শাপলা ফুলের মাজারটা বরাবর দাঁড়ালাম৷ দারুণ কারুকার্য। অনিন্দ্য শিল্পকর্ম। না-জানি কোন কারিগরের দক্ষতা! খরচা যে প্রচুর পড়েছে—তা নিশ্চিত। এত টাকা মাজারে খরচ না-করে গরীব-দুখিদের দিলেই পারতো! যত সব আকামের কাম—ভাবতে ভাবতে চোখটা একটা বাক্সে এসে থেমে গেল। বাক্সে লিখা, “আপনার প্রদত্ত হাদিয়া দুঃস্থ মানবের সেবায় ব্যয় হয়”। চোখ কপালে উঠে উঠে অবস্থা।
আনমনে দুয়েক কদম পেছনে যেতেই ধাক্কা। ভদ্রলোককে স্যরি বলতে যাবার আগেই—ইট্স ওকে। উল্টো প্রশ্ন—আপনার লাগেনি তো?
–না না, আমার লাগেনি। তখনও বাক্সের লেখাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। না-চাইতেই বলে বসলাম—দাদা, একটা জিজ্ঞাসা ছিল...
–ভদ্রলোকের সহাস্য উত্তর: জ্বি বলুন।
–ইয়ে মানে, দানবাক্সের ঐ লেখাটার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম।
–পাশের ৬তলা মাদরাসাটা দেখেছেন?
–গলাকে খানিকটা পূর্বদিকে টেনে পড়ার চেষ্টা করলাম। বড়ো করে একটা সাইনবোর্ডে লিখা—”মাদরাসা-এ গাউসুল আআজম”। ওটার কথা বলছেন?
–হ্যা, ওটা-ই। এ মাজারওয়ালার নামে যে ট্রাস্ট আছে, সে ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত। মানে এই বাক্স যারা লাগিয়েছে, তারাই পরিচালনা করে। আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে, এ সংস্থা ও এখানকার অন্যান্য সংস্থা মিলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০০টির মত মাদরাসা, ফোরকানিয়া, হেফজ ও এতিম খানার পরিচালনা করে থাকে। দরবারের অভ্যন্তরেই আছে এরকম ৬তলা বিশিষ্ট ৩টা। শুধু তা-ই নয়, এখান থেকে প্রতিবছর বহু গরীব-দুখিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়।
–বিভিন্নভাবে বলতে?
–এই ধরুন, শীতকাল। আপনার আশেপাশে অনেক গরীব লোক থাকতে পারে, যারা শীতে কষ্ট পায়।
–আছে তো।
–কখনও কি তাদের একটি কম্বল দিয়েছেন? অথবা অব্যবহৃত একটি কাঁথা?
–সামান্য লজ্জিত কণ্ঠে জবাব দিলাম—না, তা তো দেয়া হয়নি।
–দুঃখিত, আপনাকে লজ্জা দেয়া উদ্দেশ্য ছিল না। আপনি দেননি ঠিক আছে, কিন্তু এ সংস্থাগুলো ঠিক-ই দেয়। আবার ধরুন, টাকার অভাবে কারও বিয়ে আঁটকে গেছে। এ সংস্থাগুলো খবর পেলে সহযোগিতা করে। এমন উদাহরণ প্রচুর দেয়া যাবে। এভাবেই জনকল্যাণমুখী নানাকাজে নানাভাবে এ সংস্থাগুলো কাজ করে থাকেে।
ভাবনার পারদ আবারও নেমে এলো। আগে জানতাম এখানে কেবল মাজার আর মাজার। আর কিছুই নেই। অথচ কতকিছুই-না আছে। কতকিছুই না হচ্ছে এখানে। আর আমরা? শির্ক-বেদাত ছাড়া কিছুই দেখি না! কোথা থেকে যেন আওয়াজ আসছে—
“মাইজভাণ্ডারে কী ধন আছে চামড়ার চোখে দেখবি না
প্যাঁচারও নয়ন আছে; তবু দিনে দেখে না।”
–জনাব, আপনার কি আর কিছু জানার আছে?
–হঠাৎ প্রশ্নে হঠাৎ ঘাবড়ে গিয়ে আনমনে বলে ফেললাম—আপনার নামটা?
–ইয়াকুব।
–আপনি কি এ সংস্থার কেউ?
–জ্বি না, আমি এ সংস্থার কেউ না। অন্য সংস্থার হয়ে কাজ করি৷ চলি...
চলি বলে লোকটা চলেই গেলো। আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম, ভাই ইয়াকুব, আপনি আমাকে বেকুব বানিয়ে ছাড়লেন।
মিলাদ-কিয়াম-মোনাজাত ইতোমধ্যে শেষ।
সবাই মাজারের দিকে ছুটছে। আমি একপাশে শক্ত করে দাঁড়ালাম৷ শক্ত করে বলতে কোমর বেঁধে। এবার নিশ্চয় পূজো শুরু হবে...
(চলবে...)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন