সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এলিয়েনদের খোঁজে...

এলিয়েনদের খোঁজে...

বিকেলটা মোটামোটি শান্ত ছিল৷ বৃষ্টির আনাগোনা ছিল না একটুও। এখন ৯টা বাজে। আবারো মুষলধারে শুরু। বৃষ্টি বরাবরই প্রিয়। শহর থেকে তড়িঘড়ি করে বাড়ি এসেছিলাম কেবল টিনের চালায় বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ শুনবো বলে। এ শব্দ আমাকে মাতাল করে দেয়। অনুভূতিরা সব দেয়াল ভেঙে চুরমার করে আমাকে ঝাপটে ধরে। সর্বাঙ্গে কাঁথা জড়িয়ে কান দুটো খাড়া করে দিই। চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকি। এ এক অদ্ভুত স্পর্শ। মাপা যায় না, ছোঁয়া যায় না। তবে অনুভবের সবটা দখল করে নেয়।

পেটে লাত্থি পড়লে সব অনুভূতি পালিয়ে যায়। বৃষ্টি না, আকাশ থেকে বেহেশতের পানি পড়লেও কেউ গা ভেজাতে এগিয়ে যাবার কথা না। কিন্তু এ লাত্থি যে শুধু পেটে না, পেটে-পিঠে সবটায়। শুধু চুলা নয়, অনেকের শোয়াও বন্ধ। শুবে কোথায়, ঘরের ভেতরই হাঁটু কিংবা কোমর-পানি। অনেকের আবার ঘরবাড়িই নাই। সব হারিয়ে অনেকটা পথহারা পথিক। হালদায় নিয়ে গেছে। 

চিনের দুঃখ হোয়াংহো হলে ফটিকছড়ির ক্ষেত্রে হালদা। এ এক সর্বনাশা নদী। দোষ অবশ্য নদীর না, প্রকৃতির। না, এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। প্রকৃতির দোষ না, প্রকৃতির পরিচালক তো আল্লাহ। তবে কি আল্লাহ দোষী? তা-তো অসম্ভব। দোষী আসলে আমরা। পাপে নাকি বাপরেও ছাড়ে না। আমাদের ছাড়তে যাবে কোন দুঃখে। অন্যায় করাটা পাপ। হালদার সাথে বহু অন্যায় করেছি আমরা৷ তাকে তার মত চলতে দিই নাই। বাধাগ্রস্ত করেছে তার স্বাধীনতাকে। বালি তুলে তার বুক ছিড়ে খেয়েছি। পাড়গুলোকে পাড় রাখিনি। আল বানিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে গতিপথ রুদ্ধ করেছি। তার পবিত্র সুপেয় মিঠাপানির বারোটাও কি কম বাজিয়েছি?

এসব বাড়তি কথা। গালির তালে বললে ‘বাইক্কা কথা’। পানিবন্ধিদের এসব শোনার টাইম একেবারে নেই। তাদের পেট বাঁচানো দায়। এ মুহূর্তে শাস্ত্রের বুলি শোনালে গুলি করতে ইচ্ছে করার কথা। 

কী শোনানো যায়? আছে একটা। এবং সেটাই একমাত্র। তাদের কান দুটো এখন একটু সাহায্যের শব্দ শুনতে চায়। তা দুমুটো চাল হলেও চলে। কিন্তু কে দেবে? জনসাধারণের ক্ষমতা খুবই সীমিত। তাদেরও অনেকের অবস্থা প্রায় ভালো না। এমতাবস্থায় সবার চোখ সরকারি ত্রাণের দিকে। 

তো কে আনবে এ ত্রাণ। উপরিমহলে কে পৌঁছুবে অসহায়ত্বের কথা? নিশ্চয় আমজনতা নয়। কিন্তু কাঁঠাল জনতার কি এখনও ঘুম ভেঙেছে? তাদের ভূড়িগুলো যে শহরের বহুতল ভবন থেকে নামতেও পারছে না। ত্রাণ নিশ্চয় আকাশ দিয়ে উড়ে এসে বাড়ি-বাড়ি পরবে না!

এইতো সেদিনের কথা। গেলো নির্বাচন। তার আগে কী ঘটেছে সবার জানা। আমার ভাই তোমার ভাই। আমি বলি, ফাজলামির আর সীমা নাই। ভাইগুলো এসে বুকে বুক লাগিয়ে গেলো৷ আহ, সে কী ভ্রাতৃত্ব-মমত্ব। এখন দেখছি, কপালভাগ্যে এলিয়েনদের সাক্ষাৎ পেয়ে গেছিলাম। তারা এখন সপ্তম আসমানে৷ অতএব, তাদের টেনে নামানোও অসম্ভব। অতএব, আমরা আমজনতারা কেবলই আল্লাহ আল্লাহ করি। যদি, তার বিশেষ করুণা হয়, তবে এ যাত্রায় বেঁচে যাবো।

“আল্লাহুম্মা সায়্যিবান না-ফিআ’–‘হে আল্লাহ, আমাদের জন্য উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন।”

[মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে এগোচ্ছে। যারা মোটামুটি ভালো আছেন, তারা নিজনিজ উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব এগিয়ে আসুন। আল্লাহ তাআলা আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। 

“আর যারা মানুষদের সাহায্য করে না, আল্লাহ তাআলাও তাদের সাহায্য করেন না।”–আল হাদিস]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...