সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ছন্দের ক্রন্দন

ছন্দের ক্রন্দন                  

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


আছি বেশ দ্বন্দ্বে, বাঁধা পড়ে ছন্দে

কবিতার মৃত্যুতে, হিয়া মোর কান্দে।


কবিতা! 

পাল্টেছে ছবিটা।

একদা সুর ছিলো ঠিক বাঁশরির মত

পরতে মিল ছিলো নদ-ঢেউয়ের মত


প্রেম ছিলো, ফ্রেম ছিলো

নিরেট গাঁথুনি ছিলো- আজ তা নেই

অসুর দেখে দেখে

হিয়া মোর রেগে-মেগে- হাঁরিয়েছে খেই।


আবৃত্তি?

সে ধাঁচ নেই, সুর-স্বরে বাঁধা নেই

যাচ্ছে তাই লিখে গেলাম

যা খুশি বকে গেলাম। ব্যস, হলো-এই!

হয়ে গেলো কবিতা-

হায়! মুছে গেলো ছবিটা।


ছন্দ? হাঁরা এক সভ্যতা।

গাদা-গাদা পুস্তকে, ভরে গেছে মেলাটা।

মনে তবু দ্বন্দ্ব, কোথা গেলো ছন্দ

আনন্দ মন নিয়ে, কিনি বই মেলা গিয়ে

কবিতা পেয়েছি বেশ, পেলাম না ছন্দ

অসুরের ধাপটে আজ সুর-মুখ বন্ধ।


ওরা কবি হয়েছে।

            লকবও যে কিনেছে।

                               দিয়েছে কী জানো?

কিছু অসুরকে সুর বলে

বোকা প্রেমিকের গলে

                              দিয়েছে তা চালে-

                              ছলে-বলে-কৌশলে।


শুনো ভাই- গদ্য সে গদ্যই।

কোন শালা সুর বলে এঁকে দেয় পদ্যেই?

নাম দিলো ছন্দ!

সে নাম কী জানো? নাম বেশ-বাহ্

                           গদ্যছন্দ! হা হা হা!


ওহে চালাক বাঙালী!

হে গো ছন্দপ্রেমিক! দাও দেখি বলে

মিশে গেলে খাওয়া যায় ধান আর চালে?

অ সে খায় কোন মালে? 

                        পাগলে? না ছাগলে?


তালে মাল আছে ভাই, কান্নায় হায় হায়!

বৃষ্টিতে রিম-ঝিম, কৃষ্টিতে ঝিম-ঝিম

বজ্রে দ্রাম দ্রাম ছন্দ ঝাড়ে-

ও সে ছন্দকে লুটে খায় আধুনিক ষাঁড়ে।

ওরা ষাঁড়, ওরা ভাঁড়

সত্যকে গিলে খায়

নিজমতো পাল্টায়-

                             বিধান সভায়।


ছুটির ঐ ঘণ্টা- টুন-টুন-টুন

নুপুরের রিনি-ঝিনি- ঝুন-ঝুন-ঝুন

টিনে ঐ ঝড়ে জল- ঝুম-ঝুম-ঝুম

বিজলী চমকায়- দ্রুম-দ্রুম-দ্রুম

নদীর ঐ স্রোত বয়- কল-কল-কল

বর্ষায় বিলে পানি- ছল-ছল-ছল

তবে বল। ওরে বল-

তাল ফেলে বেতালে যায় কোন সে ছাগল?


সুরপুরে হাহাকার!

আধুনিক গবিরা করে দিলো ছারখার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...