সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রশংসিত ৮

 প্রশংসিত-৮

১. আকাশে ঘনঘন বিদ্যুতের চমক। আগুনের গোলার মতো আলোর রেখা। তিরের গতিতে ছোটে গিয়ে এক জায়গায় অদৃশ্য। যেন দক্ষ শিকারির তাক করা অলঙ্ঘনীয় অভীষ্ট। মিস হওয়ার সুযোগ-ই নেই। মক্কার আকাশে এমন অগ্নিতিরের গতিবিধি বেড়ে গেছে কিছুদিন ধরে। জিন-শয়তানদের মাঝে চরম হতাশা! আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পালিয়ে মরছে। আত্মগোপনের চেষ্টায় মগ্ন কেউকেউ। দুষ্টু জিনদের একদলের সাথে অপর দলের সাক্ষাৎ হলো। বন্ধুগণ, ঘটনা কী? আমাদের প্রতি উল্কাবৃষ্টি শুরু হলো কেন হঠাৎ? শয়তানের সাহায্যে ফেরেশতাদের গোপন কথায় আড়িপাতা কঠিন হয়ে পড়েছে ইদানীং। গণকদের কাছে তথ্য সরবরাহ করতে পারছি না। এই কারণে তাদের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। অপরদল শোনালো বিষ্ময়কর দুঃসংবাদ! আপন সম্প্রদায়কে সতর্ক করে বললো—আড়িপাতা বন্ধ করো। “আমরা ফেরেশতাদের মুখে এমন এক কিতাবের পাঠ শুনেছি, যা ইতোপূর্বের কিতাবগুলোকে সত্যায়িত করে এবং সত্য ও সরল পথের দিশা দেয়।” (সুরা ৪৬: ২৯-৩০)। অতঃপর হতাশ জিনসকল হেদায়েতের আশায় মক্কায় নেমে আসতে শুরু করলো…


২. ছোটোখাটো এক পূজোমণ্ডপ। মূর্তির উদ্দেশে সেখানে বাছুর বলি হয়েছে। কাচা মাংসের ভাগ নিতে উপস্থিত মক্কার অন্যতম বীরশার্দূল ওমর ইবনে খাত্তাব। হঠাৎ বাচুরের পেট ছিড়ে আওয়াজ আসতে লাগলো—“হে যবেহকৃত বাছুর! একটি মহা সাফল্য অত্যাসন্ন। শীঘ্রই এক ব্যক্তি চিৎকার করে বলতে থাকবে—‘লা ইলাহা ইল্লালাহ।”


৩. এক ইহুদি পণ্ডিত কিছু মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছে। বালক সালামা কিছুদূর থেকেই গভীর মনোযোগে শুনছে। ভাষণ হচ্ছিল মৃত্যু-পরবর্তী জীবন নিয়ে। কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ, দাঁড়িপাল্লা, বেহেশত-দোজকসহ নানান বিষয়। এক পৌত্তলিক আপত্তি করে তাকে ধমকাতে লাগলো। প্রত্যুত্তরে মক্কার দিকে ইশারা করে ইহুদি বলতে লাগলো—“এই অঞ্চলে শীঘ্রই একজন নবীর আবির্ভাব ঘটবে। আমার কথা অবিশ্বাস করলেও তাঁর প্রতি ইমান আনিও।”


মক্কায় একের-পর-এক এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে মুহাম্মদের সাথেও ঘটছে রহস্যময় কাণ্ডকারখানা। মুহাম্মদ এখন পুরোপুরি পরিণত। বয়স ঊনচল্লিশ পেরিয়ে চল্লিশের কোটায়। নির্জনপ্রিয়তা বেড়েছে আগের চেয়ে ঢের। প্রায়শই ঘর থেকে বেরিয়ে নির্জনে হাঁটতে থাকে। এ হাঁটার গন্তব্য কী, কেনই-বা এ নিরন্তর হাঁটা—জানা নেই। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শোনে—কে যেন কী বলছে! পেছন ফিরে দেখে কেউ নেই! আবার হাঁটে। আবার শোনে। আবার পেছন ফিরে। কেউ নেই! আওয়াজ শূন্য থেকে এসে শূন্যেই মিলিয়ে যায়। বাতাস বুঝি তাঁর সাথে কথা বলছে। সঙ্গ দিচ্ছে রাস্তার ইটপাথর। আতিথেয়তা দিচ্ছে গাছগাছড়া তরুলতা। সে গাছের ছায়ায় একটু জিরোয়। ইটপাথরে গা এলিয়ে দেয়। খানিক বাদেই উঠে দাঁড়ায়। ফের ছোটে। ফের শুনতে পায়। অদৃশ্যের সে বাণী। এবার পেছন ফিরে না। কান লাগিয়ে শুনতে থাকে। কে যেন বলছে—“আশহাদু আন-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু!”


অদ্ভুত এ বাণী। তার চেয়েও অদ্ভুত বোধহয় এর রহস্য!. খাদিজার কাছে ছুটে যায়। খাদিজা, খাদিজা! কোথায় গো তুমি? খাদিজা ছুটে আসে। আঁচলে ঘাম মুছে। বসতে দেয়, শরবত খাওয়ায়, বাতাস করে। তারপর মোলায়েম বচনে জিজ্ঞেস করে—“কী হয়েছে প্রিয়তম? আপনি অস্থির কেন? কে আপনাকে বিরক্ত করলো? তার মুখে ছাই পড়ুক।” খাদিজার ব্যস্ততা দেখে তাকে থামিয়ে দেয় মুহাম্মদ। হাতে হাত রেখে বলতে থাকে—আমার সাথে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে চলেছে। হাঁটতে হাঁটতে যেন কার কথা শুনি। ফিরে তাকালেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কোথাও কেউ নেই! ঘুমালেই স্বপ্নে দেখি। উঠেই দেখি সেটা ঘটে গেছে। স্বপ্নে যা দেখছি, বাস্তবে তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। এ-সবের রহস্য কী খাদিজা? কেন ঘটছে এ-সব? প্রেমবিভোর খাদিজার চোখে আনন্দাশ্রু। দৃপ্তকণ্ঠে অভয়বাণী শোনায়—“আল্লাহর কসম! তিনি আপনার সাথে খারাপ কিছু করবেন না। এসব নিশ্চয় কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্যই হয়ে থাকবে।”


দিন যায় তো একাগ্রতা বাড়ে। বাড়তে বাড়তে বাড়ার চূড়ান্তে পৌঁছয়। এবার তিনি ছুটে চলেন পাহাড়ে। পাহাড়ের নাম ‘জাবালে নুর’। নুরের পাহাড়! কাবাঘর থেকে সোজা উত্তরে। কোনাকুনি দূরত্বে আট কিলোমিটার প্রায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে দুহাজার ফিট উঁচু। মক্কা নগরের সর্বোচ্চ চূড়া এটিতেই। উঠতে সময় লাগে দু-তিন ঘণ্টা। সেখানে একটি গুহা। গুহার নাম ‘গারে হেরা’। হেরা গুহা। কোনোমতে দাঁড়ানো যায়। আরামসে বসতে পারবে একজন। ভূপৃষ্ঠের বহু উপরে। লোকজন দূরে থাক, কাকপক্ষীও নেই। সাড়াশব্দহীন প্রায়। সোজা দক্ষিণমুখী হয়ে বসলেই নজরে আসে কাবাঘর! ধ্যানের মুর্শিদ সেখানে। ধ্যানের গুরু গভীর ধ্যানে মগ্ন! কার ধ্যানে, কীসের টানে? 

“তারপর এল হেরা গহ্বরে তিমির পাখারে ধ্যানের দিন

পরম সত্য খুঁজবার তরী ভাসে সেই স্রোতে সাথীবিহীন

মরু মক্কার চোখের মণি সে সত্য দীপ্ত আল্-আমিন

হেরার গুহায় মোরাকাবা-লীন খোঁজে সে সত্য প্রেম রঙিন।

একাগ্রতার সকল সেতারা চেরাগ জ্বালায়ে মনের সাধ

খোঁজো হে সাধক মৌন পরম সত্য-স্রষ্টা আল-আহাদ।”

—সিরাজাম মুনীরা, ফররুখ আহমদ।


সঙ্গিনী খাদিজা নিয়ম করে খাবার নিয়ে আসে। মুহাম্মদকে গ্রহণ করে ধন-মান ছেড়েছে। আভিজাত্যের সবটা ঢেলে দিয়েছে তাঁর পা’য়৷ দাসীরা যাঁর সেবায় নিমগ্ন থাকতো এককালে, সেই গৌরবিণী পরিণত হলো মুহাম্মদের দাসীতে! কীসে তাঁকে এ দাসত্ব বরণ করালো! কোন স্বাদে সাধের সিংহাসন ছেড়ে ধূলিমলিন পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড় বাইছে সে? উত্তর মিলবে সামনে...


দিন যায় রাত আসে, মুহাম্মদের ধ্যানের গভীরতা আরো বাড়ে। সূর্য উঠে আর ডুবে, ধ্যান বুঝি চির-প্রোজ্জ্বল সেতারা। তার যেন উদয়-অস্ত নেই। চাঁদের জোছনা মিইয়ে যায়, ধ্যানের শিখার দীপ্তি বাড়ে। লু-হাওয়া সেই শিখায় আরো প্রখর হয়, পাহাড়ের গা উত্তপ্ত হয়, পাথর ফাটবে বলে শঙ্কা জাগে, মুহাম্মদ সে চির-স্থির। তাঁর কোনো শঙ্কা নাই। ভয়ডরহীন। কোনোকিছুতেই টলে না। সূর্যের তাপ, পাথরের ভাপ, উত্তপ্ত লু-হাওয়ার জেরে শরীরের চামড়া জ্বলছে না গলছে—সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কে যেন তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে—ধ্যানের দেশে সবটা ভোলা যায় না। তিনি যেন প্রমাণ করে ছাড়ছেন—নিজেকেও ভোলা যায়! কে যেন তাঁকে বলে দিয়েছে—ধ্যানমগ্ন কীভাবে হতে হয়, সেটা একবার দেখিয়ে দাও। যুগযুগান্তর যাতে সত্যসন্ধানীরা ধ্যানী হতে শেখে, সত্যের দিশা পায়।


