সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সালাম

মাথায় টুপি পড়ে রেললাইন ধরে একাকি হেঁটে চলেছে নির্জন। নির্জন মানে জনহীন। নামের সাথে কাজের অদ্ভুত মিল তার। বেশিরভাগ সময় সে এভাবেই হাঁটে। একা একা৷ 


হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। শহুরে পরিবেশ ছেড়ে প্রায় গ্রাম্য এক পরিবেশে। রাস্তার দুধারে বিলের পর বিল৷ সবুজের সমারোহ। সবুজ সমুদ্র বলা চলে৷ সামনে বিশাল বেড়ার পাল। এ যাবৎ এত বেড়া একসাথে কপালের চোখে দেখে নি সে।


মাঝের সময়টাতে অনেকের সাথে সালাম বিনিময় হলো। বিনিময় বলতে সে কেবল নিয়েই চলেছে, দিয়েছে কম। তাই স্মার্ট ফোনের স্কিনটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। নিজের দাড়িগোঁফগুলো বামহাতে হালকা নাড়াছাড়া করছে আর মনে মনে ভাবছে, সে কি আসলেই বড় হয়ে গেছে? তাকে কি হুজুর হুজুর লাগছে? 


না হয় অপরিচিত অনেকে তাকে অবলীলায় সালাম দিচ্ছে কেন? বড়-ছোট আর উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরের সালাম বিনিময়ের সংস্কৃতি যে এদেশে অনুপস্থিত। তবে কি সেটাই সত্য যে, সে বড়ো হয়ে গেছে? নাকি অন্য কারণ? কে জানে! সঠিক নির্ণয় করতে বেগ পেতে হচ্ছে আজকাল।


ভাবতেই কেমন জানি লাগছে তার। একসময় বড়দের প্রতি জেলাস ফিল করতো সে। বড়দের সালাম দিতে হয়, তাকে কেউ দেয় না বলে। অদ্ভুতভাবে সে এখন জেলাস ফিল করছে উল্টো কারণে। সে কেনই বা বড়ো হলো, কেনই বা সকলকে নির্দিধায় সালাম দেবার মত সৎসাহস হাঁরিয়ে ফেললো?


নিজেকে কেমন জানি ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে তার। কোন এক অদৃশ্য শক্তি যাকে-তাকে সালাম দিতে আঁটকে দিচ্ছে তাকে। কি অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারসেপার! দুটানায় পড়ে বারংবার খেল হাঁরিয়ে ফেলার মত অবস্থা।


নবির কথা মনে পড়ছে। হাদিসমতে তিনি রোজ সকালে বাজারের দিকে যেতেন৷ বাজারে মানুষ থাকে। জনচলাচল বেশি। তাই মানুষদের সালাম দেবার লিপ্সা সামলাতে পারতেন না। ছোটে যেতেন। সালাম দিতেন। কুশল বিনিময় করতেন। বাচ্চাদের সাথে কম্পিটিশনে যাবার কথাও স্পষ্ট লেখা আছে ‘মেশকাত’ নামক কিতাবটিতে। কিন্তু এতসব জানা সত্ত্বেও কোন জিনিষটা তাকে বাধা দিচ্ছে? কোন সে বিশেষ কারণ? উন্মুক্ত আকাশপানে তাকিয়ে কেবল সেটাই ভেবে চলেছে সে..........................


পুনশ্চঃ আমাদের মাঝে সালামের প্রচলন দিনদিন কমে চলেছে। অপরের শান্তি যেখানে চক্ষুশূল সেখানে শান্তিকামনা দূর কি বাত! এ সংস্কৃতি কিভাবে ফেরানো যায়, মন্তব্য করুন।


কেউ সালাম দিলে জাস্ট ‘ওয়ালাইকুম আস্সালাম’ বলুন। উল্টো সালাম দিতে যাবেন না। কেননা ‘আস্সালামু আলাইকুম’ আর ‘ওয়ালাইকুম আস্সালাম’ এর অর্থ একই- ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...