সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুফিবাদ বনাম উগ্রতা

সুফিবাদ বনাম উগ্রতা: শান্তির ইসলাম বনাম বাড়াবাড়ি
পনেরো শাবান। ফেসবুকের টাইমলাইন টানছিলাম। চোখে পড়লো এক অদ্ভুত শিরোনাম। “শবে বরাতের একটি রোজা আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট!” আঁতকে ওঠলাম। ঢুকলাম বয়ানে। মাথায় টুপি, চিবুকে দাঁড়িওয়ালা লোকটি বলছে, “শবে বরাত বেদাত। কুরআন-হাদিসের কোথাও নাই। পালন করলে জাহান্নাম নিশ্চিত।” নিচে হেডলাইনে বক্তার নাম দেখি—শায়ক আবদুর রাজ্জাক।
বুদ্ধি-বয়স থেকে শবে বরাতের রোজা বাদ যায়নি কখনও। যেখানে একটি রোজায় জাহান্নাম নিশ্চিত, সেখানে আমার জন্য অন্তত পনেরো-বিশটা জাহান্নাম ইতোমধ্যে বরাদ্দ হয়ে গেছে। হ্যা, বিগত পনের-বিশ বছর ধরেই তো নিয়ম করে পালন করছি শবে-বরাত। আম্মাজান মাগরিবের পরপরই বাড়ির সবাইকে জড়ো করে সিন্নি/হালুয়া পরিবেশন করেন। ওটার পর আবার রুটি-গোশত। এশার আজান দিলে সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে রওনা। ফরজ, সুন্নাত পড়ে আরো বারো রাকাআত নামাজ। চার রাকাআত অন্তে দরুদ-মোনাজাত, তারপর হুজুরের বয়ান। শেষে মিলাদ-কিয়াম। গদগদ কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে মোনাজাত!
এতেই কি শেষ? এসবে সর্বোচ্চ ১১-১২টা বাজে। বাকি সময়টা কবর জিয়ারত, আশেপাশের বুজুর্গ অলিদের মাজার জিয়ারত, কুরআন তিলাওয়াত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তাহাজ্জুদেই কাটে। সাড়ে ৩টা বাজলেই ঘরে ফেরা। মা ততক্ষণে রুটি-গোশত নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো রেডি। কয়েকটা রুটি-গোশত মেরে আবার ভাত। মাঝে মাঝে পেটের চাহিদা না-থাকায় ভাতও আর খাওয়া হতো না। ব্যস, সাহরি খাওয়া শেষ। সুবহে সাদিকের সাথে সাথে রোজা শুরু। ফজরের আজান, জামাআত শেষ ঘুম। দিনশেষে রোজার সমাপ্তি। এই তো, এভাবেই তো কেটে আসছে বহুবছর। কেবল ধর্মীয় নয়, শত শত বছর ধরে এভাবেই তো বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চলে আসছে গাম্ভীর্যের এ রীতি।
কিন্তু হুজুর এটা কি শুনাইলেন? এত বছর ধরে তো শুনিনি। মাথা ৪৫০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরতেছে। তাহলে কি অলি-আল্লাহরা আমাদের ভুল দেখিয়েছেন? যারা আমাদের ইসলাম চিনিয়েছেন, মুসলিম বানিয়েছেন, তারাই ভুলে ছিলেন? এ দেশ যে মগ-শিখ-ব্রাহ্মণদের আতুড়ঘর ছিল। এ দেশ যে হিন্দু-বৌদ্ধদের চারণভূমি ছিল। এ দেশে যে গৌতম বুদ্ধ আর শ্রী-কৃষ্ণের জপনা চলতো।
কৃষ্ণলীলার, মূর্তিপূজার, বহুত্বচর্চার এ ভূমিতে—যে মহাপুরুষগণ এক আল্লাহর জয়গান প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারাই ভুল ছিলেন? ভুল কি ছিলেন শাহ জালাল, শাহ পরান, খান জাহান আলি, শাহ মখদুম, শাহ বদর, শাহ আমানত, শাহ মুহছেন, শাহে মাইজভাণ্ডারীরা? যারা চিনিয়েছেন সাম্যবাদী, মহাত্ম্যা জনমগুরু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, তারাই কি ভুল ছিলেন? মূর্তির সামনে থেকে এনে যারা আমাদের সিজদায় নত করেছেন, তারাই কি ছিলেন ভুলে? ভুলে কি তারাই ছিলেন, যারা আমাদের চিরসত্য ইসলাম, মুরশিদোত্তম মুহাম্মদের পথ, অবিনশ্বর খোদার বাণী শুনিয়েছেন? তারা যে বরাতের বিরোধিতা করেননি। তারা যে এ রাতের ইবাদতে নিষেধ, এ দিনে রোজাতে ক্ষতি—বলে যাননি।
হায়, তারা কি হাদিস-কুরআন কিছু না-জেনেই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষদের মুসলমান বানিয়েছেন? এ উপমহাদেশের প্রাণপুরুষ খাজা চিশতি রা. যে একাই ৯০ লক্ষ মুসলমান বানিয়েছেন! আল্লাহু আকবার!
