সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গহুরালির নামাজ

গহুর আলির নামাজ

-মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


ঘুম ঘুম চোখে উঠলো গহুর

মসজিদ যাবে বলে

পার হলো তার আশিটি বছর

একই রুটিনে চলে।


ঘুমের ঘোরে সে পড়লো নামাজ

কি জানি কী সার মেখে

উপরে বিধাতা মননের শ্রোতা

হাসে তাই দেখে দেখে।


সকাল-সন্ধ্যা মাগরিব এশা

হয় নাকো কাযা কভু

কপালে বসিছে সজিদার দাগ

পেলো না খোদারে তবু।


উদাস মননে গহুরালি তাই

ভাবে আজ নিরালায়

জনমের ঘোর এ নামাজ মোর

বৃথা গেলো হায় হায়!


সজিদার দাগ কপালে লইয়া

গৌরবে মরি কত

অথচ আমার উদর ভর্তি

হারাম খাবারে যত।


সুদ-ঘোষ আর চোগলখুরিতে

কেটেছে জনম সারা

দোকানের পাঠে এই মুখ হতে

মরাও পায় নি ছাড়া।


গুনে গুনে সব করেছি সিজদা

নামাজি বলেছে লোকে

তৃপ্ত মননে ঢোকর গিলেছি

গদগদ বেশ সুখে।


আজ বুঝিলাম হায়

সিজদা সকল পাকাতে মেরেছি

করি নি খোদার পা’য়।


ফজর, জোহর, মাগরেবাসর

সময় গুনেছি শত

করি নি হিসাব খোদার প্রেমে কি

ছিলেম সিজদারত?


কোন গেরামের কার কী স্বভাব

কার কাছে পাই কত

নামাজে দাঁড়ায়ে এসব হিসাব

কষে গেছি অবিরত।


কার পুতে কবে করেছে গোনাহ

কত পাপী কোন মেয়ে

জায়নামাজের পাক গালিচায়

লিখা আছে দেখ্ চেয়ে।


নামাজ পড়েছি ব্যায়াম হয়েছে

হয় নি কো ইবাদাত

জনমের দুআ হয়ে গেছে ধোঁয়া

পাই নি কখনো স্বাদ।


অগুনতি এই গহুর আলিরা

গুনে চলে আজ বসে

কার কত গুণ, দোষ কত কার

প্রচার করার আশে।


খোদকে ভাবিছে মস্ত নামাজি

খোদাভিরু এক বড়ো

নামাজের জোরে দম্ভ ছুটেছে

রিয়ারা হয়েছে জড়ো।


ওরে     নামাজ সে এক পরশ পাথর

            কে পেয়েছে তারে কবে

            নামাজ লয়ে তবু জোয়ান-বুড়া

            গৌরবে মরে সবে


            নবির নামাজে খোদা দেখা যায়

            আলিও দেখেছে তাঁরে

তোর    নামাজ-চোখেতে দুনিয়ার ধন

     এ    নামাজ শেখালো কে রে?


শোন তবে শোন নামাজি ও জন!

নামাজ পড়ার তরে

মুয়াজ্জিন ঐ ডাকে নি নামাজে

শয়তানে ডেকেছে তোরে।


বন্ধু! 

অযথা লিখি নি কালাম

নামবাজি বিনে নামাজি লোকের

কদমে লক্ষ সালাম।


(১অক্টুবর-১৮, সোমবার, সকাল ৮টা,

তালুকদার ভবন, শ্যামলি আবাসিক)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...