অত ভেবে কাজ নেই। সামনে আগানো যাক। দুকদম যেতেই থ। মসজিদ। তাও আবার চার তলা। সবেমাত্র ১২টা ১৫ বাজে। মৌলানা সাব বয়ান করছেন। মসজিদ ইতোমধ্যেই ফুলফিল। ভাবছি... পূজা হয় জানতাম, এখন দেখছি নামাজও হয়। কানাই বাবুর কথার সাথে মিলছে না। ঘাবলা আছে।
মসজিদে জায়গা মিললো না৷ রাস্তায়ও চাটাই পেতে কাতার পূর্ণ। ঘাড় ঘুরাতেই শাপলা ফুল আকৃতির একটি মাজার। দুপা এগোলাম। একটা লেখায় চোখ আঁটকে গেল। “হালাল খাও নামজ পড়ো, আল্লাহ আল্লাহ জিকির করো; সব সমস্যা মিটে যাবে।” বাণীতে বিশ্বঅলি জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী। বাক্যটা পরিচিত মনে হচ্ছিল। কোথায় যেন পড়েছি। পূর্বদিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়লো না। খোঁজাখুঁজি করে একটা পার্ফেক্ট জায়গায় বসে পড়লাম।
এর-ই মধ্যে মাওলানা সাবের বয়ান জমে ওঠেছে। একের-পর-এক কুরআনের আয়াত বিবৃত করছেন। “হে ইমানদারগণ! খাও, আল্লাহপ্রদত্ত রিজিক হতে; যা পবিত্র(হালাল। যা অপবিত্র, তা হালাল নয়)। এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমার প্রকৃতপক্ষে তাঁর ইবাদত করো–সুরা বাকারা-১৭২।” “তোমরা আমার জিকির করো, আমি তোমাদের উত্তম প্রতিদান দেব—বাকারা-১৫২। “তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই বাড়িয়ে দেব–সুরা ইবরাহীম।”
একটু আগে দেখা বাণীর সাথে মিলিয়ে দেখলাম। ব্যাপার মিলে গেল। খাপেখাপ। এটাই খুঁজছিলাম মনেমনে। নাহ, মিলছে না কোনোকিছু। পূজা দেখতে এসে না-জানি আর কী কী দেখতে হয় আজ। মানুষ ক্রমে বাড়ছে। জুমার এত বড়ো জামাআত আমার বাপের জন্মে কম দেখেছি।
শুনেছি এখানে মাজারে সিজদা করা হয়। এখন দেখছি মসজিদের মিম্বার থেকে শুরু করে রাস্তা, মাঠ কোনোটা বাকি নেই। একটু পর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে সর্বত্র সিজদা হবে। সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাথাকে দুয়েকবার এদিক সেদিক ঝাঁকিয়ে কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম। ইমাম সাহেব মিম্বার থেকে আওয়াজ দিলেন ‘আল্লাহু আকবর-আল্লাহ-ই সর্বোচ্চ’।
নামাজ শেষ। ঘামে ভিজে গমগম অবস্থা। অস্বস্তি লাগছে। মহল্লায় এসিতে পড়ে অভ্যস্ত। এখানকার মানুষ সূর্যের নিচে পড়েও কেমন জানি তৃপ্ত! মিলাদ-কিয়াম শুরু হলো৷ সবাই দাঁড়িয়ে গেল। বিদআত একটা পাইছি। মনে হয় এখান থেকেই বিদআতের শুরু। বাকিগুলো ধীরেধীরে দেখতে পাবো সম্ভবত! আহ! স্বস্তি! অনেক্ষণ পর।
ফাঁকফোকর দেখে আস্তে আস্তে পেছনে সরতে লাগলাম। ওরা বিদআত করুগ্গা। এসবে আমার কাজ নাই। বিদআত পাই গেছি, এবার শির্কটা খোঁজে পেলেই হলো। শাপলা ফুলের মাজারটা বরাবর দাঁড়ালাম৷ দারুণ কারুকার্য। এত টাকা মাজারে খরচ না-করে গরীব-দুখিদের দিলেই পারতো! যত সব আকামের কাম—ভাবতে ভাবতে চোখটা একটা বাক্সে এসে থেমে গেল।
(কী ছিল সে বাক্সে—আসছে পরের পর্বে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন