স্বাভাবিক, সব স্বাভাবিক
-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
পানসে হয়ে গেছি। গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে, মানুষ মরছে, মেরে চলেছে, তবু প্রতিবাদ নেই, অনুযোগ-অভিযোগ কোনটাই নেই। এ যেন মানিয়ে নিতে শেখা! ভাবখানা এই- এই আর নতুন কি, প্রতিদিনই তো ঘটছে। স্বাভাবিক। এভাবে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু মানুষ ফেইসবুকে নিন্দাজ্ঞাপন করে, ওটুকুই। এরচে বেশি কিছু না। কাল কিংবা পরশু আমিও হয়তো গুম হবো, পাওয়া যাবে না আমায়। কিছু মানুষ ফেইসবুকে নিন্দাজ্ঞাপন করবে- ‘আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি’! ওদিকে আমি আত্মাজগৎ থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি মেরে মেরে ওসব নিন্দাবাণী পড়তে থাকবো! বলবো- ছি! তোদের নিন্দার মুখে আমি হিসু করি! সত্যি, ‘নিন্দা জানাচ্ছি’ একটি তাচ্ছিল্য বাক্যে পরিণত হয়েছে। না, আমায় নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় হবে না। মন্ত্রীপরিষদের কেউ খবর নিবে না। কিভাবে হবে? নিবে কিভাবে? আমি তো বড় ধরণের কোন নাস্তিক না। বড়’র কথা বাদ দেন, ছোটখাটোও না। নিম্নশ্রেণির একজন লেখক মাত্র, তাও ইসলামী ভাবধারার। এভাবে কেউ লেখক, কেউ বক্তা, কেউবা সাংবাদিক। অথবা একেবারে স্বাধারণ মানুষ(গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যার বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে), তারা নিত্য মরেই চলেছে। তাদের একদল মেরেই চলেছে। কোন বিচার নেই। আদালত, কোট-কাচারি কোনটাই নেই। আরে, সব স্বাভাবিক যে.......!
দুয়েকজন(খুব কাছের যারা) থানায় জিডি করবে, পুলিশ মহাশয় সান্ত্বনাবাণী শোনাবেন- ‘চিন্তা করবেন না, বিষয়টা আমরা দেখছি’। হাহাহা! আলবৎ সত্যকথা। দেখছেনই তো, আমার গুম-খুনটা যে পুলিশি পাহারার মধ্য দিয়েই ঘটছে। ওনারা তো সব স্বচক্ষেই দেখছেন! একসময় পরিবার ও কাছের মানুষেরা বিরক্ত হয়ে আর থানায় দৌড়াদৌড়ি করবে না। করে লাভ কি, লাউ যে কদুই থেকে যাচ্ছে। আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, সব স্বাভাবিক! হয়তো বা দুয়েকটা মিছিল-মিটিংও হতে পারে! ব্যস ওটুকুই, তারপর সবাই আবার আগের কাহিণীতে ফিরে যাবে। বছরে শহীদ দিবস কিংবা গুম দিবসটা শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে, তাও কয়েক বছর। বাকি দিনগুলিতে আর আমার নাম উচ্চারণ করার মত মানুষ থাকবে না। থাকবে কিভাবে, আমরা যে বেশ মানিয়ে নিতে শিখেছি- সব আবার আগের ন্যায় স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। স্বাভাবিক......... এভাবেই ঘটে চলেছে। এটা এখন খুবই স্বাভাবিক! কিন্তু আর কতদিন? দেখতে দেখতে যে বড্ড ক্লান্ত! ঐ যে পানসে হয়ে গেছি, কোনকিছুতেই আর ভেতর থেকে প্রতিবাদ আসে না। মালিক! উঠিয়ে নাও।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন