হজরতের স্কুল-২
📝মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
“হজরতে শাহ আহমদুল্লাহ কাদেরি
কুতুবুল আকতাবে বেলাদে মাশরেকি”
–ইমাম শেরে বাংলা
কুতুবুল আকতাব। স্রষ্টার পক্ষ হতে সময়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান। যা ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, করতে পারেন এমন সত্তাই কুতুবুল আকতাব। কুতুবিয়্যত; এটি বেলায়তে কুবরা বা সর্বোচ্চ বেলায়তের এক ভাগের নাম। অপর ভাগ গাউছিয়ত তথা ত্রানকতৃত্ব। যিঁনি যা চান, তা দান করতে পারেন, তিঁনিই গাউছ।
ইমাম শেরে বাংলার কসিদার শেষে যাওয়া যাক–
“কাদেরিয়ম নারায়ে আঁ গাউছে আজম মি যনম
দম যে শাহে আহমদুল্লাহ কুতবে আলম মি যনম।”–“আমি কাদেরি। আমার শ্লোগান হলো- হজরতে শাহ আহমদুল্লাহ রহ. একই সাথে গাউছুল আজম ও কুতুবে আলম।”
হজরতের বাণী–
“মাই মজজুবে সালেক হোঁ, বায়তুল মুকাদ্দাস মে নামাজ পড়তা হোঁ।” কীভাবে সম্ভব? তিনি তো বাংলাদেশী। থাকেন ভাণ্ডার শরিফ। অথচ নামাজ জেরুজালেমের আকসায়? চলুন, সামনে যাই। উত্তর মেলে কি না দেখা যাক।
ফটিকছড়ির ঈসাপুরের রমিজ উদ্দীন। গেলেন হজে। প্রেমচিত্তে তাওয়াফে বায়তুল্লাহ করছিলেন। দেখেন হজরতও সেখানে। তাওয়াফরত অবস্থায়৷
কাবাদর্শন শেষ। কাবার কাবা বাকি। মদিনা মুনাওয়ারায় চলে গেলেন। সেখানেও হজরত। জিয়ারত করছেন৷ রমিজ উদ্দিন জিয়ারতশেষে দুবারই হজরতের সন্ধান করলেন। দুবারই ব্যর্থ। ব্যাপার কী? লোকটা ‘এই আছে এই নাই’!
বাড়ি ফিরে দরবারে গেলেন। লোকেদের কথা শোনে চক্ষু ছানাবড়া! হজ তো আরবে। তিনি নাকি বাড়ি ছেড়ে এযাবত কোথাও যান নি। হাকিকত জানতে চাওয়া হল। হজরত এড়িয়ে গেলেন। বললেন– ‘চুপ থাকাই উত্তম।’
এভাবে একবার না। বহুবার বহুলোক তাঁকে মক্কা-মদিনায় দেখে এসেছে। অথচ তিনি একই সময় বাড়িতেও। আবার ভাণ্ডারে বসিয়ে ভক্তদের মক্কা-মদিনায় সায়ের করিয়ে এনেছেন এমন প্রমাণও হাঁড়ি হাঁড়ি। মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী রহস্যের গোড়া বুঝতে পেরেছেন। যা দেখেছেন তা এভাবে লিখেছেন–
“তুর ফেলেস্টাইন, দামেস্ক-মিশরে,
মহাসমারোহে মদিনা নগরে
বাগদাদ-আজমিরে, পেয়েছি তোমারে
অপার করুণা দান।
কে তুমি হে সখা, আড়ালে তাকিয়া,
হরিলে আমারি প্রাণ
ছলনা কৌশলে, জগত মজালে,
এমন মোহনী জানো।...”
স্কুলের রীতিনীতি বেসামাল। রোগ হলে ডাক্তার লাগে, দাওয়াই দিতে হয়। বহু পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলতে থকে। অথচ তিনি কুষ্ঠরোগ ভালো করেন লাঠির আঘাতে। জ্বরে ভোগা শিশুকে ডাক্তার নিষেধ করেছের ‘আম’ খেতে। তিনি বলন, ‘তুমি আম খাও, ভালো হয়ে যাবা’। আবার কখনো দেখা যাচ্ছে- রোগ হয়েছে একজনের পানি পড়া দিচ্ছে অন্যকে! পুকুরে লোটা মেরে দূর পাহাড়ের ভক্তের সামনে থেকে বাঘ তাড়ান নি কেবল, মাইজভাণ্ডার শরিফে বাঘ-সাপেরা রীতিমত দীক্ষা নিতেও আসতো।
ক্লাসের সর্বপেছনের ছাত্রটা অদ্ভূত শক্তিতে সাবরেজিস্টারি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে বসতে দেখা যায়। আবার নিতান্তই অজ্ঞ একজনকে “হেকিম সাহেব” সম্বোধনে তিনি হেকিম হয়ে বড়ো বড়ো রোগের চিকিৎসা করা শুরু করে দেয়। ব্যারামও উধাও হয় যা দেন তাতেই! এভাবে মানব-দানব, পশুপাখি, ফেরেশতা, জীন সবাই তাঁর স্কুলের ছাত্রত্ব গ্রহণে লিপ্ত ও তৃপ্ত। রমেশ দারুণই বলেছেন-
“নফসানিয়াতে ভাগ-বিয়োগ, রুহানিতে পুরণ-যোগ,
ঈমান সাহিত্য তাঁর নির্দিষ্ট আছে,
খেদমত বিজ্ঞান যাঁর, দয়া করলে হেডমাস্টার,
তামাম দুনিয়া হবে নজরের কাছে।
গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে।”
প্রথম ভাগে খলিফাদের কথা বলছিলাম সামান্য। জীবনী ঘেঁটে দেখলাম ষাটোর্ধ্ব। এগুলো জাহেরি হিসাব। বাতেনিভাবে আরো কতজন কতদিক থেকে পেয়েছেন সে হিসাবে যাচ্ছি না। এই ষাট জনের সবাই কিন্তু বাংলাদেশী না। ভিনদেশীও আছে। একেকজন একেক জায়গার বাদশাহ। আর হজরত? সূত্র মিলিয়ে দেখুন– বাদশাদের বাদশাহ। তাঁরা হজরতের সানাখানি-গজল লিখেছেন, গেয়েছেন হাজার হাজার। শুধু তাঁরা? না, হজরতের ইনতিকালের শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। আজও থেমে নেই। চলছে, চলতে থাকবে...
“আকাশ বাতাস আর, দেব-দেবতা তাবেদার,
যাহার হুকুমে চলে এই ত্রিভূবন।
কেন চিনলি নারে মন, গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি মাওলানা কেমন?”
তবুও পেঁচারা নিন্দায় লিপ্ত। তিনি সিজদা নিতেন, গান করাতেন। ঢোল-তবলা বাজিয়ে ‘সামা’ করতেন। অথচ এই ঢোল-তবলা আর ‘সামা’য় ডুবে কতজন যে আরশ-কুরসি সায়ের করে এসেছে সে খবর আর রাখে কে? মাওলানা হাদি যথার্থ লিখে গেছেন–
“অন্ধে কি বুঝিতে পারে প্রেমিকের যাতন
পেঁচকে কি সহিতে পারে সূর্যের কিরণ।
প্রেমিক বিনে প্রেমধন, কি জানিবে মূর্খজন,
ভেকে কি বুঝিবে পুষ্প আগর চন্দন।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন