সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শেষ সম্ভাষ

🔉শেষ সম্ভাষ🔉
(বিদায় হজের ভাষণ)

 ... শূন্যে রবি চমকায়
উটের পৃষ্ঠে চড়ে নবিরাজ 
পৌঁছিলো আরাফায়।

দলে দলে এলো সাহাবা সকল 
আরাফার ময়দান
সামনে দাঁড়ায়ে আছে মহাজন 
শোনাবে সমতা-গান।

লক্ষ লক্ষ অনুচর সবে 
কান পেতে শুনে রয়
দুইজাহানের বাদশাহ নবি
কোন কোন কথা কয়।

দুনিয়ার রবি দুপারের নবি 
ভাষণ করল শুরু
“শোন ওরে শোন সাহাবা সকল 
শুনে রাখ জল-তরু।

এবারের পরে হবে না হয়ত 
সফর হজের পথে
হয়ত মিলিত হবো নারে ফের 
আরবের আরাফাতে।

এ নগর যথা মহামহিয়ান 
তেমনি সকলে জেনো-
একে-অপরের ধন-মান-তন 
নিরাপদ রেখো হেন।

বিপথগামীতা-পথভ্রষ্টটা 
নিয়ো নাকো বেছে কভু
অচিরে হিসেব করবে গ্রহণ 
জগৎস্রষ্টা প্রভু।

যুগে যুগে বহু জাতির উপরে 
ধ্বংস নেমেছে এই-
জাত-মান তুলে বিবাদ-দুয়ারে 
কড়া নেড়েছিলো যেই।

পুরুষ-নারিতে ভেদাভেদ করে 
চলো নাকো দিবারাত
পুরুষ যেভাবে মানুষ জানিও 
নারিরাও সে সে জাত

একে অপরের অধিকার দিয়ো, 
হরণ করো না ভুলে
দাসদাসি সবে আপন ভাবিও 
জন্মেছে নরকুলে।

অন্ন-বস্ত্র-বাসের অভাবে
পড়ে যদি মরে তারা
মানুষ বলিয়া মানুষকে আর 
মানুষ ডাকিবে কারা?

ওরে, শোন যত সাহাবি!
আামার বিদায়ের অন্তে কভু 
আসবে না কোনো নবি।

নামাজ-রোজা ইবাদাত যত 
করিও প্রেমের দিলে
গরিব-দুখিরে যাকাত বিলায়ো 
অন্তরখানি খোলে।

করো যদি হজ আনতচিত্তে, 
পাবে জান্নাত প্রীতি
নীতি শাসকের অনুগত হও, 
গাও যদি তার গীতি।

কৃতদাস হোক, হোকনা অধম, 
নীতির পুজারি হলে
অবাধ্য তার হওয়া যাবে না 
কোনোদিন কোনোকালে।

বংশে বংশে কংসরীতির 
বিনাস ঘোষিলাম এই-
সুদ-ঘুষ যত অনাচারি চাল 
সবে করিলাম হেয়্।

অমীয় বাণী শোনাই-
‘মুসলিম নামে আছে যত ভবে 
সকলেই ভাই ভাই।’

ধন যদি হয় অন্যের তবে 
অনুমতি দরকার
নতুবা কারো সম্পদ-মাঝে 
হাত নয় নোয়াবার।

শিরক করো না কভু,
জগতের মাঝে একটি আল্লাহ, 
এক সকলের প্রভু।

থেকো সবে সদা সত্যের পথে 
অসত্য থেকে বেঁচে
খুন-খারাবি জেনা-ব্যভিচারে
লিপ্ত হয়ো না যেচে।

রেখে গেলাম এ হাদিস-কুরান 
সুপথ পাবার তরে
মেনে চলো যদি বিধান দুখানা 
অভ্রষ্ট চিরতরে।

শোনে নি যারা এ পূণ্যবয়ান, 
পায় নি এ দাওয়াত
প্রতিটি দুয়ারে করিও তোমরা 
এ বাণীর করাঘাত।

সৃষ্টির যত নারি-পুরুষ সব 
এক আদমে গড়া
তাকওয়া বিনে ভালো-মন্দে
নাই কোন ভাগ-ফাড়া।

আমার ব্যাপারে পুচিবে হাশরে 
আল্লাহ দয়াময়
কী দিবে জবাব আমার স্বভাব 
কীরূপ সে পরিচয়?”

উপস্থিত সবে বলে,
“অর্পিত সে আমানত খোদার 
দানিয়াছেন সকলে।”

আপ্লুত মনে নবিকুল রাজ 
তাকায় ঊর্ধ্বলোকে
ডেকে ডেকে কয়- “হে গো দয়াময় 
শ্রবণে লও আজিকে–

আমার ‘পরে যা করেছ ন্যস্ত 
পালন করেছি সব
সাক্ষী রইল উপস্থিত–এ 
জনতার কলরব।”

সহসা এলো ঐ ঐশীবাণী 
কুরানের পয়গাম-
“সকল নেয়ামত পূর্ণ আজি, 
পূর্ণ দীন-ইসলাম।”

[‌‌২১/০৮/১৮, রাত ৩টা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...