সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দয়াময়

দয়াময়
(কাব্যানুবাদ: সুরা আর-রহমান)
—মুহাম্মদ সৈয়দুল হক
আল্লার নামে শুরু, যিনি সবাকার—
করুণার পারাবার, কৃপার আধার।
সীমাহীন দয়াময়—শেখালো কুরান,
সৃজিয়া মুহাম্মদ—সেরা ইনসান।
সৃষ্টির আদি হতে অন্তের জ্ঞান
আছে যত সবটাই করেছেন দান।
রবি শশী চলে তাঁর নিয়মে নিরব,
গাছপালা তরুলতা সিজদায় সব।
উন্নত করেছেন আকাশের ধার,
উপমায় যেন তা-ই দাঁড়িপাল্লার।
করো না, করো না কভু লঙ্ঘন তার
পরিমাপে নীতি মেনো দাঁড়িপাল্লার।
ধরণী সৃজন করে মানবের তরে
ভরেছে সেথায় ফল আর খর্জুরে।
আবরণে শস্য ও ফুলের বাহার,
ওহে জীন, ওহে ইনসান, বলো—
অস্বীকার করবে কী, রব-তায়ালার?
শক্ত মাটির দ্বারা গড়ে ইনসান,
আগুনের শিখা হতে জিন-উত্থান।
বলো তবে বলো ওরে জিন-ইনসান,
মানিবে না প্রভুজীর কোন কোন দান?
পূর্ব ও পশ্চিমে আছে যত কিছু
প্রভু তিনি সকলের, বাকি সবি নিচু।
প্রভু তব দিয়াছেন দয়া এই ভবে,
বলো সবি অস্বীকার করবে কীভাবে?
প্রবাহিনী পাশাপাশি নিরবধি বয়,
মিশে না-তো কভু তারা থাকে অক্ষয়।
অগোচরে সকলের বেঁধেছি সে বাঁধ
নাহি যেন মিশে কভু চলে কাঁধে-কাঁধ।
মানব-দানব সবে এসে বলে যাও—
কোন দয়া আছে বাকি—সে হিসাব দাও।
তরঙ্গ এসে যেথা মিশে একাকার,
প্রবাল ও মুক্তার সেথা ভাণ্ডার।
বলো তবে বলো ওহে মানব-দানব,
অস্বীকার করবে কি—যা দিলেন রব?
সমুদ্রে ছোটে চলে নৌকা-জাহাজ
হেলেদোলে নিয়ে গায়ে পর্বত সাজ।
প্রভুজীর দেয়া সব দান-অনুদান,
করবে কি অস্বীকার জিন-ইনসান?
ধ্বংসের স্বাদ নেবে সৃষ্টির সব,
বাকি রবে স্বমহিম মহিয়ান রব।
তবু কিরে অস্বীকার করবে সে-সব?
যত দয়া করেছেন তোমাদের রব।
আকাশ-পাতালে যত ছায়া আর কায়া,
সবি তাঁর কাছে চায় ভিখ আর দয়া।
চাওয়া-পাওয়া আছে যত সেই সকলের,
দিয়ে চলে অবিরত প্রভু তোমাদের।
কোন কোন দয়া বলো বাকি আছে আর—
করবে যা অস্বীকার দাতা-আল্লার।
দেয়া শেষে অবসরে হিসাবের পার
অস্বীকার করবে কী, প্রভুর দয়ার?
চাও কি হে জিন আর মানুষের দল,
আকাশ-পাতাল ছেড়ে পালাবে সকল?
যাও যাও যাও তবে যাও বহুদূর,
যাবে কোথা, সবি মম রাজ্যের পুর!
বলো তবে কোন কোন দান-অবদান,
অস্বীকার করবে হে জিন-ইনসান!
ছোড়া হবে যেইদিন ধোঁয়া আর শিখা
পারবে না পাল্টাতে কপালের লিখা।
সেই প্রভু দিলো যিনি দয়া অফুরান
কোন কোন দান তাঁর আছে অজ্ঞান?
বিদীর্ণ হবে যবে সাত আসমান,
ছেঁয়ে যাবে লালে লাল গোলাপ সমান।
বলো এসো প্রভুজীর কোন কোন শান,
অস্বীকার করবে হে জিন-ইনসান!
জিজ্ঞাসা হবে না-গো রোজ-কিয়ামত,
মানুষ আর জিন কার পাপ কত শত্।
সেদিনের কথা বলো—কোন বিধিমতে
করবে গো অস্বীকার রব-নিয়ামতে?
উঠবে সে পাপরাশি চেহারায় ভেসে,
ছুড়ে দেবে হাত আর চুল ধরে শেষে।
কী-বা লাভ হবে বলো অস্বীকার করে,
রব দিলো যত দয়া তোমাদের তরে।
এই সে জাহান্নাম, পাপীগণ যারে
নেই বলে ছুড়ে দিত অস্বীকার করে।
ফুটন্ত তাহারই জলের উপর
হাবুডুবু খাবে তারা যেন জলচর।
দয়া পেয়ে প্রভুজীর, বলো অতঃপর—
অস্বীকার করবে কি দয়ার ওপর?
........…....…..….........................
তবে যেই করে ভয় রব-সম্মুখে
দাঁড়াবে কীরূপে হায়, কোন সেই মুখে?
সুশোভিত দুইখানা জান্নাত—হেসে
দিবে তারে তাঁর রব অতি সন্তোষে।
তোমার রবের আর কোন কোন দান
করবে গো অস্বীকার ওরে ইনসান।
সে দুখানা পল্লবে মনোরমা পাবে
কোন কোন দয়া তাঁর মেনে নাহি নেবে?
বহমান ঝরনা দু, উভয়ের মাঝে,
তবু তাঁর অস্বীকার কোনরূপে সাজে?
নানারূপ ফলাদিতে ভরা দুইখান
অস্বীকার করবে—সে কোন অবদান?
রেশমের আসনেতে অধিবাসীগণ
বসে বসে খাবে ফল, যত চায় মন।
অস্বীকার করবে হে, কোন সে দয়ার,
তোমাদের প্রভু ঐ এক আল্লার।
লভিবে গো সেবা তাতে সেই সব বীর,
মায়াবি হরিণী-চোখা বিদুষী নারীর।
রবের সে দয়া বলো কোন বিধিমতে
অস্বীকার করবে গো এই ধরণীতে।
রূপবান সে-সকল হুর জান্নাতি
প্রবাল আর পদ্মের মতো মায়াবতি।
পাবে যবে রব থেকে হেন উপহার
কীরূপে গো করবে বলো অস্বীকার।
এ ধরায় করবে যে কাজ হিতকর,
পরকালে ভাবো কি সে, নাহি পাবে বর?
নর-নারী কারা আছে অভিযোগ আন্
রব-তা’লা দেয়নি সে কোন কোন দান?
এ-ছাড়াও আছে আরো দুটি জান্নাত
অনুগ্রহের তাঁর আর কিবা বাদ?
সবুজাব সে দুটির রূপ অনুপম
কৃষ্ণরূপ হেরিতে গোলাপের সম।
সেখানেও আছে দুটি ঝরা-নির্ঝর
তারপরও অনুদানে আপত্তি-স্বর!
আছে আরো ফলমূল, খেজুর, আনার
অস্বীকার করবে কি সে-সব দয়ার?
অকলুষ রূপবান সঙ্গিনীগণ
অপেক্ষা-রত সেথা—ওরে নেক-জন।
এতসব অনুদান দিলো যে রাজন,
অবজ্ঞা করে তাহা কোন সেই জন?
তাবুঘেরা জান্নাতে রক্ষিত হুর,
আর কত উপহারে হবে ভরপুর?
জিন আর মানবেরা ছোঁয়নি যাদের
অপেক্ষা করো তবে সেই নারীদের।
এসো এসো বলে যাও, কোন কোন দান
রব-তা’লা রাখেনাই—ওরে ইনসান।
মনোরম সবুজাব বিছানা-চাদরে
বসে আছে প্রত্যাশে বহুকাল ধরে।
তোমাদের রবে যাহা দিলো অফুরান,
অস্বীকার করবে কি জিন-ইনসান?
(হে হাবিব,)
আপনার রব-নাম বরকতে ভরা
স-মহিম মর্যাদা সবচেয়ে সেরা।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...