এভাবে নানান প্রশ্ন যখন মাথায় টোকা দিচ্ছিলো, তখন কয়েক টোকায় ঢুকলাম ইউটিউবে। শবে বরাত লিখে সার্চ করতেই একটা ভিডিও। শিরোনাম ছিল, “শবে বরাত বেদাত নাকি ইবাদাত?” প্লে করতেই দেখি অনেকগুলো হাদিস দ্বারা তিনি শবে বরাতকে ইবাদত হিসাবে সাব্যস্ত করলেন। দ্বন্দ্ব আরো বাড়লো। সামনে গেলাম। আরেক ভিডিওতে। মোল্লা সাহেব বললেন, “সব হাদিস জাল, বানোয়াট, মিথ্যা!” আমি আর যাই কোথায়? আরেকটা ভিডিও। এই মওলানা সাহেব আরেকটু বিস্তারিত বয়ান দিলেন। শবে বরাতের হাদিসগুলো সামনে। এটা সহিহ, এটা হাসান, ওটা মুরসাল, ওটা মুতাওয়াতির! বাপরে, হাদিসের এত প্রকার! বিরোধী বক্তাগণ তো সহিহ ছাড়া কিছুই চেনে না। কুরআনের নামও নেয় না। খালি সহিহ!
এক সহিহ শায়খ আবার যুক্তি দেখালেন—সৌদি আরবে শবে বরাত এভাবে পালন করে না কেন? ভাবলাম, সৌদি আরবে তো আমাদের মতো ভাত খায় না, পোশাক পড়ে না। তাইলে কি না-খাইয়া মরবো, লেঙটা থাকবো? তবু আগ্রহ। সৌদি আরবের ইতিহাসে গেলাম। মাত্র একশ বছর আগের ঘটনা। তখন সৌদি আরব ছিল না। ছিল জাযিরাতুল আবর। ব্রিটিশ-অ্যামেরিকার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করেছিল কুখ্যাত এক বংশ। নাম হলো সৌদ। সেখান থেকে সৌদি আরব। ওহাব নজদীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করলো নতুন মতবাদ। ওহাবিজম! ভাঙলো সাহাবিদের শত শত মাজার। নষ্ট করলো ইসলামের ঐতিহ্য! মানুষের মনে-মগজে ঢুকালে বিষাক্ত এক মতবাদ, নতুন ইসলাম—ওহাবিজম! এই ইজমে উসিলা নাই, মাজার জিয়ারত নাই, কদমবুচি নাই। নাই নাই বলতে পূর্বের ইসলামের অনেক কিছুই নাই। (ভাবছি, শবে বরাতটাও কি এভাবেই কাটা গেছে?) ক্ষমতার ধাপটে, জুলুমের ঝাপটে ছড়ালো আরবময়। এসে গেলো উপমহাদেশেও। অতঃপর... সৌদি রিয়াল আসতে লাগলো। বাড়াবাড়ি শুরু। এটা আছে ওটা নাই৷ মাজার নাই, অলি নাই। সবাই ভণ্ড, সবাই বেদাতি!
