সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুরুচণ্ডালী

🔘গুরুচণ্ডালী🔘

বলুন তো দেখি, গুরুচণ্ডালী রহিয়াছে কিন্তু শিষ্যচণ্ডালী নাই কেন? আছে, ইহার বিশাল হেতু আছে। তাহা পরে বলিব, আগে বলুন, গুরুচণ্ডালী বলতে আপনারা কী বুঝিতে পান? এক্ষণে ঠাস করিয়া কেহ কেহ উত্তর করিবেন, সাধু ও চলিতে ভাষার সংমিশ্রণ তথা আপনার উপরের বাক্যে ‘বলিতে’ না লিখিয়া যে ‘বলতে’ লিখিয়াছেন, অথবা ‘বুঝতে’ না লিখে যে ‘বুঝিতে’ লিখেছেন, তাহাই গুরুচণ্ডালী। কিন্তু ইহাতে আমার ঢের আপত্তি রহিয়াছে। অভিধানবেত্তাগণ গুরু শব্দে অর্থ করিয়াছেন ‘পূজনীয় ব্যক্তি’। এইখানে পূজোর অর্থ ইবাদত করিয়া আমার তুলতুলে নরম বদনে শিরকের গন্ধ লাগাইয়া দিয়েন না আবার। যাহাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা যায়, যিনি অনুকরণীয়, তিনিই হাকিকতে গুরু। চণ্ডালী শব্দের অর্থ খুঁজিতে গিয়া অভিধানে পাইলাম, ‘চণ্ডাল জাতের বা বংশের রমণী’। পূজনীয় ব্যক্তির সহিত চণ্ডাল জাতের রমণীকে বাঁধিয়া কোন হেতু ইহাকে সাধু-চলিত রীতির মিশ্রণের নাম বলিয়া অভিধানবেত্তাগণ ধার্য করিয়াছেন, তাহা আর অনুসন্ধান করিয়া পাইলাম না।

যাহারা সুপণ্ডিত, তাহারা বলিবেন, গুরুরা যাহা বলিয়া গিয়াছেন, তাহা শ্রবণ কিংবা পঠন করিয়া তাহাদের মত করিয়া তাহাকে জানিতে কিংবা চিনিতে হইবে। সুতরাং এক্ষণে কিতাব লইয়া যদি শব্দটাকে ভাঙিয়া দেখাইয়া বলি যে, গুরুরা গুরুভুল করিয়াছেন। গুরুচণ্ডালী শব্দের অর্থ তাহারা যাহা করিয়াছেন, তাহা সঠিক নহে; এর প্রকৃত অর্থ গুরুর সহিত চণ্ডাল জাতের রমণীর সম্বন্ধ, তাহা হইলে আপনারা আমার পশ্চাৎদেশ তথা নিতম্বের ছাল রাখিবেন, না-কি মারিতে মারিতে তাহা তুলিয়া বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করিবেন? আমার দিব্যজ্ঞানে যাহা পাইয়াছি, তাহাতে জানিতে পাইলাম—আপনারা দ্বিতীয় কাজটি করিতেই ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়া ফেলিয়াছেন।

এইসব কথা যদি উড়োজাহাজের মত আপনাদিগের মস্তিষ্কের উপর দিয়া চলিয়া যায়, তবে যাইতে দিন। কিন্তু ইহার পরে যাহা বলিতে চলিয়াছি, তাহা ধীরস্থির হইয়া বসিয়া উত্তর হস্তে চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে বুঝিবার চেষ্টা করুন।