খ্রিষ্টাব্দ ৬১০। নিকষকালো নিশী। আঁধার ঘন থেকে ঘনতর। নিজেকেও চেনা যায় না। পাখপাখালির অবস্থান বহুদূরে। কূজনও নেই তাই। পাহাড়গুলোই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কেবল। গা চমচম পরিবেশ! হেরার ধ্যানী ধ্যানে মগ্ন। চোখবন্ধ... বিশাল পাখার ঝাপটা হঠাৎ! পুরো পাহাড় তরতরিয়ে কেঁপে উঠলো। কে যেন নামল আকাশ থেকে। ধ্যানের রাজার ধ্যান ভাঙে। চোখ খুলে দেখে বিশালকার এক নুরি জাত। চেহারা দেখতে উপরে তাকায়। চোখ চলে যায় আসমানে। এ কী কাণ্ড! আকাশের সব তারা নাচছে। পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখান থেকে আলোর ফোয়ারা ছুটছে। এ গভীর রাতে এ আলো জ্বাললো কে? এ কার অভিষেক? কীসের উদ্বোধন? চেহারায় কৌতুহলী ভাব! হৃদয়ের ধুকপুক বেড়ে গেছে হাজার গুণ। সেখানে আনন্দ-আগ্রহ! কী হতে চলেছে? পরম মুহূর্ত কি এসেই গেল! ফের তাকায় সে রুদ্রমূর্তির দিকে। মুহূর্তেই সে মহা-আকৃতি ছোটো হয়ে আসে। গুহার সম্মুখে দাঁড়ায় বিনয়াবনতভাবে। আস্সালামু আলাইকা ইয়া আইয়ুহান্নাবী! আমি জিবরাইল! আল্লাহর দূত! ইকরা—পড়ুন! অপ্রস্তুত ধ্যানরাজ জবাব দেয় ‘মা আনা বি-কারি’—আমি পাঠক নই। ধীরপদে কাছাকাছি আসেন জিবরাইল। বুকে বুক লাগিয়ে চাপ দেয়। যাতে দুই সিনা এডজাস্ট হয়! সমন্বয় সাধন! যা না-হলে আদান-প্রদান সম্ভব না। যা বহন করে আনা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভারী। তার চাপ নিতে মানবীয় গুণে গুণান্বিত শরীরের সক্ষমতা দরকার। চাপ দিয়ে সেই চাপের ভার নিতে অভ্যস্ত করতেই এ মঞ্চায়ন।


দীর্ঘক্ষণ চেপে ধরে ছেড়ে দেয়। আবার বলে, ‘ইকরা—পড়ুন’। আবার জবাব আসে, ‘মা আনা বি-কারি’—আমি না-জেনে পড়ি না। জিবরাইল আবার বুকে বুক লাগায়। চেপে ধরে। জিবরাইলের কয় জনমের ভাগ্য কে জানে! ধরলে আর ছাড়তেই চায় না। এ সুযোগ যদি আর পাওয়া না-যায়! দীর্ঘকাল পর ছাড়ে। ফের বলে, ‘ইকরা’—পড়ুন। আবার জবাব আসে, ‘মা আনা বি-কারি’—আমি উদ্দেশ্যহীন পড়ি না। জিবরাইল আবার সিনায় সিনা লাগায়। এবার বুঝি আর ছাড়বেই না। এ হৃদয়ের সকল উঞ্চতা-শীতলতা যেন নিজের করে নিবে! সে আগুনে-ফাগুনে যেন মিশে যাবে! চাইলেই তো আর পারা যায় না। খোদায়ী লিমিটেশন আছে। ছাড়তে হয়। উভয়ে ক্লান্তশ্রান্ত। জিবরাইল এবার তাঁকে এক নুরি সিংহাসনে বসালেন। মোতি ও ইয়াকুত পাথরে ঝিকঝিক করছিল সে আসন। মহামূল্যবান সে-সব পাথরের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো হেরা পর্বত। জিবরাইলের কণ্ঠে এবার পূর্ণ সুর—

“ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক!

খালাকাল ইনসানা মিন আলাক।

ইকরা ওয়া রাব্বুকাল আকরাম। 

আল্লাজি আল্লামা বিল-কলাম।

আল্লামাল ইনসা-না মা-লাম ইয়া’লাম।”


যেন কিছু একটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কোনো পুরাতন কাহিনী। “আপনার প্রতিপালকের নামেই পড়ুন, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।” সামনে আরো রহস্যময় রিমাইন্ডার! “যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।” কাকে, কখন, কীভাবে দিয়েছেন? আরো বলা হচ্ছে, “মানুষকে তা শিখিয়েছেন, যা সে জানতো না।” আরবি ইনসান শব্দটি একবচন। মানে, এখানে সুনির্দিষ্ট একজন মানুষকে শিখিয়েছেন—এ-কথার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সে মানুষটা কে? এ রিমাইন্ডার কেন? মনে করিয়ে দেয়ার হেতু কী? নবী মুহাম্মদকে কি তাহলে এতদিন তাঁর আদি পরিচয় ভুলিয়ে রাখা হয়েছিল? ঐ যে, বইয়ের শুরুর আলোচনা—মানব-সৃষ্টির আদি ইতিহাস। আদমের ললাটে নুরে মুহাম্মদির চমক! সেই নুরে মুহাম্মদির সৃষ্টিতত্ত্ব। সৃষ্টির দিক থেকে যাঁর আদিতে আর কিছুই নেই। সেই স্মৃতিই কি মনে করিয়ে দেয়া হলো? তাঁকেই যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল। মৌলিক সৃষ্টি যে তিনিই। বাকিসব যে তাঁরই নুরের আভায় সৃষ্টি। তাঁকেই যে কলমের দ্বারা প্রথম শিক্ষা দেয়া হয়েছিল! তিনিই যে প্রথস সাক্ষর! হ্যাঁ, সে কথাই তো! সে ইতিহাস-ই তো স্মরণ করা হয়েছে! অতঃপর “আমি পাঠক না, পড়বো না, কী পড়বো?” সব প্রশ্ন আর দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান। সে ইতিহাস স্মরণ হতেই তিনি পড়ে নিলেন সবটা!


দায়িত্ব সেরে জিবরাইলের প্রস্থান। নবী মুহাম্মদের নবুয়ত প্রকাশিত। [লেখক এতক্ষণ স্থান ও কাল বিবেচনায় নবীজিকে ‘মুহাম্মদ’ সম্বোধনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এখন থেকে ‘হজরত’ ও ‘নবীজি’ সম্বোধনে আগাবে বর্ণনার ধারা। পাঠকরাও যেন পরমপ্রিয়কে শ্রদ্ধাভরে হজরত ও নবীজি সম্বোধনের প্রস্তুতি নিয়ে নেয়।] চিত্তে মুগ্ধতার ঢেউ। হৃদয়জুড়ে তোলপাড়। হেরা থেকে ফেরার পথে হজরত। পাথরের পাশ দিয়ে যায় তো পাথর সিজদায় লুটে পড়ে। গাছের পাশ দিয়ে যায় তো গাছ ভেঙে পড়ে। সম্মানে নতশির প্রতিটি ধূলিকণা। পরম হর্ষোৎফুল্লে চিৎকার করে সবাই অভিবাদন জানায়—“আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ...”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হযরতের স্কুল-১

হজরতের স্কুল-১ –মুহাম্মদ সৈয়দুল হক “হাসরের দিন আমি সর্বপ্রথম বলিব– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শিরক শিরক বলে মাইজভাণ্ডারের প্রতি আঙ্গুল তোলা ব্যক্তিরা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির এ বাণীটি অন্তরে গেঁতে রাখুন। অঘোষিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি। সে ভার্সিটির পহেলা সবক ছিল “কবুতরের মত বাছিয়া খাও, হারাম খাইও না। নিজ সন্তানসন্ততি লইয়া আল্লাহর জিকির কর।”  গ্রামবাংলার আমজনতা সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝত না৷ স্কুল বুঝত৷ তাই রমেশ স্কুল বলেছেন। এভাবে– “সেই স্কুলের এমনি ধারা, বিচার নাইরে জোয়ান বুড়া সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতাছে মাস্টার ও মাহিনা ছাড়া, এলমে লাদুনি ভরা কাগজ কলম দোয়াত কালির কী দরকার আছে? গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি স্কুল খুইলাছে...” রমেশ শীল হিন্দু ছিলেন। মাইজভাণ্ডারি গান লিখেছে প্রায় ৩৫০। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, তুমি আমাকে দেখা দাও’ টাইপের না। মানে গানগুলো কেবল গান না। এলমে শরিয়ত ও তরিকতের গভীর থেকে গভীরতর রহস্য। সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কোনটি নেই? যেমনটি লিখেছেন– “নামাজ রোজা কলমা আর, হজ ও জাকাত সার এই পাঁচ কাজে দাসগণে মশগুল রাখিও দয়াল ভাণ্ডারি ...

মসলকে আলা হযরত

বিষয়ঃ মসলকে আলা হযরতঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। —মুহাম্মদ সৈয়দুল হক শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা। ফলপ্রার্থী: ফাযিল প্রথম বর্ষ ★প্রারম্ভিকাঃ  “তমসা ঘেরা এ দুনিয়ার মানুষ দেখিলো সেদিন পথ দীনের আকাশে উদিল যেদিন ‘মসলকে আলা হযরত’ বতুলতায় ভরা এ উপমহাদেশ পেয়েছে সেদিন দিশা রবিসম সে মসলক-গুণে কেটে গেছে অমানিশা।” যাবতীয় প্রশংসা সেঁ মহীয়ান সত্ত্বা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুলের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত (রহ.)’র মসলকে কবুল করেছেন। অগুনতি দরুদ ও সালামের নজরানা সেঁ দুজাহানের বাদশা নবি মুহাম্মদ (দ.) এর পাক কদমে, যাঁর অশেষ করুণায় তাঁরই নির্ধারিত যুগের মহান দিকপাল ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রা.)’র মসলকের শামীয়ানায় আমরা আশ্রিত। ইসলামের সকল যুগের সকল সূর্যসন্তানদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালামপূর্বক স্মরণ করছি যাঁর পথ-মত তথা ’মসলক’ নিয়ে লিখতে বসেছি, যুগের সে মহান সংস্কারক, আঁধারে আলোকরশ্মি, দোজকের তাপদাহে জান্নাতি পবন, অথৈ সমুদ্রে জাহাজের কাণ্ডারিতুল্য ইমাম আহমদ রেযা খাঁঁন ব্রেলভী (রা.) কে, যিনি এ পৃথিবীতে না এলে ইসলাম-সূর্য এদ্দিনে হয়ত তাঁর...

সত্যের আলোকবর্তিকা

সত্যের আলোকবর্তিকা      (শুভ জন্মদিন) যুবক হন্য হয়ে ছোটে। কখনও নগরের পথে কখনও বা বনবাদাড়ে। ছুটতে ছুটতে পা ফুলে যায়। রক্ত ঝড়ে। হুট করে বসে। জিরোই। আবার ছোটে। কখনও উথাল-পাতাল লাফায় তো কখনও ধীরস্থির শান্তভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় হযরতের রওজার কিংবা শূন্য আকাশে। বদ্ধঘরে একাকী দিন কাটে। নাওয়াখাওয়া নাই। হঠাৎ ঘর ছেড়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়—খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পৌষ-মাঘের শীতেও দিনের-পর-দিন পানিতে ডুবে থাকে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারে যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমার আমি কই? কিংবা আমি কে? কোথা থেকে এলাম? ভেতরে কে আছে? তাঁকে জানা চাই, সাক্ষাৎ প্রয়োজন, চেনা লাগবেই। শরীরের রক্ত ছোটে, চামড়া ছেঁড়ে, জরাজীর্ণ হয়—পণ আর ছোটে না৷ হযরতের রওজায় সামা চলতো। ‘সামা’তে হালকা হয়। কোন এক অদৃষ্টের শক্তিতে শরীর দোলে উঠে। কাঁপন ধরে। কখনোসখনো সে কাঁপন লাফে গিয়ে ঠেকে। সামা শেষে যুবক আসলেন। শুরু হলো মারামারি৷ ‘যাকে পাই তাকে খাই’ নিয়মে চলছে মারধর। “নামাজ কালাম নাই? এত লাফালাফি কীসের? আবার সাজদা মারা হচ্ছে?” ভক্তকুল লে-ছোট। দৌঁড়ে কূল পায় না। ‘পড়ি কী মরি’ করে বাবাকে জানায়। বাবা...