সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

“জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজনালয় 

ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়!”

                         —কাজী নজরুল ইসলাম

দৌড়ঝাপ শেষে শোবার খাটে এসে বসলাম। সারা দিন কেবল নিউজ দেখে গেছি। চকবাজারে লাশের মিছিল। মানুষ পুড়া গন্ধে ঢাকার আকাশ ভারি। কয়েক লাইন লিখা দরকার। আপন জায়গা থেকে শোক প্রকাশ করা আর কি! নইলে যে আমার মনুষ্যত্ব বিকিয়ে গেছে, এটা প্রকাশ হয়ে যাবে৷ অন্তত নিজের মানুষ দাবির পেছনে এই পিলারটা বসিয়ে দেয়া যাক।


কিন্তু মশার বাচ্চারা লিখতেই দিচ্ছে না। ভুল বললাম। বাচ্চা না। সাইজ দেখে মনে হচ্ছে কিশোর নতুবা যুবক। সমানে কামড়ে যাচ্ছে। তার উপর কানের গোড়ায় ভনভন। মানা যায়? সহ্য হয়? 


ভাবছি, সামান্য মশা। তার কামড় এত বিষাক্ত! আওয়াজ এতটা বিরক্তিকর! আগুনের আওয়াজ কেমন? আগুনের পরশ কতটা বিষাক্ত? বলতে পারেন? ব্যাখ্যা করা যায়? সেই আগুনেই পুড়েছে মানুষ। চেনা চেহেরায় কালি লেপে অচেনা করে দিয়েছে সর্বনাশা আগুনের ফুলকি!


ঠিক সে সময়ে কিছু লোকের পোস্ট– ‘আগুনে সবকিছুকে পোড়ালেও মসজিদ পুড়েনি। অক্ষত তার সর্বাঙ্গ। কেউ আমিন না লিখে যাবেন না।’


আচ্ছা, মসজিদ কি একটা মানবদেহের চেয়ে পবিত্র? ‘মসজিদু বায়তুল্লাহ’ ঠিকাছে কিন্তু মানবমনে কি স্রষ্টার বসবাস নেই? খোদার গড়া মানবদেহ কি মানবগড়া ইট পাথরের চেয়ে অধিক পবিত্র নয়? শুনুন, ফিকহ বলছে মানুষের দেহের বাহ্যিক অপবিত্রতার সৃষ্টি হয়, অভ্যন্তরিন নয়। এজন্যেই কুরআনের পঠনে, জিকির, দরুদে অজুর আবশ্যকতা নেই। মূলত মানবদেহ সর্বদা পবিত্র। 


আর সেই পবিত্র দেহগুলো ঝলসে গেল, বাকি রইল মসজিদ! বিষয়টা অবাক করা বটে। তবে ভেবে বলুন তো, মসজিদের দাহ্য পদার্থ কী কী ছিল? জায়গায় গিয়ে একটু গবেষণা করে আসুন তো আসলে ঘটনা কী? কেন লাগেনি আগুন। ঘুরে আসুন, পর্যবেক্ষণ করে দেখুন। আমার লিখার বাস্তবতা মিললে মিলেও যেতে পারে।


বলছি না- আল্লাহ চায়লে এভাবে পারেন না। বলছি না- তাঁর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে। বলছি ‘আল্লাহ’ শব্দটাকে নাস্তিকদের নিকট আর হাস্যকর বানায়েন না। ধর্মান্ধতার মোড়কে স্রষ্টার ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিয়েন না। হুজুগেপনায় মুল কারণ না জেনে গালগল্পে ফাল মেরে ধর্মটার বারোটা বাজায়েন না। আকমালতু লাকুম দীনুকুম। বন্যা কাবাঘরকেও প্লাবিত করেছিলি। শত্রুর আঘাতে রাসুলুল্লাহর দাঁতও শহিদ হয়েছিল। রাসুলুল্লাহর চেয়েও অধিক মর্যাদাময়-পবিত্র কিছু হতে পারে? অতএব, এসবের ভিত্তি ইসলামে নেই। আল্লাহু খায়রুল হাফিজিন।


ও, পুরোনো প্রবাদটা মনে পড়ে গেল।

“নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...