মন তুই রাসুলপ্রেমে দাঁড়িয়ে যা
—মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
হযরত হাস্সান বিন সাবিত। সাহাবিয়ে রাসুল। এটুকুন না। পরিচিত আরো আছে। ঢের। কবি ছিলেন। শায়েরে রাসুল। আবৃত্তিশিল্পীও বটে। কবিতা রচনা করতেন। সাথে আবৃত্তি। মদিনার বাদশার সামনে। তাঁরই প্রশংসাগাথা। তাঁরই শান-মান। কবিতার ভাষায়। ভাবা যায়? রাসুলে অতুল মিম্বর বানিয়ে দিলেন। তাঁর হাস্সানের জন্য। মসজিদে নববি শরিফে। সেখানটাই দাঁড়িয়ে রাসুলের শান গায়বেন। সুবহানাল্লাহ!
একদা তিনি দাঁড়ালেন। সেই মিস্বরে। যেটি রাসুলে দোজাহাঁ স্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহর গুণগান শুরু হল। আহা! সৃষ্টির সেরার গুণগান। অদ্বিতীয় স্রষ্টার অদ্বিতীয় সৃষ্টি ‘নুরে মুহাস্মদি’র গুণগান। তিনি গেয়ে চলেছেন। রাসুলুল্লাহ শোনে চলেছেন। সে কত প্রেম, কত গভীরের পঙক্তিমালা। কে বা রচে আর কে বা শোনে? দর্শনেদ্রিয় বন্ধ করে একটু ভাবুন। প্রেমশূন্য হৃদয়েও ঝড় বয়ে যাবে।
মরু দুলাল খুশি হলেন। তৃপ্ত হলেন। তুষ্ট নয়, সন্তুষ্ট। হাস্সান বিন সাবিতের উপর। দুআ করতে লাগলেন, ‘আল্লাহুম্মা আই ইয়াদাহু বিরুহিল কুদুস।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি হাস্সানকে সাহায্য কর। রুহে কুদুস-জিবরাইলের মাধ্যমে।’ দুআ করে ক্ষান্ত না। ঘোষণা দিলেন। নিশ্চিত ভাবে। নবিদের দুআ মকবুল। এটাও এ কিস্সা থেকে প্রমানিত। কেউ সন্দেহ পোষণ করলে সেই দায়-দায়ীত্ব তার উপর। হাদিস কিন্তু এটাই বলে- ‘ইন্নাল্লাহা তায়ালা ইউআইয়িদু হাস্সানা বিরুহিল কুদুসি মা ইউফাখিরু আও ইনাফিহু আনির রাসুল।’ ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক হাস্সানকে যাহায্য করতে থাকেন। জিবরাইলের মাধ্যমে। যতক্ষণ না সে থেমে যায়। কিংবা রাসুলুল্লাহ থামতে বলেন।’ সুবহানাল্লাহ!
তিরিমিজি ও মুস্তাদরাকে হাকেমের বরাতে মিশকাতের এ হাদিস থেকে কয়েকটি কথা ক্লিয়ার। এক, হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাদ্বি) রাসুলের প্রশংসা করতেন ‘দাঁড়িয়ে’। দুই, রাসুলুল্লাহ তাতে খুশি হতেন। এত বেশি খুশি হতেন যে, শুধু নাত শোনার জন্যই মিম্বর তৈরি করে দিলেন। তিন, রাসুলের প্রশংসার কারণে সাবিত রাদ্বি. জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত হতেন।
রাসুলুল্লাহর সানাখানিতে কিয়ামের বিধান। সেই হাস্সান বিন সাবিত রাদ্বি. থেকে শুরু। সাহাবায়ে কেরাম করে গেছেন। ইমাম বুখারি তাঁর ‘বুখারি শরীফে’ বর্ণনা দিয়েছেন। ইমাম নবভি (রা.) সমর্থন করেছেন ‘শরহে মুসলিমে’। ইমাম সুয়ুতি, খাজা গরিব নওয়াজ, ইবনে হাজার আসকালানি, শেখ মুহাদ্দেস দেহলভি কিংবা ইমাম আলা হযরত তক সকলেই সমর্থন দিয়েছেন, নিজেরা করেছেন। আজ অবদি আমরাও করছি...
কিস্সা এখানে খতম না। পিকচার আভী বাকি হ্যায়! মুদ্রার এপিট-ওপিট আছে। ভালোর বিপরিত মন্দ, আলোর বিপরিত অন্ধকার, দিনের বিপরিত রাত। তেমনি সবলের বিপরিত খোঁড়াও রয়েছে। মেরুদণ্ডহীন ইতর প্রাণী, যারা দাঁড়াতে পারে না। হিংসুক, অন্যকে দাঁড়াতে দেখলেও যাদের পা কামড়ায়। নিন্দুক, কিয়ামের বিরোধিতা করা যাদের নেশা।
সিলসিলার ফাউন্ডার মিস্টার ইবলিশ। পৃষ্টপোষকতা করেছেন আবদুল ওয়াহাব নজদী। সেই বিষফোঁড় উপমহাদেশে আমদানি করেছেন দেওবন্দ তথা ভুতরাজ্যের অন্যতম দৈত্য ‘গাঙ্গুহী’। সেখান থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে সোজা হাটহাজারি। দেওদূত ফয়জুল্লাহর কাছে। অতপর ‘কলিকাতা হারবাল’ এর লিফলেট বিতরণের মত ছড়িয়ে দিয়েছ পথেপ্রান্থে। তাঁদের বক্তব্য একটাই- দাঁড়ানো শিরক-বেদাত। সেখানকার ‘শিরক-বেদাত’ বানান করতে না পারা ছোট ছোট বাচ্চাদের নিকটও এসব শব্দ ‘পরিভাষা’ হয়ে উঠেছে। কেননা ভূতরাজ্যের প্রাইমারি ক্লাসের প্রাইমারি সবকই- ‘মিলাদ-কিয়াম বিদআত’।
মহামনীষীরা যা করে স্মরণীয়-বরণীয়, তা আমরা করলে হয়ে যায় শিরক, বেদাত। তায়াজ্জুব! এ যেন শিয়াল পণ্ডিতের সে গল্পের ন্যায়। মনে আছে? না থাকলে সমস্যা নেই। বলছি, শুনুন- ফাঁদে পড়ে শিয়াল পণ্ডিতের লেজ কাটা গেল। শরমে মরমে নিজগোত্রে প্রবেশ করতে পারছিল না। শেষমেষ বুদ্ধি করল। গোত্রের সবার লেজের দফারফা কীভাবে করা যায়। সবাইকে নিউটনের অষ্টম সূত্র শোনালেন- ‘দ্যাখো- লেজ একটি অপ্রয়োজনীয় বস্তু। অতিরিক্ত অংশ। এর কারণে সমস্যায় বাড়ে। সুতরাং এটি কেটে ফেল। আমার লেজ না থাকাতে আমি আগের চেয়ে ভালোই আছি।’ হাহাহা!
নজদির খপ্পরে পড়ে তারা মিলাদ-কিয়াম কেটে দিয়েছিলো। আজ অবদি যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতের কলঙ্ক- আহা কে চায়? শিয়ালের সে গল্পে শিক্ষা আছে। বঞ্চিতরা অন্যদেরও বঞ্চিত করতে চায়। নেয়ামত থেকে। ওহাবী শিয়ালরাও আজ একই কাজ করে চলেছে। কিয়ামের মত নিয়ামত থেকে তারা বঞ্চিত। তাই অন্যদেরও বঞ্চিত করতে চায়। তাদের ভাবনা- ‘সতীনের পুত ভালো থাকবে ক্যান?’ সুতরাং, সাধু সাবধান!
তথ্যসূত্র-
-তিরমিজি, সূত্র- মিশকাত- ৪০৯ পৃষ্টা।
-মুয়াত্তা, জালাউল আফহাম- ২১৭।
-বুখারি ৩৫৯৩।
-শরহে মুসলিম- ২য় খণ্ড, পৃষ্টা ৯৫।
-আলহাভি লিল ফতোয়া ২য় খণ্ড, পৃষ্টা ২৮২।
-ফাওয়ায়েদুস সালিকিন, কৃত, শেখ ফরিদ গঞ্জে শেখর রা.।
-মওলুদে কবির, আল কাওকাবুল আযহার ওয়াদ দুরারুল মুআজ্জম, পৃষ্টা ১৪৩।
-আখবারুল আখইয়ার, পৃষ্টা ৬২৪
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন