সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুরআন পুড়ে যাওয়া

কুরআন পুড়ে যাওয়া: বিষয়টা কেমন?


সন্দিগ্ধ: ঘটনা শোনেছেন? মসজিদে আগুন লেগে অর্ধশতাধিক কুরআন পুড়ে ছাই! নাস্তিকরা নানান কথা বলছে। কোনো উত্তরও দেয়া যাচ্ছে না। কুরআন তো আসলেই পুড়েছে; অথচ আল্লাহর বাণী! মান-ইজ্জত হয়ত আর রইল না।


বিশ্বাসী: দয়া করে বাক্যের শেষের আশ্চর্যবোধক চিহ্নটা কেটে ওখানে দাড়ি বসান। বাস্তবতা হচ্ছে আজ যদি কাবা ঘর হেলেও পড়ে; তবুও আমার বিশ্বাস চুল পরিমাণ হেলবে না। বরঞ্চ আরো দৃঢ় হবে। কেননা আমি বিশ্বাস করি, কাবার স্রষ্টা এ ব্যাপারে স্বাধীন যে, তিনি চায়লেই এটা হেলিয়ে দিতে পারেন। 


কুরআনের(যেটা কাগজ-কালিতে ছাপানো) আগুনে পুড়া আর না-পুড়াতে যাদের বিশ্বাসের ভিত সবল ও দুর্বল হয়ে পড়ে, তারা কস্মিনকালেও নিজেদের ঈমানদার দাবি করতে পারে না। 


কাগজ-কালির ছাপানো কুরআন পুড়তে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাগজ-কালির যিনি স্রষ্টা, তিনি আগুনেরও স্রষ্টা। একের ধর্ম পুড়ে যাওয়া, অন্যের ধর্ম পুড়িয়ে ফেলা। বিষয়টা একেবারেই সিম্পল। 


পৃথিবীর সব কুরআন পুড়ে ছাই হয়ে গেলে কি বিশ্বাসীদের বিশ্বাস টলে যাবে? তবে ঐ সস্তা বিশ্বাসের মূল্য কী? অদৃশ্য স্রষ্টায় বিশ্বাসীরা কি অদৃশ্য এ তথ্য একবারও খেয়াল করে নি যে, তাদের রব বলেছেন, ‘এই সে কুরআন; যা লাওহে মাহফুজে মহামর্যাদায় রক্ষিত’?


তো, পুড়ে যাক-না কাগজ-কালি দ্বারা বাইন্ডিংকৃত দুনিয়ার তাবৎ কুরআন। এতে বিচলিত হওয়ার কী আছে? আসল কথা হচ্ছে আমরা ‘অক্ষর কুরআন’ আর ‘হাকিকত কুরআন’ এক করে ফেলি। দুটোর সমন্বয় ঘটতে পারে; তবে মনে রাখবেন, ঐ দুটো আলাদা জিনিষ।


হাঁ, যে কাগজে কুরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা অবশ্যই সম্মানিত। আল্লাহ চায়লে তা না-পুড়ে অক্ষতও থাকতে পারে। তবে, বিষয়টা এমন না যে, পুড়বেই না বা পুড়তে পারেই না। মনে রাখবেন প্রকৃতি তার আপন গতিতে চলে এবং তার পরিচালক স্বয়ং আল্লাহ। 


বুঝতে হবে কাগজের কুরআন পুড়লেও স্রষ্টার বাণী পুড়ে না। পুড়ে কেবল কাগজ আর কালিই। অতএব, কুরআন পুড়লো-কি-পুড়লো না–সেটা বিবেচ্য নয়; স্রষ্টার বাণী আপন জায়গায় অম্রিয়মান-অক্ষত আছে, সেটাই তৃপ্তির খবর।


সন্দিগ্ধ: (অনেকক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে) কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি। আসল রহস্য বুঝলাম। কিন্তু আমরা তো ইতোপূর্বে বিভিন্ন ছবি দিয়ে দেদারসে প্রচার চালিয়েছি যে, কুরআন পুড়ে না। নাস্তিকদের তাই দেখিয়েছিলাম। এখন তাদের কি জবাব দেবো?


বিশ্বাসী: নাস্তিকদের জবাব না-দিলে কি বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে ফাটল ধরতে পারে? তবে তারা কী ধরনের বিশ্বাসী? ঐ কাজ থেকে আপাতত বিরত থাকুন, যা ইতোপূর্বে করেছেন। সোজা কথায় হুজুগেপনা ত্যাগ করতে হবে। কিছু একটা দেখেই কপি-পেস্ট বন্ধ। ধৈর্য ধরতে হবে। বুঝতে হবে। অনুধাবন জরুরি। বিবেকের দোলাচালে ঘুরাবেন। বুঝে উঠতে না-পারলে যারা বুঝে, তাদের থেকে বুঝে নিতে হবে।


আর অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসের এই ডোজটা ভালোভাবে খাইয়ে দিন যে, কুরআন কখনো পুড়ে না, পুড়তে পারে না। যা পুড়ে, তা কাগজ আর কালিই। যারা অদেখা স্রষ্টায় বিশ্বাসী, তাদের কুরআন লাওহে মাহফুজে পরম মমতায় সংরক্ষিত। কাগজ কুরআন পঠন, গবেষণা ও সম্মানের পাত্র মাত্র; হাকিকত কুরআন দৃষ্টিশক্তির ঊর্ধ্বে। যেমনটা মিলিয়ন-বিলিয়ন তারার অস্তিত্ব স্বীকার্য কিন্তু দৃষ্টিশক্তির বাইরে।


(নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা, ধন-সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানি এবং ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। সুরা বাক্বারা: আয়াত ১৫৫)


(আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সব কিছু করতে সক্ষম। আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালনা করেন। সুরা নুর ৪৫-৪৬)


(অধিকাংশই বুঝে না। আল হুজরাত, ৪)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...