সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিজরত-সাথি

–মুহাম্মদ সৈয়দুল হক


ধর্ম করিতে লুট,

মক্কার যত কাফের-নাকের হলো সবে একজোট।

মিলিত সবাই গোত্রের ভাই; নদওয়ার বৈঠকে,

কুজনের দল ভোজনের পর কল্পনা-চক আঁকে।

‘মুহাম্মদ সে শত্রু মোদের; করেছে ধ্বংস সব

পুজায় অর্ঘ্য দানিতাম সবে ওজ্জা-মানাত রব।

বাপ-দাদার সে ধর্মকর্ম ভুলে গিয়ে লোকজন

মুহাম্মদের প্রভূর নিকটে হয়েছে সমর্পণ।’

জাহেলের সুরে সুর মিলালো গোত্রের যুবাদল,

মুহাম্মদেরে হত্যা করিবে রোধিতে মুমিন-ঢল।

সাহাবা সকল বেঁধে দলবল বাড়িঘর সব ছেড়ে

দেশপ্রেম ভুলে নবিপ্রেমে চলে মদিনার পথ ধরে।


ঐশী প্রেরণা পেয়ে নবিরাজ আয়োজন নিলো সেরে,

‘যেতে হবে তার সঙ্গে ওপার’ বলে বকরের তরে।

দুজাহানে সবে কাঁদো কাঁদো রবে সঙ্গ যাঁহার মাগে

‘তাঁহার সঙ্গি’ শুনে বকরের ভাবতেই সুখ জাগে।

পয়গাম কুরানের–

‘সম্বোধিলে আল্লাহ-রাসুল সাড়া চাই সকলের।’

এই ভেবে যায় শ্রেষ্ঠ সাহাবি আবু বকরের দিন

না-শুনিলে বাক, রাসুলের ডাক জন্মে থেকেও লীন।

ডাক দিবে যবে শ্রেষ্ঠ মানবে তখনই যেন শুনে

নিদ্রা আহার সবি দিয়ে ত্যাগ কেবলি প্রহর গুনে।

এলো সেই ক্ষণ; রাসুলে আরাবি কড়া নাড়ে দরজায়,

‘লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ’ সাথে সাথে শোনা যায়।

‘কিহে সিদ্দিক, ঘুমাওনি কি?’ সোয়াল করেন নবি,

সত্যব্রতীর কণ্ঠে ভাসে প্রেমের প্রতিচ্ছবি-

‘ওহে প্রিয়সখা-প্রেমাস্পদ প্রিয়নবি হজরত

ঘুমালেই তব আহ্বানকালে কীসে তবে ইবাদত?

আদেশেতে যাঁর দিবাকর ফেরে, চাঁদ ফাটে ইশারায়,

(তাঁর) আহ্বানধ্বনি যদি না-শুনি বৃথা এ জনম হায়!

তাই ভেবে এই অধম বকরে সেইদিন হতে আজ

মুদিনি চক্ষু, রাখিনি পৃষ্ঠ ঐ খাটিয়ার মাঝ।’

------------------------------------------------------------

হায়! একি দৃশ্য! দ্যাখ, ওহে বিশ্ব–কী চলে ও-সাহারায়,

দেশ ছেড়ে যায় দেশের মালিক; রাজ করে দাসিরাই।

জগৎসূর্য মরুর মাঝেতে; বকরের কাঁধে হাত,

সাওর-গুহাতেই রাত কাটাবে সরোয়ার-কায়েনাত!

আনন্দে সারা সাওরের গুহা একি ও-কেমন রীতি, 

জান্নাত ছেড়ে ধূলোর গুহায় জাহানের দুই প্রীতি!

ধূলিতে নুরের দেহ মোবারক; মাথা বকরের কোলে

ক্ষণিকের তরে পর্বত-ঘরে হেলে ঘোমানোর ছলে।

যাঁর তরে ঘুম, ‘ঘুম’ রূপ পায়, তার কীরে ঘুম আর

মুনিবের লীলা দয়ালের খেলা অসাধ্য বুঝিবার।


চেতন বকরে দেখেন নজরে গুহাভরা সাপখাদ;

ভাবে, ওত পেতে বিষধর তাতে লুকে আছে নির্ঘাত।

হাবিব নবির চাদর-টুকরে কোটর বন্ধ করে

একখানা বাকি রয়েছিল–তাতে আঙুল দিয়াছে পুরে।


দুজাহান-রবি জগতের নবি; নুরি তন তাঁর হায়,

আকর্ষিবে না এমনও প্রাণী আছে কি এ বসুধায়?

যে দেহের ঝরা ঘর্মে বিকাশ লভে গোলাপের ফুল,

সুগন্ধে ভরা ও-তনু মনোহরে কে না-হয় মশগুল?

আপন গর্তে সুঘ্রাণ যবে নাকে যায় ‘হারেসা’র,

উথাল-পাতাল গন্ধে মাতাল করে উঠে মন তার।

ব্যাকুল চিত্তে ছিদ্রান্বেষে; নাহি মেলে তার খোঁজ,

নবির সুরভে মাতোয়ারা মন; কে বা তারে দেয় বুঝ।

বকরের তরে বিষের অধরে ঠোক মেরে চাহে পথ,

প্রেম দরিয়ায় মগ্ন বকর আঙুলি সে

বলবৎ।


প্রেমবিষে পায় যাঁরে,

দংশিলে বিষধরে,

যে হয়েছে প্রেমমরা;

কোন বিষে মারে তাঁরে।

প্রেম দেখো বকরের

লা-পরোয়া জীবনের,

বিষে শরীর ছেঁয়ে যায়; 

ভাঙে না ঘুম মুনিবের।

অন্তরে প্রেমঝড়

শরীরেতে বিষধর,

জিত কার, কার হার–

ধড় না-কি অন্তর?


তবু,

প্রকৃতির এই রীতি—

ধড়ের ব্যথায় ব্যথিত চক্ষু, বেড়ে যায় তার প্রীতি।

শরীরের কোনো ভাগে

আহা, বেদন যদি গো জাগে,

অঝোরে ঝরায় ঝরনাধারা; নিদারুণ শোকাবেগে।

চোখমণি বকরের–

গড়িয়ে দিলো প্রেমের নহর চেহারায় রাসুলের।

জাগিয়া রাসুল জগত-অতুল দেখে বকরের পানে

জিজ্ঞাসে তথা কোলে নবি-মাথা; কাঁদো কীসের টানে?


জান্তা নবির অজানা-প্রশ্নে চেতনা আসলো ফিরে,

সর্প যে তাঁরে মেরেছে ছোবল–আতিকের মনে পড়ে।

হিজরত-সাথি নবির প্রীতি করে যায় ফরমান-

জীবন-মরণ-স্বপন সকল যাঁর তরে কুরবান,

উরুপরে সে নুরেরই মস্তক জগতের সরতাজ;

আপনার ব্যথা কী করে প্রকাশ করি গো হেথায় আজ।

নবি ইউসুফের ঝলক-ছোটে পলক না-ফেরে বলে

ব্যাকুল চিত্তে কেটেছে আঙুল মিশরি হুরের দলে।

নবিকুলরাজ ইউসুফেরও তাজ–মুস্তফার চেহারা

সুমুখে আমার চোখের উপরে–তাই দেখে দিশেহারা।

পদতলে যাঁর নতে সবে শির, তাঁর মাথা মোর কোলে

ও-শিরের আরামে ব্যাঘাত ঘটাই কোন ক্ষমতা-বলে?

হেন পাপ নাই নরকুলে।


‘বকরের উক্তি–রাসুলে ভক্তি’ দেখে নবি বলে উঠে

‘‘সাহেবুল গার’ সিদ্দিক আমার এসো এসো বুকপটে।’

আলতো ছোঁয়াতে বকরের আঙুলে মাখে মোবারক থুথু

বিষের মাত্রা করিলো যাত্রা ঠিক যেন ধূমকেতু।


আবু বকর! ওহে,

আখেরি নবির উত্তর বাহু; এসো ফের ধরণীতে,

প্রেম বিলাতে অসার-নিঠুর-প্রেমহীন মানবেতে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...