সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জলাবদ্ধতা

লঞ্চের এ কেবিনটা বেশ অগোছালো। নেই এসি-টেসিও। আলমিরাগুলোরও যা-তা অবস্থা। চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো কাপড়-ছোপড়। উপরে যে ফ্যানটা ঘুরছে, সেটাতেও বাতাসের যথেষ্ট ঘাটতি। বিচানার কী যে অবস্থা করে রেখেছে; তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক’টা বাজে আল্লাজানে। উফফফফ, দেয়ালে একটা ঘড়ি পর্যন্ত টাঙায়নি। 

আচ্ছা, এখানকার কর্তৃপক্ষের কাজটা কি আসলে? মনে হচ্ছে কেবিন নিয়ে শুধুশুধু টাকা নষ্ট করলাম। ভাগ্যিস, ব্যাচেলর বাসায় থাকতে থাকতে এরূপ পরিবেশটা বেশ পরিচিত। না-হয় কোনো সুস্থ মানুষ এখানে আসলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে এসবের মাঝে একটা বিষয় বেশ স্বস্তির। মাথার ঠিক উপর ও পাশে অনেকগুলো বই এলোমেলোভাবে সাজানো। ছোটখাটো লাইব্রেরি বলা চলে। এ নির্জন দরিয়ার মাঝে অন্য সঙ্গী না-পেলেও সময়টা যে বইয়ের সাথে বেশ কেটে যাবে–সেটা ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। 

আরো একটা মজার বিষয় আছে৷ বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টির মাঝে জানালার দ্বারে বসে এক মগ চা আর নজরুলের মরুভাস্কর হাতে পেলে আর কী লাগে! তার আগে অবশ্য মনে মনে গান বাজছে–
“রিমঝিম এ ধারাতে, চায় মন হারাতে।”

খুব জোরে একটা বজ্রপাত হলো। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘুমটাও ভেঙে গেল। মনে হচ্ছে একেবারে কানের উপর দিয়ে গেছে। অস্বাস্থ্যকর রোমান্টিক স্বপ্নের দাফন এখানেই। সকাল দেখি হয়ে গেছে। চোখজোড়া এখনও ভালো করে খুলতে পারছি না। সবকিছু হালকার উপর ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। চা খাওয়া দরকার। কেবিনের ছেলেটা কোথায় দেখি।

দরজা খোলে বাইরে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া। এ কি, পদ্মার জল দেখি কেবিনের দরজায়। তা তো বুঝলাম, কিন্তু পদ্মার মাঝে এতগুলো বিল্ডিং এলো কোথা থেকে? বৈদ্যুতিক এসব খাম্বা-ই বা এখানে গেঁড়ে গেল কে? একটু দূরে দেখি অনেক গাছগাছালি! তাজ্জব তো, লঞ্চে আজকাল গাছ লাগানোও শুরু হইছে নাকি...

আগেরটার চেয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে আরো একটা বজ্রের পতন। ধ্রাআআম! ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম। নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের বাসার দরজায়। ভেতরের দিকে নজর দিলাম। কেবিন-টেবিন সব উধাও! যত্নহীন অগোছালো ম্যাচটাতে এখনও সূর্যের আলো ঠিকঠাক পৌঁছেনি। 

কিন্তু এই যে পদ্মার জল; বাসার দরজা অবদি কী করে এলো? ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো আমি তো চট্টগ্রাম শহরে। বৃষ্টি হচ্ছে দুদিন ধরে। পদ্মার জল নয় আসলে, এখানে কর্ণফুলীর সাথে প্রেম জমাতে আমাদের মাননীয় মেয়র মহোদয়ের আমন্ত্রণে যমুনা ছোটে এসেছে। আর সে প্রেম যমুনার রসে আমরাও হাবুডুবু খাচ্ছি। কবি দিলওয়ার যে কেন লিখেছিলেন
“পদ্মা তোমার যৌবন চাই, যমুনা তোমার প্রেম”। ওনি না-চায়লে হয়তো আজ চট্টগ্রামবাসীদের প্রেম যমুনায় ডুবতে হতো না৷

বি: দ্র: আরো কিছু লিখার বাকি ছিল, কিন্তু প্রেম যমুনার জোয়ার একটু পর ভালো বাসাটা আর ভালো রাখতে দেবে না। পুরোই নোংরা করে দেবে। কর্ণফুলীর সাথে অবৈধ প্রেমের ফলাফল শেষমেশ আমাদেরও ভোগ করতে হচ্ছে। বিদায় পিতিবি…

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...