সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সরষের ভূত

সরষের ভূত

হুজুর হাঁকালেন, 
‘ডাকতার করিবেন ডাকতারি
মসল্লা নিয়ে টানলে হয় মশকারি।
ব্যাটা নচ্ছার–
মোদের হতে হয় সোচ্চার।
ফতোয়ার টেবিলে তারে মানায়?
ব্যাকরণ না-বুঝিয়া অযথা লাফায়।
দেখে দেখে এবারত পড়িবে কীরূপ?
শুদ্ধ করিয়া তো বেরোই না হুরুফ।
কত ক্লেশ আর সাধনার পরে
নিয়াছি বুখারি কাঁধের উপরে
দুকলম ইংলিশে বুখারিটা পড়ে
কথার আগেই সে রেফারেন্স ঝাড়ে।
ধুর ধুর,
থাকলেই হলো না-কি মুখে মৃদু সুর?
সুর আছে গান করো,
মন চায়–শান ধরো,
টান মারো জোরে,
চলে যাক ভেসে ভেসে পৃথিবীর ওপারে;
কিন্তু পা মাড়িয়ো না এপারে,
মাড়ালে মাড়াতে পারো–
খসে যাবে-ভেঙে যাবে পরে।

আমরা বলিলাম,
কিয়া বয়ান হ্যায়! ঠিক-ঠিক,
হুজুরের বাণীর সে কী ঝিকমিক!
বাণীতে মণি আছে,
হুজুরের কথা যা, সবি ঠিক আছে। 
মাছের রাজত্ব পানিতে মানায়
ডাঙায় কী-লাভ অযথা লাফায়।
আদার ব্যাপারি—আদা বেচিবে
জাহাজের খবরে—সে কী করিবে?
ফার্মেসির লোকে কি ডাক্তারি পারে?
অথচ ওষুধ সব তাহাদের ঘরে।
লাইব্রেরি ওয়ালা আর কতটা জানে?
জ্ঞান তো সবি ঐ ঋষিদের ধ্যানে।
বাংলার মাস্টারে ইংরেজি পারে
তাই বলে পাঠশালায় ইংলিশ ঝাড়ে?
হুজুরের কথা তাই, 
মানি ভাই, মানো ভাই—মেনে নাও সবে,
শুনিবো-না বলিলে ডাক্তার সা-বে।

কিছুদিন অন্তে, হুজুরের পন্থে
আসিলো আলো জ্বেলে ‘ডাক্তার সন্তে’।
কোলাহল পড়ে গেলো
‘জয় জয়’ রব এলো; ভাসিলো সকল
ভুলে গেলো অতীতের যুক্তির ছল।
ডাক্তারের বয়ানে 
বুড়া থেকে জোয়ানে; তালিয়া বাজায়
‘মাশাল্লাহ’ বলে বলে হৃদম জোগায়।
কিন্তু...
ত্যাড়ালোক মরেনাই, 
দুয়েকটা আছে ভাই–জিজ্ঞাসা তার
কীরূপে ফতোয়া মারে নয়া-ডাক্তার?
লোকে বলে চুপ কর
আমাদের-ই ডাকতর—উৎসাহ দে
বহুদূর ছড়িয়েছে, না-ফিরুক সে।
ত্যাড়াটার বাঁকা সুর
সোয়াল সুমধুর–বাপের পাপে হায়
কোন শাস্ত্রমতে বলো–স্বর্গ দেখায়?
লোকে বলে বাপ তো
করা যায় মাফ তো–চুপ থাকো ভাই
ত্যাড়া বলে পাপ তো
করা যায়া মাফ তো; প্রশ্ন রেখে যাই–
পাপকে পূণ্য তা বলে–কভু ভাবা যায়?

[আমায় ভুল বুঝুন। গালি দিন। প্রয়োজনে কানটাও মলে দিন। দিনশেষে একটা অনুরোধে–সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা; জোর গলায় বলতে দিন।]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...