সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সে ভাষণকে ছন্দে বাঁধবার ব্যর্থ প্রয়াস...
শেষ সম্ভাষ
(বিদায় হজের ভাষণ)
✏মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
... শূন্যে রবি চমকায়
উটের পৃষ্টে চড়ে নবিরাজ
পৌঁছিলো আরাফায়।
দলে দলে এলো সাহাবা সকল
আরাফার ময়দান
সামনে দাঁড়ায়ে আছে মহাজন
শোনাতে সমতা-গান।
লক্ষ লক্ষ অনুচর সবে
কান পেতে শুনে রয়
দুইজাহানের বাদশাহ নবী
কোন কোন কথা কয়।
দুনিয়ার রবি দুপারের নবি
ভাষণ করল শুরু-
‘শোন ওরে শোন সাহাবা সকল
শুনে রাখো জল-তরু।
এবারের পরে হবে না হয়ত
সফর হজের পথে
হয়ত মিলিত হবো নারে ফের
আরবের আরাফাতে।
এ নগর যথা মহামহিয়ান
তেমনি সকলে জেনো-
একে-অপরের ধন-মান-তন
নিরাপদ রেখো হেন।
বিপথগামীতা-পথভ্রষ্টটা
নিয়ো নাকো বেছে কভু
অচিরে হিসেব করবে গ্রহণ
জগৎস্রষ্টা প্রভু।
যুগে যুগে বহু জাতির উপরে
ধ্বংস নেমেছে এই-
জাত-মান তুলে বিবাদ-দুয়ারে
কড়া নেড়েছিলো যেই।
পুরুষ-নারিতে ভেদাভেদ করে
চলো নাকো দিবারাত
পুরুষ যেভাবে মানুষ জানিও
নারিরাও সে সে জাত
একে অপরের অধিকার দিয়ো,
হরণ করো না ভুলে
দাসদাসি সবে আপন ভাবিও
জন্মেছে নরকুলে।
অন্ন-বস্ত্র-বাসের অভাবে
পড়ে যদি মরে তারা
মানুষ বলিয়া মানুষকে আর
মানুষ ডাকিবে কারা?
ওরে, শোন যত সাহাবি!
আামার বিদায়ের অন্তে কভু
আসবে না কোন নবি।
নামাজ-রোজা ইবাদাত যত
করিও প্রেমের দিলে
গরিব-দুখিরে যাকাত বিলায়ো
হৃদয়মাজার খোলে।
করো যদি হজ আনত চিত্তে,
পাবে জান্নাত প্রীতি
নীতি শাসকের অনুগত হও,
গাও যদি তার গীতি।
কৃতদাস হোক, হোকনা অধম,
নীতির পুজারি হলে
অবাধ্য তার হওয়া যাবে না
কোনদিন কোন কালে।
বংশে বংশে কংসরীতির
বিনাস ঘোষিলাম এই
সুদ-ঘোষ যত অনাচারি চাল
সবে করিলাম হেয়্।
অমীয় বাণী শোনাই-
মুসলিম নামে আছে যত ভবে
সকলেই ভাই ভাই।
ধন যদি হয় অন্যের তবে
অনুমতি দরকার
নতুবা কারো সম্পদ-মাঝে
হাত নয় নোয়াবার।
শিরক করো না কভু
জগতের মাঝে একটি আল্লাহ,
এক সকলের প্রভু।
থেকো সবে সদা সত্যের পথে
অসত্য থেকে বেছে
খুন-খারাবি জেনা-ব্যভিচারে
লিপ্ত হয়ো না যেচে।
রেখে গেলাম এ হাদিস-কুরান
সুপথ পাবার তরে
মেনে চলো যদি বিধান দুখান
অভ্রষ্ট চিরতরে।
শোনে নি যারা এ পূণ্য বয়ান,
পায় নি এ দাওয়াত
প্রতিটি দুয়ারে করিও তোমরা
এ বাণীর করাঘাত।
সৃষ্টির যত নারি-পুরুষ সব
এক আদমে গড়া
তাকওয়া বিনে উত্তম-অধমে
নাই কোন ভাগ-ফাড়া।
আমার ব্যাপারে জিগাবে হাশরে
আল্লাহ দয়াময়
কী দিবে জবাব আমার স্বভাব
কীরূপ সে পরিচয়?’
উপস্থিত সকলে বলে-
‘অর্পিত সে আমানত খোদার
দানিয়াছেন সকলে।’
আপ্লুত মনে নবিকুল রাজ
তাকায় উর্ধ্বলোকে
ডাক দিয়ে কয়- ‘হে গো দয়াময়
শ্রবণে লও আজিকে
আমারপরে যা করেছ ন্যস্ত
পালন করেছি সব
সাক্ষী রইল উপস্থিত এ
জনতার কলরব।’
সহসা এলো ঐ ঐশীবাণী
কুরানের পয়গাম-
‘সকল নেয়ামত পূর্ণ আজি,
পূর্ণ দীন-ইসলাম।’
[২১/০৮/১৮, মঙলবার, রাত ৩ টা।]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন