সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শির্কের আড্ডাখানা ২

অত ভেবে কাজ নেই। সামনে আগানো যাক। দুকদম যেতেই থ। মসজিদ। তাও আবার চার তলা। সবেমাত্র ১২টা ১৫ বাজে। মৌলানা সাব বয়ান করছেন। মসজিদ ইতোমধ্যেই ফুলফিল। ভাবছি... পূজা হয় জানতাম, এখন দেখছি নামাজও হয়। কানাই বাবুর কথার সাথে মিলছে না। ঘাবলা আছে। 

মসজিদে জায়গা মিললো না৷ রাস্তায়ও চাটাই পেতে কাতার পূর্ণ। ঘাড় ঘুরাতেই শাপলা ফুল আকৃতির একটি মাজার। দুপা এগোলাম। একটা লেখায় চোখ আঁটকে গেল। “হালাল খাও নামজ পড়ো, আল্লাহ আল্লাহ জিকির করো; সব সমস্যা মিটে যাবে।” বাণীতে বিশ্বঅলি জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী। বাক্যটা পরিচিত মনে হচ্ছিল। কোথায় যেন পড়েছি। পূর্বদিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়লো না। খোঁজাখুঁজি করে একটা পার্ফেক্ট জায়গায় বসে পড়লাম।

এর-ই মধ্যে মাওলানা সাবের বয়ান জমে ওঠেছে। একের-পর-এক কুরআনের আয়াত বিবৃত করছেন। “হে ইমানদারগণ! খাও, আল্লাহপ্রদত্ত রিজিক হতে; যা পবিত্র(হালাল। যা অপবিত্র, তা হালাল নয়)। এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমার প্রকৃতপক্ষে তাঁর ইবাদত করো–সুরা বাকারা-১৭২।” “তোমরা আমার জিকির করো, আমি তোমাদের উত্তম প্রতিদান দেব—বাকারা-১৫২। “তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই বাড়িয়ে দেব–সুরা ইবরাহীম।”

একটু আগে দেখা বাণীর সাথে মিলিয়ে দেখলাম। ব্যাপার মিলে গেল। খাপেখাপ। এটাই খুঁজছিলাম মনেমনে। নাহ, মিলছে না কোনোকিছু। পূজা দেখতে এসে না-জানি আর কী কী দেখতে হয় আজ। মানুষ ক্রমে বাড়ছে। জুমার এত বড়ো জামাআত আমার বাপের জন্মে কম দেখেছি। 

শুনেছি এখানে মাজারে সিজদা করা হয়। এখন দেখছি মসজিদের মিম্বার থেকে শুরু করে রাস্তা, মাঠ কোনোটা বাকি নেই। একটু পর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে সর্বত্র সিজদা হবে। সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাথাকে দুয়েকবার এদিক সেদিক ঝাঁকিয়ে কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম। ইমাম সাহেব মিম্বার থেকে আওয়াজ দিলেন ‘আল্লাহু আকবর-আল্লাহ-ই সর্বোচ্চ’।

নামাজ শেষ। ঘামে ভিজে গমগম অবস্থা। অস্বস্তি লাগছে। মহল্লায় এসিতে পড়ে অভ্যস্ত। এখানকার মানুষ সূর্যের নিচে পড়েও কেমন জানি তৃপ্ত! মিলাদ-কিয়াম শুরু হলো৷ সবাই দাঁড়িয়ে গেল। বিদআত একটা পাইছি। মনে হয় এখান থেকেই বিদআতের শুরু। বাকিগুলো ধীরেধীরে দেখতে পাবো সম্ভবত! আহ! স্বস্তি! অনেক্ষণ পর।

ফাঁকফোকর দেখে আস্তে আস্তে পেছনে সরতে লাগলাম। ওরা বিদআত করুগ্গা। এসবে আমার কাজ নাই। বিদআত পাই গেছি, এবার শির্কটা খোঁজে পেলেই হলো। শাপলা ফুলের মাজারটা বরাবর দাঁড়ালাম৷ দারুণ কারুকার্য। এত টাকা মাজারে খরচ না-করে গরীব-দুখিদের দিলেই পারতো! যত সব আকামের কাম—ভাবতে ভাবতে চোখটা একটা বাক্সে এসে থেমে গেল।

(কী ছিল সে বাক্সে—আসছে পরের পর্বে)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...