সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাম্যবাদী-২

সাম্যবাদী-২

–মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


                            চলো, সাম্যের গান গাই

জগতের যত সুন্নি মুসলিম সকলেই ভাই-ভাই।

আরবের কে ও, পাকিস্তানি কে, কে সে বাংলাদেশি

এক কাতারে দাঁড়াবো সবে ভুলে সব রেষারেষি। 

কে কার পক্ষে রায় দিলো কবে–সে খবর নাহি রেখে

দিয়ে গলে শান মদিনার তান–গেয়ে যাবো এক মুখে।

কে গেল ও কার আমন্ত্রণে; কারে নিলো বুকে চেপে

না দেখে এসব সিনাখান তাঁর দেখে আবো সবে মেপে।

থাকে যদি হেথা নবিকুলরাজ পরম ভালোবাসায়

করবো কেন হে মিছে সে হিংসা; হিংসুটে কলিজায়।

কে সে রেজভী, ভাণ্ডারি কে–কাদের সে দরবার?

মাপকাঠি এ নয়তো হকের পরিচিতি যাচিবার।

যদি না থাকে বুকভরা তার মদিনা-মুনিব-প্রেম

ভণ্ড যে সে নামধারি জন–যতই থাকুক হেম।

রাসুল-স্মরণে আপন বক্ষে যার যায় দিবানিশি

আরবে থাক সে, থাক না ইয়ামেন–তবু যেন কাছাকাছি। 


পীর-পীরালি গদি-হাদিআয় টানাটানি যারা করে

ভণ্ড সেসব অন্ধ যোগী—কে বলে সুন্নি তারে?

‘আমিই সুন্নি আমিই খাঁটি’ এমন ভাবনা যাদের

ছাই মারি ও মুখের ওপরে; ধিক শত ধিক তাদের।

মত-মতবাদ ভিন্ন তবু হানাফি-শাফেয়ি ঠিক

ঈষৎ–দ্বন্দ্বে ছন্দপতন ফতোয়ার ঝিকমিক। 

সোবহান আল্লাহ, নুরের রাসুল, আসহাব মাপকাঠি

এই গীতিতে মূলনীতি সব; তবেই না সে খাঁটি।

বাদ বিবাদের বাকি সব ছার; অযথা ফ্যাসাদ বাড়ে

যুগাবতার যত মোল্লা-মুনসি ফেলে দাও সব ঝেড়ে।

তোমরা মিলিলে মিলিবে সুন্নি হাত রেখে একসাথ

তাই, তোমাদের তরে মিনতি ভরে করতেছি ফরিয়াদ।

এসো এসো এক শামিয়ানাপর সবুজ মিনার-তলে

হিংসা বিদ্বেষ রেষারেষি সব ধুয়ে-মুছে গঙ্গাজলে।

তুলবে ঘূর্ণি নিশানে সুন্নি সারা দুনিয়ার মাঝে

মিটবে বাতেল যুগের আঁতেল মুখ ঢাকা দিবে লাজে।


২৭-০২-১৯ খ্রিষ্টাব্দ

বুধবার, রাত ২টা, গ্রামালয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...