সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মনোস্ তাপ্

মনোস্‌তাপ্‌

–মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


খুব ইচ্ছে করে...

কবিতার বাঁকে স্বাধীনতার কথা বলি।

খুউব করে ইচ্ছে করে...

শহিদদের স্মৃতির মহাসমুদ্র আঁকি।

শব্দে শব্দে অঙ্কন করি সেই গৌরবগাঁথা,

পঙক্তিতে পঙক্তিতে ভরিয়ে তুলি কবিতা পাতা।


আকাশের ঠিক যতটা তারা, 

সাগরের যত তরঙ্গধারা,

বৃক্ষরাজির যতটা পাতা,

উপাদান যত বসুধাভরা,

ঠিক ততটা; ততটাই লিখতে ইচ্ছে করে। ততবার মুখফুটে গায়তে মন চায়, 

‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা...।’


কিন্তু থেমে যাই। 

কে যেন পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে

বলে, চুপ কর্ হে মিথ্যাবাদী কবি।


চরম ঘৃণাভরে তাকাই পেছন ফিরে 

অদৃশ্য সে দানবের তরে। 

আনমনে বিড়বিড় করে

বলতে থাকি–কে হে নপুংসক, 

কবির মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী? 

কবিসত্তার অসম্মান করিস? 

ব্যাটা জোচ্চোর-ঠক-প্রতারক–সম্মুখে আয়। 

এই লাটি দিয়ে আজ যদি তোর ঠ্যাং না-ভেঙেছি; তবে এই আমি কবি নই।


অকস্মাৎ হুহহু করে তাচ্ছিল্যের হাসি ভেসে আসে। সাথে নরম-গরম শব্দ–

‘ও, এইটুকুতেই লাঠির বাড়ি? 

শব্দ করার আগেই? তবে বলো হে কবি,

তুমি কোন স্বাধীনতার কথা বলতে চাও?

যে স্বাধীনতা কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তার?

শাদাকে শাদা বলতে যে স্বাধীনতা নিষেধ করে, 

রাতের আঁধারে ডাকাতের হাতে 

যে স্বাধীনতা লুট হয়ে যায়, 

অস্ত্র দিয়ে যে স্বাধীনতাকে নিত্য খুন করা হয়, 

ক্ষমতার ঝাপটায় যে স্বাধীনতার গলা

অবনমিত হয়–সে স্বাধীনতার?

বিদেশী দস্যূ হতে মুক্তি চেয়েছিলাম বটে,

স্বদেশীর কাছে আজ নিরাপদ আছি কি?

ঘাতকের থাবা থেকে ছিনিয়ে এনে 

নিত্য দংশন করে চলেছে আমারই ভাই, 

আমারই বাপ, আমারই স্বজাতি। 


আমি তো পাখির মত আকাশপানে উড়তে চাই নি।

চাইনি জাহাজ হয়ে সাগরজলে 

ইচ্ছেমত ঘোরে বেড়াবার অধিকার।

মন যা চায় তাই করার ইচ্ছেও যে করি নি কখনও।

কেবলই অধিকার চেয়েছিলাম 

মুখফুটে সত্য কথাটি বলার। 

নিজের জমিতে নিজের ভূখণ্ডে 

উচ্ছ্বাসভরে বাঁচবার। 

আমার নেতা, আমার প্রতিনিধি 

আমিই বাছাই করার অধিকার। 

অথচ আজ তা লুণ্ঠিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত, অস্তমিত। 

এটাই কি স্বাধীনতা?

বলো হে কবি, 

এটাই কি তোমার প্রবল ইচ্ছার প্রতিফলনের হেতু?


হাতের যষ্টি আপনাআপনি পড়ে গেছে 

সে কবেই। আমারই অজান্তে বিনা অনুমতিতে

ঝরনাধারা বয়ে দিয়েছে চক্ষুদ্বয়। স্বাধীনতার ভারে পাথর হয়ে 

আঁটকা পড়েছে আমারই অধীন পা দুখানি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...