যাই হোক, সহিহ হুজুরদের নিয়ে আমার আগ্রহ বাড়লো। জানতে ইচ্ছে হলো। তাই আগালাম সামনে... একটু ঘাঁটা দরকার। দেখা দরকার এরা কী বলে? আগালাম। একেকটা ভিডিও দেখে কয়েক চক্কর ঘুরে ঘুরে পড়তে লাগলাম। সারা বছর তারাবি পড়েছি ২০ রাকাআত, এরা বলছে ৮ রাকাআত! বিতরটাও নাকি ১ রাকাআত! এক নিয়তে নামাজ শেষ করেছি জনমভর। এরা দেখাচ্ছে হাত প্রতি রাকাআতে কয়েকবার করে বাঁধতে হয়! সুরা ফাতিহার পর আমিন অনেক জোরেশোরে বলতে হয়! নিজেকে ইমাম আবু হানিফার অনুসারী বলে জেনেছি ছোটবেলা থেকেই। এরা বলছে মাজহাব মানা যাবে না। আচ্ছা, আমার মতো একজন সাধারণ লোক। যার কিনা কাজী নজরুলের একটা বাংলা কবিতা পড়েও এর ব্যাখ্যা খুঁজতে হয়। না-হলে বুঝতে ঝামেলা বাঁধে। “আমি বিদ্রোহী ভৃগু, স্রষ্টার বুকে এঁকে দেই পদচিহ্ন”—এইটা পড়ে তো আমি নজরুলকে কাফের ঘোষণা দিয়ে ফেলছিলাম। পরে দেখি, ঐটা হিন্দুধর্মের এক দেবতার কাহিনী। বিদ্রোহী ভৃগু তার কথিত ভগবানকে লাত্থি মেরেছিল। সেটা বিদ্রোহী নজরুল তার কবিতার নিজের সত্তার সাথে মিশিয়েছেন।
এই যে, সোজা বাংলার একটা কবিতা। এটা বুঝতেও আমার ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়েছে। অথচ ঐশীবাণী কুরআন-হাদিস বুঝতে নাকি কোনো ব্যাখ্যার দরকার নেই! জানি এবং বুঝি—মাজহাব মানেই ব্যাখ্যাকৃত মতামত। একই বিষয়ে যত দলিল আছে সবটাকে সামনে এনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা। কিন্তু এ তো আমজনতার কাজ না। এখন কি বিলের রাখাল, দোকানের মিস্ত্রি, স্কুল-কলেজের জেনারেল শিক্ষিত, ডাক্তার, উকিল সবাই এ কাজ করতে পারবে? সবার দ্বারা এটি সম্ভব? যেখানে ডাক্তাররা এক বিষয়ে স্পেশালিস্ট হলে অন্যটা জানে না, জানলেও হাত দেয়া বারণ, সেখানে খোদার ঐশীবাণীর ভেদ-অভেদ বোঝে ফেলা যেন ডালভাত! হ্যা, এমনটাই তো বোঝাচ্ছেন শায়খরা। আচ্ছা, ইমাম আবু হানিফা বাদ। আমি না-হয় শায়েখের কথাই শুনলাম। তাতেও কি আমি অনুসরণ করলাম না? অন্যের মতকে গ্রহণ করলাম না? ঘুরেফিরে যে শায়েখের মাজহাবই মানা হচ্ছে! মাজার পূজা না-হলেও শায়েখ-পূজা ঠিকই হচ্ছে। এই কমন সেন্সটা ভেতরে ঢুকে গেল। তাই জানতে চাইলাম এদের পরিচয় কী? কয়েকটা ব্লগ, কিছু পিডিএফে জানতে পারি এরা সালাফি বা আহলে হাদিস বা লা-মাজহাবি! ওহাবিদের একটি শাখা।
এবার আগ্রহ আরো বাড়লো। দেখি, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শায়খরা কে কী বলছেন? করোনা বিষয়ে শায়েখদের মত কী? দৃষ্টিভঙ্গি কী? আমাদের জন্য সাজেশন্স কী? প্রথম বক্তা। নাম কাজী ইবরাহীন। তিনি কী বলছেন শুনি—করোনা ভাইরাসের সাথে আমার এক ভক্তের ইন্টার্ভিউ হইছে। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার! করোনা ভাইরাসের বক্তব্য: সে বিধর্মীদর ছাড়বে না, মুসলমানদের মারবে না! ইসলামের শত্রুদের জীবিত চিবাই খাবে, দুই নাম্বার মুসলমানদেরও মারবে! ব্লা ব্লা ব্লা! শোনে তো একেবারেই থ! আরে, লোকটা মূর্খ নাকি? নাহ, লোকটা দেখি মূর্খ না। আবিষ্কারক। সারা বিশ্ব যারে খুঁজতাছে, সে ভ্যাকসিনের সূত্র বলে দিলেন ফট করে a.q7+6=13! এটাই সূত্র! কিন্তু এর মানে কী? না, তিনি এর মানে এখন বলবেন না। কেন? কেন’র আর উত্তর নাই। হে হে, বলমু না। দেখামু না। চোর-পুলিশ! আরেক ভিডিওতে এটা আবার চেঞ্জ! এবারের আবিষ্কার কবুতর আর মাকড়সার বিশেষ অঙ্গ। সেটাও আবিষ্কারের পথে—আলহামদুলিল্লাহ! আরো এগিয়ে দেখলাম—অতি সম্প্রতি তিনি এন্টার্কুটিক মহাদেশ নামে অষ্টম মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন। সেটা নাকি পৃথিবীর গভীরে। সেটার ভেতরে আবার আকাশ, তারা, সাগর—সব আছে!
গেলাম দ্বিতীয় বক্তার কাছে। নাম আমির হামজা। “কোনো মুসলমানকে যদি করোনা ভাইরাসে ধরে, তবে এ কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে।” আসতাগফিরুল্লাহ! হুজুর এ কি শোনালেন? কুরআন তো তাহলে ইতোমধ্যেই মিথ্যা হয়ে গেছে, নাউজুবিল্লাহ! মসজিদের ইমাম পর্যন্ত মারা যাওয়ার খবর আসছে! খোঁজে দেখলাম, মহামারিতে সাহাবায়ে কেরামও ইনতেকাল করেছিলেন! পরের হুজুরের বক্তব্য। মুফতি নোমান কাসেমী। দুইটা বক্তব্য জোড়া লাগানো। আগের আর পরের। আগেরটা এমন—সারা বিশ্বে নামাজ বন্ধ হবে, বাংলাদেশে হবে না! দ্বিতীয় বক্তব্য: করোনা মোকাবেলায় সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মানুন। ঘরে নামাজ পড়ুন! আমি এবার হাসবো না কাঁদবো বোঝে উঠতে পারছি না।
আরেক বক্তা। নাম তারেখ মনোয়ার। ইনি আবার করোনা নামটার আপডেট ভার্সন আবিষ্কার করেছে—‘ক্যারিনা’। তার আরো কয়েকটা ভিডিও দেখে জানতে পারলাম, তিনি মহান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। নিয়মিত রকেটে করে ঘুরে বেড়ান। ট্রাম্প সাহেবের দাওয়াত খারিজ করেছেন অনেকবার। ১৯৯০ সালটা তার জন্য মিরাকল। একই বছর ইংল্যান্ডের লিগে ফুটবল খেলে মেডেল জিতেছেন। জিতেছেন দেশীয় ব্যাডমিন্টনের শিরোপা। আবার ঐ একই সময়ে অক্সফোর্ডের সেরা টিচার হয়েছেন লাগাতার তিন বার। সেটা আবার তার পরিবারও জানত না! এর ফাঁকে ইংল্যান্ডের মসজিদের ইমামের দায়িত্বও পালন করেছেন! এবার দেখলাম মিজান আজহারির বক্তব্য। সাম্প্রতিক জনপ্রিয় বক্তা। কিন্তু এ কী! তিনিও দেখি জানালেন, করোনা ভাইরাস আল্লাহর সৈনিক! তার সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতেই তার আরো বক্তব্য দেখতে আগালাম। হায় হায়, এ কী বলছেন তিনি? আলি রা. নাকি মাতলামি করতে করতে নামাজ পড়ছেন! মা খাদিজা নাকি ইনটেক্ট ছিলেন না! তালাকা খাওয়া! নবীজি নাকি নিরক্ষর! আসতাগফিরুল্লাহ! আসতাগফিরুল্লাহ! দেখতে দেখতে জানলাম এরা কালেমা থেকে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বাদ দিতে তৎপর! এদের ধারার বাইরে যারা আছে, তাদের রীতিমতো মারতে দৌঁড়য়। হত্যার হুমকি দেয়! কথার আগেই মুশরিক, বেদাতি বলে চিল্লাই। এককথায় চরম উগ্রতা এদের হাঁড়েহাঁড়ে, রক্তে রক্তে, শিরা-উপশিরায়!
মাথা রীতিমতো হ্যাঙ। হায়, এ কোন শায়েখদের পাল্লায় বাংলাদেশ। এ কোন মূর্খদের কাছে শিখছে ইসলাম। দিনদিন কি এভাবেই ইসলামটা হাস্যকররূপে উপস্থাপিত হতে থাকবে? এ ইসলাম কি আসলেই শাহ-জালালের শেখানো ইসলাম? এ ইসলাম কি আসলেই শিখিয়েছেন অলি-আল্লাহরা! তাঁদের দেখানো-শেখানো পথে কি এমন মূর্খতা আমরা দেখেছি কখনো? দল, মত নির্বিশেষে সম্প্রীতির যে মন্ত্র সুফিরা দিয়ে গেছেন, তার সাথে কি এসব ভাড়াটিয়া নতুন শায়েখদের কোনো মিল আছে? বলি, ইসলামটাকে আর কত হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে এদের খায়েস মিটবে? নাস্তিকদের হাতে ইসলামকে আঘাত করার আর কত অস্ত্র এরা তুলে দেবে? সুফিদের শেখানো শান্তির ইসলামে আর কত বাড়াবাড়ি যুক্ত করলে এরা ক্ষান্ত হবে? মস্তিস্ক-বিকৃত এসব ভাড়াটিয়া শায়খদের আমজনতা কবে ত্যাগ করবে? এখনো কি এদের মূর্খতার চূড়ান্ত সীমা জানা হয়নি?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...