সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শির্কের আড্ডাখানা

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন

কানাই বাবু তার ছেলেকে বকছেন। গালমন্ধও চলছে উচ্চস্বরে। থামাথামি নেই, যাচ্ছেতাই বলে চলেছেন। ঐটা শির্কের আড্ডাখানা। ঐহানে সব শির্ক আর বেদাত। দিনরাত পুজা অয়। ক্যান গেছস? কার পারমিশনে? ভবিষ্যতে গেলে ঠ্যাঙ ভাইঙ্গা দিব। প্রয়ওজনে ঘরে বসাইয়া খোঁড়া পালবো। 

বসে বসে চিনা-বাদাম চিবুচ্ছিলাম। কানাই বাবুর গর্জন শোনে ইচ্ছে জাগলো—শির্কের আড্ডাখানাটা একটু দোখে আসবো। সিদ্ধান্ত নিলাম। আজ না-হয় কাল যাবোই। গিয়ে একবার দেখে আসবো। শির্কের সে আড্ডাখানার হাল-হালত কীরূপ। কতটা জঘন্য তারা। আল্লাহ বাদ দিয়ে মানুষ-পুজা? হায় আপসোস! নিয়ত করলাম। নিজ চোখেই দেখে আসবো। সুযোগ-সুবিধে পেলে দুয়েকজনকে তাবলিগের পথে আহ্বান জানাবো।

শুক্রবার ছুটির দিন। এ দিনটাই পারফেক্ট। ১০টা নাগাদ বের হলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা। অক্সিজেন মোড়ে যেতেই এক কন্ট্রাক্টরের চিল্লানি, ‘দরবাড্ডায়েক, দরবাড্ডাইয়েক’। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম—এটা কোন জায়গা? আগে তো নাম শুনিনি। বলেন কী মিয়া, দরবারের নাম শুনেননি? আরে মাইজভাণ্ডার যাবে, মাইজভাণ্ডার। 

বাসে চেপে বসলাম। দরবাড্ডায়েক আর মাইজভাণ্ডারের হিসাব কিছুতেই মিলছিল না। কন্ট্রাক্টর আবারও চেচিয়ে উঠলো, দরবার ডাইরেক, দরবাড্ডাইরেক, দরবাড্ডায়েক। ওমা, এ দেখি মহা মুসিবত। বাক্যটা প্রথমাবস্থায় যা, শেষে তার অর্ধেকই অবশিষ্ট নাই। দরবার ডাইরেক হয়ে যাচ্ছে দরবাড্ডায়েক! গুজব কি এভাবেই ছড়ায়? ব্যাকরণ মিলাতে চাইলাম, মিললো না। এ ব্যাটা ব্যাকরণ মিলিয়েই বা কী করবে? তার পেসেঞ্জার মিললেই চলে। 

অন্যান্য যাত্রীরাও ওঠছে। অধিকাংশই পাঞ্জাবি-টুপি ওয়ালা। বাস ছাড়লো। চলে তো চলে না, হেঁইয়ো। কিছুক্ষণ পরপর থামে। দুয়েকজন ওঠে, আবার চলে। একেই বলে ডিরেক্ট বাস। দরবাড্ডায়েক, হাহাহা!

অবশেষে সাধের সাম্পান ঘাটে ভিড়লো। কানাই বাবুর সম্বোধিত ‘শির্কের আড্ডাখানায়’ পৌঁছলাম। বেলা বারোটা। সূর্য ঠিক মাথার উপর। কাঠফাটা রোদ। গেইট দেখা যাচ্ছে। গেইটে লেখা, ‘শান-এ গাউছিয়া আহমদিয়া’। শির্কের প্রথম স্টেপ পার করলাম। মানে গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লাম। আশেপাশে অনেক মানুষ। রাস্তার দুধারে কারুকার্যমণ্ডিত সব দালান। মতলবী পা দিয়ে সামনে এগোতে থাকলাম। কিছুদূর যেতেই একটা সাইনবোর্ডের সামনে আঁটকে গেলাম৷ ‘মাইজভাণ্ডারী রহমানিয়া মঈনিয়া দাখিল মাদরাসা।’ ঘটনা কী? আমি জানতাম এখানে মাজার আর মাজার। মাদরাসাও আছে দেখছি। তারমানে, মাজারের পয়সায় মাদরাসা চলে? কী জানি, চললেও চলতে পারে। মাজারে তো আর টাকার অভাব নাই। ব্যবসা এরা ভালো জানে।

নাহ, অত ভেবে কাজ নেই। সামনে আগানো যাক। দুকদম যেতেই থ। মসজিদ। তাও আবার চার তলা। (চলবে...)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...