সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চাঁদ কী বলছে?

দেখেছি আর কত? অদেখায় রয়ে গেছে সব। চলুন দেখি, চাঁদ কী বলছে...

✏মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


চাঁদ তো দেখেছেন? হ্যাঁ, দেখেছেন। আমি তো এখনো দেখছি। পূর্ণচাঁদ। ঝলঝল করছে। তার আলোয় এইমাত্র একটা মশাও মারলাম৷ দেখুন না, তার ছোঁয়ায় মেঘগুলোও কীরূপ লাবণ্যময় হয়ে উঠেছে! মোজাইক পাথরের মত করে আকাশটাকে কীরূপ সাজিয়ে তুলেছে! দেখে বড়ো ঈর্ষা জাগছে, জানেন? কিন্তু কতক্ষণ থাকে এ আলো? কদিন থাকে এ পূর্ণতা? দুদিন পরে দেখবেন চাঁদটা ছোট হয়ে গেছে। কদিন পর আরো ছোট। একসময় দেখাই যায় না। যত্তসব ঢঙ!


আচ্ছা, এটা কোনো কথা? এতবড় চাঁদটা ক্রমে এত ছোট হয়ে যাবে? তার লাবণ্যতা দেখা যাবে না? ধুর... যাক গে, তাতে তো সমস্যাই নাই দেখছি। এর পরে তো আবার উঠবে। একদম কাঁচির মত চিকন হয়ে৷ তারপর ধীরে ধীরে চৌদ্দদিনের মাথায় আবার আজকের মত পূর্ণ হয়ে যাবে৷ যৌবনের লীলা দেখাবে। আপাতত ঠিক মানুষের জীবনপরিক্রমার মতই মনে হচ্ছে। মানুষ জন্মে। ধীরে ধীরে বড় হয়। একসময় পূর্ণতা পায়। আবার ক্ষয় হতে থাকে৷ একসময় মরেও যায়। কিন্তু চাঁদের লীলা এখানেই শেষ নয়। সে আজ অন্য লীলা দেখাচ্ছে। অন্যকিছু দেখাচ্ছে।


বিজ্ঞানীরা আমার এ কথায় অবজেকশন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে। তারা যুক্তি প্রমাণসহ এটা বুঝাতে অগ্রসর হচ্ছে যে, চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি নাই। আঁকারের হেরফের নাই। সে সবসময় একই আকৃতির একই গড়নের হয়ে থাকে। অর্থাৎ তার আকৃতির পরিবর্তন হয় না। আমরা চাঁদের যে হ্রাসবৃদ্ধি দেখি, তা কেবল সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের অসম অবস্থানের কারণে হয়ে থাকে। ঘূর্ণ্যমান বিশেষ প্রক্রিয়ার কারণে এমনটা দেখা যায়।


কিন্তু মশাই, এ তথ্য আবিষ্কারের ইতিহাস আর কতদূর? এ সত্যের আগের বিশ্বাসকৃত চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধির সত্যের মৃত্যুও কদিনের? বিনাবাক্যে এটা বলবেন যে, এই তো সেদিনেরই কথা। সাধারণ মানুষ ছাড়াও বড়ো বড়ো জ্ঞানীরা পর্যন্ত বলতো চাঁদ বড়ো আর ছোট হয়। শুধু তখন নয়, এখনো মানুষ বলে। কথায় কথায় বলে। জ্ঞানীরাও বলে। এ নিয়ে কত কেচ্ছা-কাহিণী আজ অবদি সমাজে চলমানও। কিন্তু শেষমেষ কী ঘটল? সব মিথ্যে। কেন ঘটল? কারণ মানুষ যা দেখে, তাই বিশ্বাস করে। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষ যা দেখছে, তার সবটা সত্য নয়। 


