই। অত নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলে আর কিই বা হবে। গোঁড়া আস্তিকরা কেন যে স্রষ্টা বিশ্বাসি হয়ে পরকালিন মুক্তিলাভের ভুল আশায় নিয়ম-কষ্টে দিনাতিপাত করেন? ওসব স্রষ্টা-পরকাল না ভেবে নিম্নের সুরে চালিয়ে যাওয়ায় মঙ্গল-

‘দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও-দাও ফুর্তি কর

আগামীকাল বাঁচবে কিনা বলতে পারো?’ ঠিক এ কালের ‘এত ভেবে কি হবে, একদিন তো মরেই যাবো’ টাইপের স্লোগান। এ সুরে সুর মিলালে মঙ্গলগ্রহ থেকে মঙ্গল নেমে এসে ওখানেও জায়গা হয়ে যেতে পারে। সম্ভাবনা ক্ষীণ নয়, গবেষণা কিন্তু চলছে। তবু আমি এটাকে মন্দের ভালো বলি। দুষ্টুমি হোক, নষ্টামি হোক ‘জন্মিলে মরতে হবে’ অন্তত এ বিশ্বাসটা এখনো মরে যায় নি। ধর্মাবতারের ধর্মগ্রন্থের চিরসত্য এ বিশ্বাসকে তারা অন্তত বিশ্বাসের সিমানায় রেখে নিজেদের আস্তিকতার সামান্য পরিমাণ জানান হলেও দিচ্ছে। এখন আবার জাফর-মোশাররফদের যুগ। কথার মারপেঁচে ফেলে যত পারা যায় মেয়েদের দেহ-প্রদর্শনে ইন্দন যোগানোই কাজের কাজ হবে। তাতে করে জনপ্রিয়তা আর মেডেল দুটোই মেলার মেলা সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, ‘ঝোঁক বুঝে খোপ’টা মারাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 


বয়সের দোষ নাকি বাচালিয়্যত বুঝতে পারছি না। এক কথা থেকে অন্য কথায় চলে যাচ্ছি। হাঁটছিলাম ধীরপদে। একেবারে পা গুনে হাঁটা, ঘড়ির কাঁটার মত। পা জোড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নড়ছে না, পরেও না। সৃষ্টির সৃষ্টি ব্যাটারিচালিত ঘড়ি নিয়ন্ত্রিত। খোদার সৃষ্ট নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীন পা দুখানাও আজ বিশেষ নিয়মে নিয়ন্ত্রিত, তবে অনিচ্ছাকৃত। নির্দিষ্ট আয়তন মেনে মনের অজান্তেই একের পর এক সামনে এগিয়ে চলছে। খোঁড়া-লেঙড়া ব্যাথিত সম্ভবত সকলে এভাবেই হাঁটে। খেয়াল করলে দেখবেন, সামনে কোন প্রতিবন্ধক না থাকলে হাঁটার গতির ব্যতিক্রম হওয়া সত্বেও পায়ের সমান দূরত্ব বজায় রাখাটার কখনো পরিবর্তন হয় না। এখানেও দেখছি পরিচালকের দক্ষতার ত্রুটি নেই। এই যা- কি বলতে কি বলছি। এসব তো এমনি এমনি হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে। এখানে স্রষ্টা এবং স্রষ্টার নিয়স্ত্রণ বলতে কিছু নেই। তবুও প্রশ্ন জাগে- প্রাকৃতিক নিয়মটা কার নিয়মে ‘প্রাকৃতিক’ হয়ে উঠে? রাজ্যের ভাবনা এসে উঁকি দিচ্ছে। মানুষ জন্ম নেয় কেন? জন্মে আবার মরে কেন? সুফিরা বলে মৃত্যু বলতে কিছু নেয়, যা আছে, তা কেবল দেহ-আত্মার সাময়িক বৈরী ভাব। সব মিলিয়ে নিজের ভেতর একধরণের ধাঁধাঁ কাজ করছে। মৃত্যুটা আসলেই একটা ধাঁধাঁ।.........................


চলবে.........

নবাবপুরের হালচাল(২)

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...