সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কর্মীরা কেন নিষ্ক্রিয় হয়?

অব্যক্ত বেদন- কর্মীরা কেন নিস্ক্রিয় হয়?

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


নিস্ক্রিয়। যার ক্রিয়া নাই, কর্মে যে অলস। এক কথায় ক্রিয়াহীন। উপরের শিরোনামে একটা বই দেখা হয়েছিলো বহু আগে, তবে পড়া হয়ে উঠে নি। বইটি সম্ভবত যুবনেতা আবু আজম (Syed Mohammad Abu Azam) ভায়ের লিখিত। বইটি পড়ি নি, এখানে কোন দিকটা তুলে ধরা হয়েছে, কারণটা কী দেখানো হয়েছিলো, তা মোটেও জানি না। তবে শিরোনামটি মনের কোনে ওম খোঁজে নিয়েছিলো। আজকের এ সময়ে এসে হঠাৎ সদ্য মা হারিয়ে যাওয়া মোরগছানার মত চিঁক চিঁক করে মনের ভেতর চেঁচিয়ে উঠছে বারে বারে।


‘কর্মিরা কেন নিস্ক্রিয় হয়?’ এ প্রশ্নের বহু উত্তর হতে পারে। দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে তা কয়েক রকমের হতে দেখেছি-

প্রতমতঃ হয়তো ‘মাল’ বা ‘মামা’ ভাগে কম পাওয়া। দ্বিতীয়তঃ নেতাদের তৈল মালিশের পর্যাপ্ততা থাকার পরেও উর্ধ্বতন পদে অধিষ্টিত হতে না পারা। তৃতীয়তঃ নিতান্তই সাদাসিদে জীবনের যারা প্রত্যাশী, তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামার ভয়ে কেটে পড়ে। এছাড়াও স্বার্থজনিত আরো বহু কারণ থাকতে পারে।


কিন্তু আমার এ লিখা মূলত ওদের ঘিরে নয়, আমার লিখা আমাকে ঘিরে। আরেকটু ক্লিয়ার করলে আমাদেরকে ঘিরে। কাঁচের মত স্বচ্ছ কিংবা পূর্ণিমার চাঁদের মত স্পষ্ট করে বললে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা’কে নিয়ে। বলতে গেলে বর্তমান সময়ে পূর্বের তুলনায় অধিক দুর্দান্ত প্রতাপে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণের মণিকোটায় জায়গা নেয়া এ সংগঠনটি। কিন্তু পাওয়ার হিসেব যতই খসি না কেন, ঘাটতি যদি মেপে না দেখি, তবে আমার লভ্যাংশ যে অল্পদিনেই আমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ‘টাটা বাইবাই’ জানাবে তা তো নিশ্চিতই। আমার দেখা ঘাটতি নামের সবচে বড় খালিস্থানটা ‘নিষ্ক্রিয় কর্মি’র। অতএব মনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক- ‘কর্মিরা কেন নিস্ক্রিয় হয়’? 


শুধু এই একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বের করুন। কেন’র উত্তর আর সমাধান নিয়ে ভাবুন, খোদাকি কসম সংগঠন কাল থেকেই দ্বিগুণ শক্তিশালি হয়ে উঠবে। নিজ অভিজ্ঞতা আর বহু ভাবনার পর দুয়েকটি কথা না লিখলেই নয়। 


নিস্ক্রিয় হওয়া আর ধিরে ধিরে নিস্ক্রিয় করে ফেলা, দুটা দুরকম। 

=>প্রথমতঃ কর্মির অনিহার কারণ সংগঠনকে ভালো না লাগা। এটিতে কর্মি নিজে এবং সংগঠন উভয়েই দায়ী (সংগঠন বলতে একচুয়েলি যাঁদেরকে নিয়ে সংগঠন কল্পনা করা হয়)। এটার আবার বিভিন্ন কারণ হতে পারে-

(১) আদর্শ মুখে মুখে, কাজে-কর্মে নিজেরা আদর্শিক হতে না পারা (কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশ লক্ষণীয়)। 

(২) যত্রতত্র নিজেদের পাওয়ার খাটাতে না পারা (এ ক্ষেত্রে দলের কোন হাত নেই, সব উপর ওয়ালার হাতেই। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। জ্বি না, এ উপর ওয়ালা সে উপর ওয়ালা নয়, এ উপর ওয়ালার হাতা-পা-চোখ-কান সব আছে। সে গুলোতে জোরও আছে বেশ, কমতি শুধু তাঁর/তাঁদের মন-মস্তিস্কে। ক্ষমতার জোরে তারা উপর-নিচ এক সমান দেখে। এদের সাথে পাওয়ার খাটাতে গেলেই আপনাকে টুস মেরে ফুস করে দেবে। অতএব য পলায়েত স জীবতি!) 

(৩) অন্যান্য দলের মত নেতাকে তৈলমর্দনের মাধ্যমে হাতে কড়ি না জোটা। (ইয়ে মানে মালপানির জইন্যে এরা সংগঠন করে। মাল আছে তো মামু আছে, মাল নেই তো মামু ফুড়ুত। অনেকটা রাতের অথিতির মত এরা।) এ ক্ষেত্র দুষ্কর্মি সে নিজেই দায়ী নিষ্কর্মি হওয়ার জন্যে।

এছাড়াও আরো কিছু কিছু কারণ থাকতে পারে কর্মি নিষ্কর্মি হয়ে উঠার পেছনে (এ মুহুর্তে মাথায় আসতেছে না😂)।


=>দ্বিতীয়তঃ কাউকে নিস্ক্রিয় করে তোলা।

(১) একটি নতুন দাউ কিংবা ধারালো তরবারি মাসখানেক অযত্নে ফেলে রাখুন, সেটাতে জং ধরবে, মরিচা পড়বে। আরো মাসখানেক একই অবস্থায় রাখুন, সেটার ধার ক্ষয় করবে। এভাবে আরো কিছুদিন রাখুন, ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে। বুঝলেন তো? উপযুক্ত ব্যক্তিকে তার যোগ্য কাজে না লাগানো। তৈলমর্দনকারিদের পদোন্নতি আর তৈলমুক্ত যোগ্য কর্মিকে অবহেলা-অবজ্ঞা করে দূরে দূরে রাখা, মূল্যায়ণ না করা, একজন সক্রিয় যোগ্য কর্মিকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। এটা আমার চোখের দেখা, একেবারে নাকের সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া বাস্তব সত্য। এ ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে নিজ দলের পাতি উপর ওয়ালাদের প্রভাব খাটাতেও দেখা যায়।

(২) বেশ্যাকে বেশ্যা বলে গালি দেবার পূর্বে থাপ্পরটা কোন গালে খাবে, সেটা আগে নির্ধারণ করে নেয়া উচিৎ। জারজ হওয়া সত্ত্বেও জারজ সম্ভোধনে মুগিরা রাসূল (দ.) এর সাথে চটে গিয়েছিলো। যাকে শীত গ্রাস করে নিয়েছে, সারা গায়ে যে শীতবস্ত্র মুড়িয়ে নিয়েছে, তার সামনে গিয়ে ঠিক নাক বরাবর পাখার সুইটা অন করে দিন। পালালে সে মানুষ, না পালালে সে হয়তো জিন নয়তো ফেরেস্তা। শীতার্তের সামনে আপনি হাওয়া বিতরণ নয়, অাগুন জ্বালাতে হবে। নিস্ক্রিয় কর্মিকে নিস্ক্রিয় বলে বলে চরম নিস্ক্রিয় করে দেবার কোন মানে হয় না। তাকে ডাকতে হবে, কাছে টানতে হবে। পেটে পেটে সে কোন অভিমান নিয়ে বসে আছে, তা জানতে হবে। অতঃপর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পুরানো লৌহখণ্ডকে আগুনে দিয়ে দেখুন, সে যতটুকু অক্ষয় আছে, তা নিয়ে লালে লাল হতে চাইবে। আমরা তা না করে করি কি? অমুক নিস্ক্রিয়, তমুক অকর্মা, সমুক বেকার স্লোগান বাজাতে থাকি। আর মনের অজান্তে-গোপনে সংগঠনের অকল্যাণ নিজেরাই করতে থাকি। 

(৩) আঞ্চলিকতা। এ আমার বাড়ির ছেলে, সম্পর্কে সে আমার ভাই, ভাগিনা হয়। তাকে অমুক পদে রাখতেই হবেক। অমুক নোয়াখাইল্যা, তার যত যোগ্যতা থাকে থাকুক, তার অযোগ্য হবার জন্য ঐ একটা যোগ্যতাই দায়ী, সে নোয়াখাইল্যা। সে ভইঙ্গা, তাকে কক্ষনো অমুুক পদে রাখা যাইবো না। এভাবে দরবারি মিরাস সিস্টমেই চলতে আছে। নায়েব, জিম্মাদার, মোন্তাজেম সব এক গোষ্ঠিয় হওয়া চাই। বাকিরা আজিবন পদচুম্বন করেই ধন্য হোক। জয় ঠাকুরপোর জয়..........


পাঠক সকল! জন্মদিনে আপনারা নিশ্চয় এমন একটা তিক্ত গিপ্ট আশা করেন নি। হয়তো ভেবেছিলেন পুস্পমাল্যে সজ্জিত গিপ্ট পেপারে মোড়ানো কোন কাব্যিক কথামালা প্রসব করবো। আপনারা হাততালি দিবেন, আমিও খুশিতে গদগদ হয়ে মহানায়কের ভুমিকা চিকনা হাসি ফুটাবো। কিন্তু কি করবো বলুন, পূণ্য কামায়ের চেয়ে যে পাপ মোচন করাই শ্রেয়। দুটাকা দানের চেয়ে এক টাকার ঋণ পরিশোধকে উত্তম বলা হয়েছে। আমি তাই করার চেষ্টা করলাম, বাদ বাকি কর্তাদের হাতে। হয়তো আমার লেখা থেকে ভালো কিছু খোঁজে নেবে, নয়তো আমার চৌদ্দগুষ্ঠি তুলে গালাগাল করবে। কুচ পরোয়া নেহী, যা দেখেছি, যা ঘটেছে, তাই লিখেছি। যা লিখেছি, স্রেপ ভালোবাসা থেকে লিখেছি, আল্লাহ-রাসূলের ওয়াস্তে লিখেছি।


বিজ্ঞরা ভেবে দেখুক, হিংসুকরা আমার পিছে লাগুক। ভালোবাসি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনাকে। ভালোবাসি বলেই মাথা ঘামানো। ভালোবাসি বলেই অচেতন মনে চেতনরেখার উদ্ভব। ছাত্রসেনা এগিয়ে যাক, ছাত্রসেনা জিন্দাবাদ। 


----------------------শুভ জন্মদিন-----------------------

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...