সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শির্কের আড্ডাখানা ৪

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন (পর্ব-৪)

মিলাদ-কিয়াম-মোনাজাত শেষ।
সবাই মাজারের দিকে ছুটছে। আমি একপাশে শক্ত করে দাঁড়ালাম৷ শক্ত করে বলতে কোমর বেঁধে। মাহেন্দ্রক্ষণে বোধয় এসে পড়েছি। এবার নিশ্চয় পূজো শুরু হবে। দেখি কী হয়। চতুর্দিক থেকে মাইকের আওয়াজ শুরু। চতুর্দিক থেকে বলতে (সম্ভবত) যতটা মাজার আছে ততদিক থেকে। 

“আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর রাহমানির...।” পূজোর শব্দগুলো পরিচিত মনে হচ্ছে। কোথায় যেন আছে?আরিব্বাস! এ তো সুরা ফাতেহা। পূজোয় সুরা ফাতিহা পড়া হয় জানা ছিল না। আজ প্রথমবার জানলাম। বাহ! এই না-হলে পূজো! পূজোর সিস্টেম এত দারুণ হলে তো পূজো-ই ভালো। কেন জানি আমারও পূজো দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল। 

সামলালাম নিজেকে। কানপেতে শুনে আছি৷ সুরা ফাতিহা শেষ, সুরা ইখলাস শুরু। শুরু যে হলো আর বোধয় শেষ নেই। ইয়াসিন, আয়াতুল কুরসি, দরুদ শরিফ। একের-পর-এক চলতেই আছে। এরা কি আজ থামবে না? না, থামলো। বেদাতটা আবার শুরু হইছে। “ইয়া নবি সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম...”

মনে হঠাৎ প্রশ্ন জেগে উঠলো, এরা তো নবিকে সালাম দিচ্ছে। সে তো আমরা ‘নামাজের মধ্যে’ প্রতিদিন-ই দিই! “আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়ু...” আচ্ছা, সাহাবি-তাবেয়িরা কি নবিকে সালাম দিতো না? দিত, অবশ্যই দিত। ‘কুরুনে ছালাছা’র আমল-ই তো৷ তাহলে আমরা বেদাত বলি কেন? ওহ, এরা দাঁড়িয়ে দিচ্ছে। এটাই সম্ভবত বেদাত! ধুর, কী-সব আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের হুজুররা যা বলেছে তা-ই ঠিক।

নিকটস্থ হুজুরটা মোনাজাত ধরেছে। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। “রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা... আরবি শেষ। বাংলায় শুরু। “ইয়া আল্লাহ! আমাদের সকল ইবাদত বন্দেগি কবুল করে নিন। সোনার মদিনায় পৌঁছে দিন। রিজিক, ধনদৌলত, মানসম্মান বাড়িয়ে দিন। যে অবস্থায় থাকলে আপনি খোদা সন্তুষ্ট, সে অবস্থায় রাখুন। আমাদের ফরিয়াদি আপনার মকবুল অলি জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর উসিলায় কবুল করুন...”

ব্যাটা করলোটা কী? সবকিছুতে জল ঢেলে দিল? হঠাৎ জিয়া বাবার উসিলা নেয়ার কী দরকার ছিল? আল্লাহকে বলতে কি উসিলা লাগে? সরাসরি বললে কী হয়? আল্লাহ তো মুজীব। সবার ডাকে সাড়া দেন। তাইলে উসিলা লাগবে ক্যান? নাহ, এরা আসলেই বেদাতি। এখানে আর থাকা যাবে না। সামনে এগোই। ওহ, সামনে তো আগানো যাবে না। পেছনেই যাই।

যেতে যেতে থামলাম। পেছনে পুকুর। আরেকটু গেলে পানির উপর হাঁটা লাগবে। আমার দ্বারা তো সম্ভব না, পানি উল্টো আমার উপর হাঁটবে। পূর্বপার্শ্বে আরেকটি মাজার। বড়ো করে লেখা “বাগে হোসাইন। রওজা শরীফ। দেলাউর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী।” এটাতে জৌলুস কম। উপরে ছাদ নেই। পাশাপাশি কয়েকটি কবর। উত্তরমুখী হয়ে দাঁড়ালাম। দেয়ালে চোখ যেতেই গলা শুকিয়ে কাঠ।

“হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর দিকে উসিলা তালাশ কর–সুরা মায়েদা।”
এ হতে পারে না। উসিলা মানা হারাম। ব্যাটারা নিশ্চয় কুরআনের নামে মিথ্যা চালিয়েছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। সুরা মায়েদায় খোঁজা শুরু করলাম। ৩৬ নং আয়াতে এসে শক্ড। একেবারে হাজার ভোল্টেজের। স্পষ্ট লেখা—‘ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াসিলা’। মাথা ঘুরছে। মাটিতে পড়ে যাবো যাবো অবস্থা। মাজারের “খাদেমের উসিলায়” রক্ষা পেলাম। তিনি আমার ধরে ফেললেন। এ যাত্রায় মাথাটা বাঁচলো...

চলবে...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...