সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিত্য অভিযোগ

নিত্য অভিযোগ
—মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

দিনের শেষে সবুর মিয়া
কষে যোগ-বিয়োগ
খোদার কাছে করে চলে
নিত্য অভিযোগ।

তুই খোদাটা বড্ড নিঠুর
আজব রে তোর লীলা
ভাগ্যে আমার রাখলিরে সব
বিড়ম্বনার মেলা।

মাথার উপর অট্টালিকা
তোষক পিঠের নিচে
দিসনি কিছু এই যে আমায়
মিছে রে তুই মিছে।

অভাব-অনটনের এ-ঘর
মাংস পোলাও নাই
অথচ মোর পাশের বাসায়
নিত্য তারা খায়।

গায়ে আমার পুরান জামা
পায়ে ছেঁড়া জুতা
উসকোখুসকো পড়ে রইল
তেল অভাবে মাথা।

রফিক মিয়ার দালান কোঠা
আমার কুঁড়েঘর
বল নারে এ কেমন বিচার
তোর ধরণীর ’পর?
.......................................

ওরে সবুর, ধররে সবর
রাখরে নালিশ-ধুন,
আমার দুয়েক কথাও তবে
এবার একটু শোন।

ভোগ-বিলাসের লাগিই কিরে
বানালাম তোরে,
দেখিসনি তুই কুরআন খুলে
উদ্দেশ্য কী-রে?

বলিনি কি শেষটা ভালো
শুরুর চেয়েও বেশ
আখের-তরে কী জমালি
জীবন তো এই শেষ।

কার কপালে কত দিলাম
হিসাব দিলি শত,
হিসাব একটু দে-না দেখি
ডাকলি মোরে কত?

সকাল-বিকাল কাটে অ তোর
ভোগের হিসাব কষে
দেখছিলি কি একটু কভু
ত্যাগের সাথে মিশে?

এই নেই তোর, ঐ নেই তোর
এইনা জপনা চলে,
কৃতজ্ঞ কি হইছিলি তুই
শোকর-খোদা বলে?

অথচ তোর বাঁচার তরে
আলো-বাতাস-জল
আগুন-মাটি দিচ্ছি মেপে
নিত্য অনর্গল।

এসব থেকে একটা কভু
বন্ধ যদি করি
বল অভাগা কী করে তোর
বাঁচবে জীবন-তরী।

রফিক মিয়া জীবন ভরে
ভাগ্য নেড়েচেড়ে
গড়লোরে ঐ অট্টালিকা
আমার জমির ’পরে

তোর কপালও তোরই হাতে
লিখছি নানান সাজে
কম যে কিছু দেইনি আমি
তোর দুচোখের মাঝে।

কিন্তু অ তুই আলসে ভীষণ
চোখ দুখানা খোলে
দেখলি না তোর কপাল-মাঝে
কোনটা আছে ঝুলে।

তোষক-পরে শুইতে গায়ের
আয়েশ তো তোর জাগে
জানিস কিরে শোবার আগে
তৈরি করা লাগে?

নামাজ শেষে কাজের দেশে
করতে বিচরণ
বলিনি কি কুরআন-মাঝে
ওরে অলুক্ষণ।

নিজের দোষে নিজের ভাগ্য
আস্তাকুঁড়ে ফেলে
দোষ কেন দিস আমার ঘাড়ে
দেইনি কিছু বলে।

যা নেমে পর ভাগ্য-খোঁজে
আমার সালাত পড়ে
রঙ-বেরঙে রাঙবে জীবন
ওই পৃথিবীর ’পরে।

যা-যা আছে, তাতেই খুশি-
কৃতজ্ঞতায় পেলে
কুরআনে ঐ করছি প্রচার
বাড়িয়ে দিব বলে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মটা যে ধর্ম নেই

ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক ধর্মটা যে ধর্ম নেই আর চর্ম কেবল আছে তা’য়, ধর্মমূলের কর্ম সকল দূর হয়েছে অচিন গাঁ’য়। জুব্বা টুপি পাগড়ি সবি বাড়ছে ক্রমে দিনে-দিন, মানুষগুলো হচ্ছে কেবল মুহাম্মদের ধর্মহীন (দরুদ)। তথ্যমতে নিত্য যারা গরীব-দুখীর ভাত মারে, গিয়ে দেখো ইদ-জুমাতে তারাই প্রথম কাতারে। যেই হুজুরে দিন-দুপুরে হালাল-হারাম বয়ান দেয়, দুই থেকে চার পয়সা পেলে ইমানখানাও বেইচা দেয়। পীর-সাধক আর ধর্মগুরুর বাড়ছে অভাব নিত্যদিন, পাত্র দেখে ছাত্র পোষে পীর নিজে বেশ ধর্মহীন। সহিহ হাদিস করছে হদিস দিনমজুর আর দিন-ফকির, মুহাদ্দিস আজ কলেজ-বালক ডাক্তারে-ও মুফাস্সির। প্রাথমিকের বাল-বালকে কাফের বলে রায় ছাড়ে, সোশ্যাল মামুর এই জগতে কার সাথে আর কে পারে! গাঞ্জা খেয়ে মঞ্চে উঠে পাঞ্জা দোলায় দেয় বয়ান, মোল্লা-মুনসির এই দশাতে যাবে কোথায় মুসলমান? কেউবা খেলে ফুটবল আবার কেউবা চড়ে রকেটে, দর্শকে কয় মারহাবা-জী হাদিয়া ভরুন পকেটে। সকাল থেকে রাত অবদি, রাত্র থেকে সকাল-তক, দীনটা ছিল সবটা-জুড়ে সবটা যেন থাকে হক। কর্ম যত ধর্ম সবি বলছে কুরআন মজিদে, অকর্মা...

পথে পথে-২

পথে পথে-২ ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতিতে চড়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছলাম। সাথে আছে সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যে নবী-বন্দনা এবং নজরুলের মুনশিয়ানা’র লেখক আবু সাইদ এবং স্নেহাস্পদ মুকিম। যাবো আল্লামা বাকি বিল্লাহ (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদরাসায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। পার হতে হবে। ঘাটে নৌকার হুড়োহুড়ি। দু-তিনজন মাঝি একসাথে ডাকাডাকি করছে—আয়েন হুজুর আয়েন। নিজেকে ভিআইপি ভিআইপি মনে হচ্ছে। পেছন পেছন আরও কিছু লোকের আগমন। মাঝিরা এবার আমাদের ছেড়ে ওদের ডাকছে। বুঝলাম—এ ঘাটে যারা আসে সবাই ভিআইপি। অতিরিক্ত ভাবসাব বাদ দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। উঠেই গান শুরু— “বাঁশখালিইইইই, মইশখালি      পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুরগুরাই টানে— হন হন যাবি আঁর সাম্পানে। কর্ণফুলীর মাঝি আঁই   নিয়ুম ভাটি-উজানে, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে ও তোরা, হন হন যাবি আঁর সাম্পানে।” মুকিম রসিকতার সুরে বললো—“ভণ্ডামি বাদ দেন ভাই, এটা কর্ণফুলী না; বুড়িগঙ্গা।” তার পিঠে কষে এক চড় দিয়ে বললাম—আবে হালা, ঢাকাইয়ারা বুড়িগঙ্গা নিয়া না-লেইখলে মুই কী করবাম? আবু সাইদের মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বাড়ি কুমিল্লা...

ধ্রুব

ধ্রুব ধ্রুব চা খাচ্ছিল। খেতে খেতে ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খাচ্ছে। কোনটা আগে? ভাবনা না খাওয়া? খাওয়া না ভাবনা? আরে, এটা তো পান করার জিনিস; খাচ্ছে কেন? যাব্বাবা, কী যে মাথামুণ্ডু ভাবছে—কে জানে! পানকে খাওয়া ভেবে ভাবনার অপমান হয়েছে ঢের। আর না। এবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। হে হে, মনোযোগ দেবার আগেই মনোভাব পাল্টে গেল? আবারো খাওয়া? ভাবনার মান-ইজ্জত একেবারে শেষ। কিন্তু না, এভাবে শেষ হতে পারে না। সে ভাবুক৷ ভাবনার অপমান সে হতে দেবে না। প্রয়োজনে পানকে যে-কোনো রীতিতে খাওয়া বানিয়ে ছাড়বে। আচ্ছা, চা’কে বিরিয়ানি ভাবলে কেমন হয়? হাঁ, বিরিয়ানি ভাবলেই হয়ে যায়। খাওয়া-পানের দ্বন্দ্ব শেষ। তা-ছাড়া চা আর বিরিয়ানির কালারটা কাছাকাছি। বিরিয়ানিতে ঝোল ঢালা হোক। মাখামাখি করে পান্তাভাত বানানো যাক। এবার পান্তাভাতের তরিকায় পুরুত পুরুত টানা যাক। আহা! সে কী স্বাদ, সে কী স্বাদ! ধ্রুব এবার চিৎকার দেয়—পৃথিবী বিরিয়ানির, পৃথিবী বিরিয়ানির। চায়ের কাপটা আর কাপ নেই। আকাশের বুকে সুসজ্জিত থালা। থালাটা আবার চাঁদের মতো। সে চাঁদে ঝিলিক মারছে। চাঁদটাকে একবার ডানহাতে, আবার বাঁহাতে। সেটাকে আবার কিছুক্ষণ পরপর মুখে পুরে লম্বা চুমুক। চু...