সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লাদুনিয়্যাতের বিস্ময়ঃ খাজা চৌহরভি (রহ.)

--মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভি (রাহ.)। এলমে লাদুনির সাথে জড়িত একটি নাম। কুরআনে এসেছে ‘আনআমতা আলাইহিম’। অর্থাৎ তিনি(আল্লাহ) তাঁদেরকে নেয়ামত দান করেছেন। আর খোদা তায়ালা যাদেরকে বিশেষ নেয়ামত দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাদেরই একজন হযরত আবদুর রহমান চৌহরভি (রাহ.)। 


জন্মেছিলেন ১৮৪৩ খ্রীষ্টাব্দে পাকিস্তানের এটোবাদ জেলার হরিপুরে। ছোটখাটো গড়নের অনাড়ম্বর, স্বল্পভাষী, স্বল্পভোজী, মিষ্টভাষী এ ব্যক্তি বাল্যকালেই পিতৃহারা হন। বয়স তখন মাত্র আট। মগ্ন হয়ে পড়েন কঠোর সাধনে। একাকি নির্জনে ধ্যানমগ্ন হয়ে অবিরত সাধনায় লিপ্ত হলেন। ধীরে ধীরে কামালিয়তের দিকে এগোতে থাকা এ মহাপুরুষ একসময় তৎকালিন পীরে কামেল আখনু শাহের দরবারে গিয়েছিলেন বায়াত গ্রহণ করতে। কিন্তু আখনু শাহ (রাহ.) বিরল ক্ষমতাধর এ বালককে বায়াত না করিয়ে বললেন যে, আপনার পীর নিজেই আপনাকে বায়াত করাতে যথাস্থানে হাজির হবেন। আখনু শাহের কথামতোই একটা সময় চৌহরভি (রাহ.) এর রিয়াজতের স্থানে এসে ওনাকে বায়াত গ্রহণ করান বিখ্যাত সুফিসাধক হযরত ইয়াকুব শাহ গিনছাতরি (রাহ.)। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমনটি বলেছিলেন-

‘আল্লাহকে যে পায়তে চায় হযরতকে ভালোবেসে

আরশ-কুরসি লৌহ-কলম না চাহিতে পেয়েছে সে।’ একইভাবে খোদারপ্রেমে মশগুল হওয়ায় এ মহান ব্যক্তিকে বাইয়াত করাতে স্বয়ং পীর এসে হাজির!


গাউছিয়ত, কুতুবিয়ত, আবদালিয়তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত সময়ের বিস্ময় এ ব্যক্তির দরবারে ছিলো সার্বক্ষণিকভাবে আউলিয়াদের সমাবেশ। জীবনে অসংখ্যবার খাজা খিজির (আ.) এর সাক্ষাতের পাশাপাশি পেয়েছিলেন বহুবার প্রিয়নবী (দ.) এর দর্শন। একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও দিতে পারতেন বিভিন্ন জঠিল মাসআলার সহজ সমাধান। এলমে দ্বীনের চর্চার জন্য তিনি করেছিলেন একাদিক মাদরাসা নির্মানও। যুগশ্রেষ্ঠ এ মনীষীর সবচেয়ে বিস্ময়কর সৃষ্টি হচ্ছে দরুদ শরীফের উপর আরবি ভাষায় লিখিত ত্রিশখন্ড বিশিষ্ট কিতাব- ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল (দ.)’। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন ছাড়াই এমন দ্বিতীয় বিস্ময় পৃথিবীতে আছে কিনা তা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমরাও এ কিতাবের ভাষাশৈলির চমৎকারিত্ব এবং বিন্যাসের নিপুনতা দেখে অবাক হয়ে যান। প্রতিখন্ডের শুরু এবং শেষ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা দিয়ে, আর মাঝের অংশজুড়ে নানারূপে লিখেছেন মাহবুবে খোদা (দ.) তথা নবীজির গুণকীর্তন। এ বিশাল গ্রন্থ রচনায় প্রায় তেরো বছর সময় লাগলেও এ গ্রন্থের কথা তাঁর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত কেউ জানতেন না। এ থেকেই বুঝা যায় তিনি কতোটা প্রচারবিমুখ ব্যক্তি ছিলেন।


সময়টা ছিলো ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের পহেলা জিলহজ। একদিকে আপন মুরিদ হযরত সৈয়দ আহমদ সিরিকোটি (রাহ.)কে নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন কিতাবটি ছাপানোর জন্য, অন্যদিকে খবর এলো খাজা চৌহরভি (রাহ.) ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, আত্মপ্রচার হবার আগেই আত্মগোপনের পথ বেছে নিলেন! বর্তমান সময়ের গাউছে জামানদের(?) এডবেটাইস কিন্তু টিভি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সুতরাং, সাধু সাবধান!


পুনশ্চঃ আজ হুজুরের উরস মোবারক। সম্ভব হলে নিজ নিজ উদ্যোগে হুজুরের নামে ফাতেহা দিতে পারেন৷ এতে আপনিই লাভবান হবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...