কিন্তু আমার সম্মানিত বিজ্ঞানমুখী নাস্তিক ভায়েরা সত্য সত্য করতে গিয়ে যুগযুগ ধরে আসল সত্যকেই অস্বীকার করে আসছে। এই তো, একটু পেছন ফিরে গেলে দিখবেন- তাদের পিতার পিতা, তারও পিতা যারা ছিলেন, তারাও বিশ্বাস করত চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। কেননা তারা ততক্ষণ পর্যন্ত সেটাই দেখে এসেছে। আর তারা যা দেখে, সেটাতেই বিশ্বাস করবে, অদেখায় তারা যুগযুগ ধরে অবিশ্বাসী৷ তবে আপনাদের সে বিশ্বাস টিকলো কই? আজ তো ঠিকই বলছেন যে, চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি নেই। কেউ যদি এখন বলে যে, চাঁদ বড়ো হচ্ছে, ছোট হচ্ছে, বিজ্ঞানের দেয়া ধারকরা অথবা উন্নতপ্রযুক্তির যন্ত্রের সাহায্যে দেখা এ তথ্যকে কেন্দ্র করে কিন্তু তার কথা ফু দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। অথচ আপনি/আপনারা খালি চোখে স্পষ্টই দেখছেন যে, চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, প্রতিনিয়ত আপনারা যা দেখে চলেছেন, তাতেই আজ আপনারা অবিশ্বাস করছেন! কারণ এর চেয়ে বড় সত্যিটা আজ আবিষ্কৃত। 


মুল কথা এটাই যে, আমরা যা দেখি, তা সবসময় সত্য নয়। আমরা দেখি এক, মুলে ঘটে আরেক। আর যা দেখি তার চেয়েও বড়ো সত্যি লুকিয়ে থাকে এর পেছনে। যা আমাদের দেখা সত্যের চেয়ে বহু হাজারগুণ বড়ো সত্য। যা হাজারবছরের লালণ করা সত্যকেও মুহূর্তে মিথ্যা বানিয়ে দেয়। এর চেয়েও মজার ঘটনা হলো, চাঁদ উঠেও না, ডুবেও না৷ সূর্যের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটে। অথচ আমরা দেখি, চাঁদ-সূর্য উঠছেও, ডুবছেও৷ বুঝার সুবিধার্থে মুখে মুখে আজ অবদি এমনটা বলিও।


সবমিলিয়ে এটা প্রমাণিত যে, মানুষ যা দেখে, যা জানে, তা সবসময় সত্য হয় না। কারণ মানুষ সসীম। মানুষের জানার ও দেখার সীমাবদ্ধতা আছে। সৃষ্টিকর্তা অসীম। তার জানা ও দেখার সীমানা নেই। তাকে না দেখেই বিশ্বাস করতে হয়৷ চাঁদের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, কিছু সত্য দেখতে নেই, বিশ্বাস করতে হয়। কিছু সত্যে যুক্তি খাটে না, কারণ সত্য’ যুক্তির উর্ধ্বে। কেননা যু্ক্তি বলবে- চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি হয়, সত্য বলছে- তা কখনোই ঘটে না। আর যুক্তি এখানেই সত্যের কাছে পরাজিত৷ চরম অসহায়। 


সৃষ্টিকর্তা চাঁদের মত না। সূর্যের মতও না। অন্য কিছুর মতও না৷ তার উদয় আর অস্ত নেই। তাকে দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়। কারণ তিনি সত্যের চেয়ে সত্য। সবচে বড়ো সত্য। কুরআন তার পরিচয় এভাবে দিচ্ছে- “তিন একক তথা অদ্বিতীয়। চাঁদ আলোর জন্য সূর্যের প্রতি মুখাপেক্ষী, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল। তাঁর জন্ম-মৃত্যু নেই। তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের একচ্ছত্র অধিপতি।


ভাবুন- দুনিয়ার সামান্য রাজা-বাদশার হদিস পেতে যদি আপনার ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা হয়, তবে আপনি কিনা চাচ্ছেন- সমগ্র সৃষ্টির যিনি অধিপতি, তার হদিস খালি চোখেই পেয়ে যাবেন? বেআক্কেল...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...