গুরুচণ্ডালী আগেকার দিনে লেখায় সীমাবদ্ধ থাকিলেও সম্প্রতি তাহা রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ভজনালয় কিংবা মসজিদ-মন্দিরেও ছড়াইয়া পড়িয়াছি। ছড়াইয়াছে ধর্মের পবিত্র অঙ্গেও। দেখুন না, সম্প্রতি নবি-কটাক্ষকারীর প্রতিবাদ করিতে যাইয়া তাহাতে তাকবিরের সহিত ইট-পাটকেল, লাঠিসোঁটা থেকে শুরু করিয়া অশ্রাব্য গালিগালাজ পর্যন্ত মিশাইয়া দিয়াছে কথিত ইমানদার নবিপ্রেমিক জনগোষ্ঠী। পোশাক-আশাকের নমুনা দেখিয়াই বুঝিতে পাইয়াছি যে, ইনাদের অধিকাংশ  মূলত তাহারাই, যাহাদের এ দেশের মানুষ সচরাচর ওহাবি বলিয়া জানে। আমার মত অপক্ষ লেখকরা যেরূপ সাধুকে সাধু, চলিতকে চলিত না-রাখিয়া উভয়কে মিশাইয়া গুরুচণ্ডালী করিয়া বসে, অপক্ষ এই সকল আশেকরাও প্রতিবাদের সহিত হিংস্রতাকে মিশাইয়া দিয়া ধর্মচণ্ডালী করিয়া বসিল। ভাগ্যিস, পাক্কা মুমিনের ঔরসে জন্মলাভ করিয়া পাক্কা মুমিনগণের সহিত বাড়িয়া উঠিয়াছি, তাহা না-হইলে ইতোমধ্যে এহেন হিংস্র মনোভাব দেখিয়া ধর্মকর্ম ত্যাগ দিয়া নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করিয়া ফেলিতাম সম্ভবত!

মানিলাম বিপ্লব বাবু মুমিনদিগের প্রাণেরও অধিক প্রিয় নবিকে গালি দিয়াছে। চরম অবমাননা করিয়াছে। ইহাও মানিলাম, তাহা মুমিনদিগের অন্তরে শূলের চাইতেও অধিক বিদ্ধ হইয়াছে। তাহাতে অত্যধিক মনোকষ্ট তাহারা পাইয়াছেন। তাহার অর্থ কি ইহা যে, মুমিনরা গিয়া সরকারি লোকদিগের উপর হামলা করিতে হইবে? মন্দিরে পাথর মারিতে হইবে? সরকারী লোক তথা পুলিশ বাহিনী যে-মাদরাসায় আশ্রয় লইয়াছে, তাহাতে ইট-পাথর মারিয়া ভাসাইয়া দিতে হইবে? তাহাদের রক্তাক্ত করিতে হইবে? বিশ্বকে এই কথা জানাইয়া দিতে হইবে যে, ইসলাম উগ্রতার অপর নাম? মক্কা বিজয়ের কথা কি মুমিনরা এত সহজেই ভুলিয়া গিয়াছে? তাহারা কি ভুলিয়া গিয়াছে যে—তাহাদের নবি মক্কাবিজয়ের দিন ঘোষণা দিয়াছিল, “যাহারা কাবাঘরে আশ্রয় লইবে তাহারা আপদমুক্ত”। কাবা আল্লাহর ঘর হইলে মাদরাসা নবির ঘর বলিয়া যাহারা জ্ঞাত, তাহারা কোন শাস্ত্রমতে মাদরাসায় আশ্রয় গ্রহণ করা পুলিশদিগের উপর হামলা চালাইতে উদ্যত হইল?

কেন, কটাক্ষ কি নবির যুগে হয় নাই? কাফির, মুনাফিক কোন যুগে অধিক ছিল? এই যুগে না-কি সেই যুগে? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া যাহারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করিয়াছেন, তাহারা আমাকে কি এমন কোনো প্রমাণ দেখাইতে পারিবেন, যাহাতে কটাক্ষের পরিবর্তে এহেন লঙ্কাকাণ্ড সাহাবি কিংবা তাবেয়িরা ঘটাইয়াছেন? কোনো মহাপুরুষ-আউলিয়ারা ঘটাইয়াছেন? দেখাইতে কি পারিবেন, কটাক্ষের প্রতিবাদে তাহারা দেশ ও দশের ক্ষতি সাধন করিয়াছেন? এখনকার থানাসমূহ যেইরূপ গ্লাসভাঙা অবস্থায় আপনারা জীর্ণশীর্ণ করিয়াছেন, তৎকালীন মন্ত্রণালয়ের এইরূপ দশা সাহাবিরা কি করিয়াছিলেন?

ইসলামের যাহারা গুরু, তাহাদিগের জীবনাদর্শ হইতে শিক্ষা না-লইয়া, তাহাদিগের দেয়া বিশ্লেষণ না-মানিয়া এহেন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে জিহাদ বলিয়া উপরের গুরু আর চণ্ডালীর বিশ্লেষণের মতন করিয়া কোন চণ্ডালী আপনারা করিতেছেন, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে তাহা কোনোরূপেই ঢুকিতেছে না।

বন্ধুবর সুবোধ বাবু হঠাৎ আপত্তি তুলিলেন, তাহা হইলে কি পুলিশের কোনো দোষ নাই? চার-চারটা প্রাণ যে তাহারা গুলিতে উড়াইয়া দিয়াছে, তাহার দায়ভার কাহার বা কাহাদের? নির্বিচারে যে সাধারণ জনগনকে এইভাবে মারিয়া ফেলিলো, তাহা আপনার চক্ষে পড়িল না?

সুবোধ বাবুর কথা শুনিয়া ঈষৎ হাসি পাইলো। তাহাকে বলিলাম, পুলিশ কি তাহাদের ঘরে গিয়া তাহাদিগকে তুলিয়া আনিয়া গুলি করিয়াছে? না-কি মিছিল করিবার সময় বন্দুকের নলে জীবন কাড়িয়া নিয়াছে? পুলিশকে যদি তাহারা ইট মারিতে মারিতে তিন তলায় তুলিয়া ফেলেন, তাহাতেও যদি পুলিশেরা তাহাদের জীবনের নিশ্চয়তা নিয়া সন্ধিহান হইয়া পড়েন, রাবার বুলেট আর টিয়ারগ্যাস ছাড়িয়াও যদি কথিত মুমিন বাহিনীকে দমাইতে না-পারে, তাহা হইলে গুলি না-করিয়া তাহাদের আর উপায় কী? উপায় একটা ছিল বটে। তাহা হইলো, তাহারা বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যখানে আসিয়া বলিতে পারিতো—“নে ভাই, ঐ শুয়োরের বাচ্চা বিপ্লব কেন কটুক্তি করেছে, তার জন্য আমাদের ইচ্ছামত মেরে নে”। কিন্তু ধরার বুকে এইরূপে প্রাণ উৎসর্গ তো পাগলেও করিবে না। “ইট মারিলে পাটকেল খাইতে হইবে” বাক্যটার একটা বিরাট ও বাস্তবিক ভ্যালু এখনও পর্যন্ত  টিকিয়া আছে বৈ কি।

এক্ষণে আমি কিছু স্মৃতিচারণ করিতে চলিয়াছি। আপনারা মনে করিতে চেষ্টা করুন। আপনাদিগের কি মনে পড়ে, প্রতিবাদের নামে প্রতিহিংসা সৃষ্টিকারী এইসব মুমিনরা গত কিছুবছর পূর্বে ঢাকায় গিয়া মুমিনদেরই একমাত্র ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কুরআন পুড়ানোর ঘটনা ঘটাইয়াছে? আপনাদিগের কি মনে পড়ে এইসব পাঁচকল্লি টুপিধারী মুমিনরা চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ’য় জুতা নিক্ষেপ করিয়া মুসলমানদের প্রধান উপাসনালয়কে অপবিত্র করিয়াছে? মনে কি পড়ে, তাহাদের পূজনীয় এক বক্তা গরম গলায় ফতুয়া মারিয়াছিল—“রাসুল মরিয়া মাটির সহিত মিশিয়া গিয়াছে”? ধর্মের অবমাননা তখন হয় নাই? কটুক্তি কি তখন হয় নাই, যখন তাহারা খোলামাঠে বজ্রকণ্ঠে বলিয়া বেড়াইয়াছিল—“রাসুলুল্লাহ নিরক্ষর ছিলেন, পড়িতে-লিখিতে জানিতেন না, পারিতেন না”। কটুক্তি কি তখন হয় নাই, যখন তাহাদের বয়োবৃদ্ধ ধর্মদেবতা মিলাদের গোশতকে গু তথা পায়খানার সহিত তুলনা করিয়াছিল? কটুক্তি কি তখন হয় নাই, যখন তাহাদের মোল্লারা বিভিন্ন কিতাবে নবিকে “আমার মতন, তোমার মতন, বড়ো ভাইয়ের মতন, তাঁহার জ্ঞান শয়তানের তুলনায়ও কম বলিয়া লিখিয়া দিয়াছিল? কটুক্তি কি তখনও হয় নাই, যখন তাহাদের মদনি সাহেব রাসুলুল্লাহ আছেন কি-না টেবিলের তলে গুঁতাইয়া দেখিয়াছিল? 

কৈ, তখন তো প্রতিবাদ হয় নাই? লাঠিয়াল বাহিনীরা তো তখন লাঠি লইয়া দৌঁড়াইয়া যায় নাই! শফি সাহেব, মদনি সাহেব আর মিজান সাহেবদের কপালে তো তাহারা ইট ছুড়িয়া মারে নাই! উল্টো তাহাদের পক্ষে তবলা বাজাইয়াছিল। যুক্তি দেখাইয়াছিল। টেবিলের তলে রাসুলুল্লাহকে গুঁতাইয়া দেখিবার কালে হাসিয়া হাসিয়া তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিয়াছিল। এতসব বেআদবিকে তাহারা একটিবারও কটুক্তি বলিয়া গণ্য করিল না। রাসুলুল্লাহকে নিরক্ষর বলিবার ভঙ্গিখানা এমন ছিল যে, রাসুলুল্লাহকে মুর্খ প্রমাণ করিতে এই বুঝি একখানা আয়াত আসমান হইতে টানিয়া লইবে! তবু কটুক্তি হইল না। তাহাদের চেতনাদণ্ড দাঁড়াইলো না। কোনো মিছিল-মিটিং কিংবা প্রতিবাদসভা হইল না।

স্বধর্মী কটুক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যাহারা একটিবারও দাঁড়াইলো না, তাহারা একজন বিধর্মী কটুক্তিকারীর বিরুদ্ধে অদ্ভুত চণ্ডালী দোষে দুষ্ট হইয়া এ কীরূপ আন্দোলনে নামিল, তাহার ফলে তাহারাই বা কী ফলাফল লাভ করিল, তাহা আজ অবদি আমার মস্তিষ্কে কেবলই নানান ধাঁধার জন্ম দিয়া চলিল। যাহারা সময়ে-অসময়ে কেবলই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মানসে নবিকে নিয়া নানান আজেবাজে কথা মাঠে বলিয়া বেড়ায়, কাগজে লিখিয়া বেড়ায়, তাহারা যখন বিধর্মী একজনের কটুক্তিতে এমন ফুঁসিয়া উঠিয়া তর্জন-গর্জন করিতে থাকে, তখন মনেমনে সন্দেহ জাগে—ইহারা কি আসলেই নবি-অবমাননার প্রতিবাদে নামিয়াছে, না-কি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাইবার পায়তারা করিতেছে? আমাকে একটি কথা বুঝাইয়া দিন, নিজধর্মের লোকেরা যদি রাসুলুল্লাহর সহিত দিনের-পর-দিন এইরূপ বেআদবি করিতে থাকে, বিধর্মীরা সাহস পাইবে না? কটুক্তি করিতে বিধর্মীদের বুকের পাঠা কি পরোক্ষভাবে তাহারাই বাড়াইয়া দেয় নাই?          

শোন্, কথিত মুমিনের দল৷ পাগলের দুইখানা কথা শুনিয়া যা। আল্লাহর ওয়াস্তে ধর্মকে গুরুচণ্ডালী দোষে আর দুষ্ট করিস না। নবি মুহাম্মদ (দরুদ) যে ধর্ম দিয়াছেন, তাহার শরীর অত্যন্ত পবিত্র। তাহার সহিত অধর্ম মিশাইয়া ইহাকে আর কলঙ্কিত করিস না। জিহাদ করিবার পূর্বে নিজদিগকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন-মুসলিমরূপে গড়িয়া তোল। তাহা হইলে জিহাদ কী; তাহা জানিতে পারিবি, বুঝিতে পারিবি, অনুধাবন করিতে পারিবি। তাহার আগ পর্যন্ত জিহাদ-জিহাদ করিয়া মুখে ফেনা আর নিরীহ কাহারো শরীরে অহেতুক আঘাত করিতে উদ্যত হইস না। কুরআনে বলিয়াছে—
“পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হও।” 
             —আলে ইমরান-২০৮
পাগলে বলিতেছি, আগে তোরা মানুষ হ, তারপর ধার্মিক হইস। 

পরিশিষ্ট ১: সরকার বরাবর সবিনয় নিবেদন—অচিরেই নবি-অবমাননার নির্দিষ্ট দণ্ডবিধান প্রনয়ণ করুন। নতুবা ভবিষ্যতে আরও মহামারি ট্রাজেডি দেখতে হবে। যা কারও কাম্য নয়।

পরিশিষ্ট ২: এতসবের পরেও যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের রুলস মেনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম। গ্রহণ করে ধন্য করবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...