সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শির্কের আড্ডাখানা ৩

শাপলা ফুলের মাজারটা বরাবর দাঁড়ালাম৷ দারুণ কারুকার্য। অনিন্দ্য শিল্পকর্ম। না-জানি কোন কারিগরের দক্ষতা! খরচা যে প্রচুর পড়েছে—তা নিশ্চিত। এত টাকা মাজারে খরচ না-করে গরীব-দুখিদের দিলেই পারতো! যত সব আকামের কাম—ভাবতে ভাবতে চোখটা একটা বাক্সে এসে থেমে গেল। বাক্সে লিখা, “আপনার প্রদত্ত হাদিয়া দুঃস্থ মানবের সেবায় ব্যয় হয়”। চোখ কপালে উঠে উঠে অবস্থা। 

আনমনে দুয়েক কদম পেছনে যেতেই ধাক্কা। ভদ্রলোককে স্যরি বলতে যাবার আগেই—ইট্স ওকে। উল্টো প্রশ্ন—আপনার লাগেনি তো? 
–না না, আমার লাগেনি। তখনও বাক্সের লেখাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। না-চাইতেই বলে বসলাম—দাদা, একটা জিজ্ঞাসা ছিল...
–ভদ্রলোকের সহাস্য উত্তর: জ্বি বলুন।
–ইয়ে মানে, দানবাক্সের ঐ লেখাটার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম।
–পাশের ৬তলা মাদরাসাটা দেখেছেন?
–গলাকে খানিকটা পূর্বদিকে টেনে পড়ার চেষ্টা করলাম। বড়ো করে একটা সাইনবোর্ডে লিখা—”মাদরাসা-এ গাউসুল আআজম”। ওটার কথা বলছেন?
–হ্যা, ওটা-ই। এ মাজারওয়ালার নামে যে ট্রাস্ট আছে, সে ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত। মানে এই বাক্স যারা লাগিয়েছে, তারাই পরিচালনা করে। আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে, এ সংস্থা ও এখানকার অন্যান্য সংস্থা মিলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০০টির মত মাদরাসা, ফোরকানিয়া, হেফজ ও এতিম খানার পরিচালনা করে থাকে। দরবারের অভ্যন্তরেই আছে এরকম ৬তলা বিশিষ্ট ৩টা। শুধু তা-ই নয়, এখান থেকে প্রতিবছর বহু গরীব-দুখিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়।
–বিভিন্নভাবে বলতে?
–এই ধরুন, শীতকাল। আপনার আশেপাশে অনেক গরীব লোক থাকতে পারে, যারা শীতে কষ্ট পায়।
–আছে তো।
–কখনও কি তাদের একটি কম্বল দিয়েছেন? অথবা অব্যবহৃত একটি কাঁথা?
–সামান্য লজ্জিত কণ্ঠে জবাব দিলাম—না, তা তো দেয়া হয়নি।
–দুঃখিত, আপনাকে লজ্জা দেয়া উদ্দেশ্য ছিল না। আপনি দেননি ঠিক আছে, কিন্তু এ সংস্থাগুলো ঠিক-ই দেয়। আবার ধরুন, টাকার অভাবে কারও বিয়ে আঁটকে গেছে। এ সংস্থাগুলো খবর পেলে সহযোগিতা করে। এমন উদাহরণ প্রচুর দেয়া যাবে। এভাবেই জনকল্যাণমুখী নানাকাজে নানাভাবে এ সংস্থাগুলো কাজ করে থাকেে।

ভাবনার পারদ আবারও নেমে এলো। আগে জানতাম এখানে কেবল মাজার আর মাজার। আর কিছুই নেই। অথচ কতকিছুই-না আছে। কতকিছুই না হচ্ছে এখানে। আর আমরা? শির্ক-বেদাত ছাড়া কিছুই দেখি না! কোথা থেকে যেন আওয়াজ আসছে—
“মাইজভাণ্ডারে কী ধন আছে চামড়ার চোখে দেখবি না
প্যাঁচারও নয়ন আছে; তবু দিনে দেখে না।”

–জনাব, আপনার কি আর কিছু জানার আছে?
–হঠাৎ প্রশ্নে হঠাৎ ঘাবড়ে গিয়ে আনমনে বলে ফেললাম—আপনার নামটা?
–ইয়াকুব।
–আপনি কি এ সংস্থার কেউ?
–জ্বি না, আমি এ সংস্থার কেউ না। অন্য সংস্থার হয়ে কাজ করি৷ চলি...

চলি বলে লোকটা চলেই গেলো। আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম, ভাই ইয়াকুব, আপনি আমাকে বেকুব বানিয়ে ছাড়লেন।

মিলাদ-কিয়াম-মোনাজাত ইতোমধ্যে শেষ।
সবাই মাজারের দিকে ছুটছে। আমি একপাশে শক্ত করে দাঁড়ালাম৷ শক্ত করে বলতে কোমর বেঁধে। এবার নিশ্চয় পূজো শুরু হবে...
(চলবে...)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...