সেদিন গোরস্তানের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। রাত ন’টা কি সাড়ে ন’টা বাজে। গায়ে ছিলো গাঁড় নীল রঙের নবাব পাঞ্জাবী। আকাশজুড়ে ভরা জৌৎস্না। চাঁদের হিসেবে তেরো তারিখ। মনে হচ্ছিলো আকাশবাসি কারো বিয়ে। নতুবা লক্ষ তারার ঝিলিমিলিতে আকাশসমুদ্রে ‘চান মামা’ তো আর প্রতিদিন তার পূর্ণ জোয়ার ঢালে না। মনে হচ্ছে নবযৌবন তাকে বাধ্য করছে রূপপ্রদর্শনে। ঠিক যেমনিভাবে আজ-কালকার উঠতি বয়সি ললনাদের বাধ্য করে। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এককালের অমার্জিত-অশিক্ষিত বেরসিক লোকেদের আহার্য। এখন মডার্ন যুগ। এসব খাওয়ার টাইম নাই। অত নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলে আর কিই বা হবে। গোঁড়া আস্তিকরা কেন যে স্রষ্টা বিশ্বাসি হয়ে পরকালিন মুক্তিলাভের ভুল আশায় নিয়ম-কষ্টে দিনাতিপাত করেন? ওসব স্রষ্টা-পরকাল না ভেবে নিম্নের সুরে চালিয়ে যাওয়ায় মঙ্গল-
‘দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও-দাও ফুর্তি কর
আগামীকাল বাঁচবে কিনা বলতে পারো?’ ঠিক এ কালের ‘এত ভেবে কি হবে, একদিন তো মরেই যাবো’ টাইপের স্লোগান। এ সুরে সুর মিলালে মঙ্গলগ্রহ থেকে মঙ্গল নেমে এসে ওখানেও জায়গা হয়ে যেতে পারে। সম্ভাবনা ক্ষীণ নয়, গবেষণা কিন্তু চলছে। তবু আমি এটাকে মন্দের ভালো বলি। দুষ্টুমি হোক, নষ্টামি হোক ‘জন্মিলে মরতে হবে’ অন্তত এ বিশ্বাসটা এখনো মরে যায় নি। ধর্মাবতারের ধর্মগ্রন্থের চিরসত্য এ বিশ্বাসকে তারা অন্তত বিশ্বাসের সিমানায় রেখে নিজেদের আস্তিকতার সামান্য পরিমাণ জানান হলেও দিচ্ছে। এখন আবার জাফর-মোশাররফদের যুগ। কথার মারপেঁচে ফেলে যত পারা যায় মেয়েদের দেহ-প্রদর্শনে ইন্দন যোগানোই কাজের কাজ হবে। তাতে করে জনপ্রিয়তা আর মেডেল দুটোই মেলার মেলা সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, ‘ঝোঁক বুঝে খোপ’টা মারাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বয়সের দোষ নাকি বাচালিয়্যত বুঝতে পারছি না। এক কথা থেকে অন্য কথায় চলে যাচ্ছি। হাঁটছিলাম ধীরপদে। একেবারে পা গুনে হাঁটা, ঘড়ির কাঁটার মত। পা জোড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নড়ছে না, পরেও না। সৃষ্টির সৃষ্টি ব্যাটারিচালিত ঘড়ি নিয়ন্ত্রিত। খোদার সৃষ্ট নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীন পা দুখানাও আজ বিশেষ নিয়মে নিয়ন্ত্রিত, তবে অনিচ্ছাকৃত। নির্দিষ্ট আয়তন মেনে মনের অজান্তেই একের পর এক সামনে এগিয়ে চলছে। খোঁড়া-লেঙড়া ব্যাথিত সম্ভবত সকলে এভাবেই হাঁটে। খেয়াল করলে দেখবেন, সামনে কোন প্রতিবন্ধক না থাকলে হাঁটার গতির ব্যতিক্রম হওয়া সত্বেও পায়ের সমান দূরত্ব বজায় রাখাটার কখনো পরিবর্তন হয় না। এখানেও দেখছি পরিচালকের দক্ষতার ত্রুটি নেই। এই যা- কি বলতে কি বলছি। এসব তো এমনি এমনি হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে। এখানে স্রষ্টা এবং স্রষ্টার নিয়স্ত্রণ বলতে কিছু নেই। তবুও প্রশ্ন জাগে- প্রাকৃতিক নিয়মটা কার নিয়মে ‘প্রাকৃতিক’ হয়ে উঠে? রাজ্যের ভাবনা এসে উঁকি দিচ্ছে। মানুষ জন্ম নেয় কেন? জন্মে আবার মরে কেন? সুফিরা বলে মৃত্যু বলতে কিছু নেয়, যা আছে, তা কেবল দেহ-আত্মার সাময়িক বৈরী ভাব। সব মিলিয়ে নিজের ভেতর একধরণের ধাঁধাঁ কাজ করছে। মৃত্যুটা আসলেই একটা ধাঁধাঁ।.........................
চলবে.........
নবাবপুরের হালচাল(২)
-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন